ঢাকা, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
সর্বশেষ:

১৩ আসনে প্রার্থীশূন্য বিএনপি, পুনঃতফসিল চেয়ে ইসিতে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপির আরো পাঁচজনের প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে হাইকোর্টে। তারা অংশ নিতে পারছেন না ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। এর আগেও একই দলের আরো নয়জন প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত করেছিলেন আদালত। এ পর্যন্ত বিএনপির মোট ১৪ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত করেছেন আদালত। 

তবে আদালতের মাধ্যমে একজন প্রার্থিতা ফিরেও পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৩টি আসনে এখন ধানের শীষের কোনো প্রার্থী নেই। ফাঁকা হওয়া এসব আসনের বিষয়ে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও গতকাল এসব আসনে বিকল্প প্রার্থীকে প্রতীক দেয়া বা নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

একই সঙ্গে জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত অপেক্ষমাণ রয়েছে। 

গতকাল হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের মো. ফরিদুল কবীর তালকুদার শামীম, জয়পুরহাট-১ আসনের (সদর-পাঁচবিবি) ফজলুর রহমান, ঝিনাইদহ-২ আসনের (সদরের একাংশ-হরিণাকুণ্ডু) অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ, রাজশাহী-৬ আসনের (বাঘা-চারঘাট) মো. আবু সাঈদ চান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের (কসবা-আখাউড়া) ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন এর প্রার্থিতা স্থগিত করেন। 

এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রাজশাহী-৬ আসনের মো. আবু সাঈদ চানের প্রতিদ্বন্দ্বী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রার্থিতা স্থগিত হওয়া সাত জন আপিলে যেতে পারবেন। আপিলের শুনানির জন্য তাদের আগামী সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 

সুপ্রিম কোর্টের শীতকালীন অবকাশ ছুটির কারণে ওইদিন সকাল ১১টায় চেম্বার জজ বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান বসবেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেয়া ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে মাহমুদ হোসেন সমুন ও  রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে মো. আসাদুজ্জামান বাবুলের প্রার্থিতাও স্থগিত হয়েছে হাইকোর্টে। তবে বগুড়া-৩ (আদমদিঘী-দুপচাঁচিয়া) আসনে প্রার্থিতা শূন্য হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বিএনপি। এ আসনে আবদুল মুহিত তালুকদারের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মাছুদা মোমিনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

ওদিকে আরো তিনটি আসনে ধানের শীষ প্রতীক পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনটি আসন হলো- মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর-শিবালয়), নওগাঁ-১ (পোরশা-সাপাহার-নিয়ামতপুর), নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া)। এর মধ্যে মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির এসএ জিন্নাহ কবীরের মনোনয়ন বাতিল করে অ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুকে, নাটোর-১ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মুনজুরুল ইসলামের পরিবর্তে কামরুন নাহারকে এবং নওগাঁ-১ আসনে ছালেক চৌধুরীর পরিবর্তে মোস্তাফিজুর রহমানকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশনার রিটের শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশে বিএনপির পাঁচজনসহ সাতজনের প্রার্থিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোককেট শাহ্‌ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। মোতাহার হোসেন সাজু জানিয়েছেন, যে সাতজনের প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অন্যদিকে যাদের প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা ধানের শীষ প্রতীক পাবেন।

নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী শাহ্‌ মঞ্জুরুল হক জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ পত্র গৃহীত হওয়ার আগেই এসব প্রার্থী  মনোনয়ন নেন। পরে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে তাদের মনোনয়ন বৈধ হয়। এ বিষয়ে আপিল বিভাগ গত সোমবার রায়ে বলেছেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি লাভজনক পদ। পদত্যাগের পর নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে। যাদের প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে তারা যথাযথ নিয়ম মেনে মনোনয়ন নেননি। পদত্যাগপত্র মন্ত্রণালয়ে গ্রহণ করার আগে এবং জেলা প্রশাসক বা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সাত উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রার্থিতা স্থগিত করেছেন। 

এর আগে গত চারদিনে নয়টি আসনে বিএনপির নয়জনের প্রার্থিতা স্থগিত হয়েছে। 
আসনগুলো হলো- ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ), ঢাকা-২০ (ধামরাই), মানকিগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়া), বগুড়া-৩ (আদমদিঘী-দুপচাঁচিয়া), বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর), সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-সেমানীনগর), জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ), চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) ও দিনাজপুর-৩ আসন।

মঙ্গলবার প্রার্থিতা হারিয়েছেন সিলেট-২ আসনের নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, জামালপুর-১ আসনের এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও দিনাজপুর-৩ আসনের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। ওইদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ তাদের মনোনয়ন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশে ‘নো অর্ডার’ করেছেন। ফলে তারা আর প্রার্থী হতে পারছেন না। 

আগেরদিন সোমবার আপিল বিভাগের আদেশে প্রার্থিতা হারান মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আফরোজা খান রিতা, ঢাকা-২০ আসনের ধানের শীষের তমিজ উদ্দিন আহমেদ, বগুড়া-৩ আসনের আবদুল মুহিত তালুকদার (এ আসনে হাইকোর্টের নির্দেশ গতকাল ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন মাছুদা মোমিন) ও চাঁদপুর-৪ আসনের আবদুল হান্নান। ঢাকা-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাক ও বগুড়া-৭ আসনে মোরশেদ মিলটনের মনোনয়ন স্থগিত করেন হাইকোর্ট। 

চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী এম এ হান্নানের প্রার্থিতা স্থগিত হয় ঋণখেলাপির অভিযোগে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণখেলাপি থাকায় তার মনোনয়ন স্থগিতের আদেশ আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব আসনে উচ্চ আদালতের আদেশে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বাতিল করা হয়েছে সেসব আসনে পুনঃতফসিল বা বিকল্প প্রার্থী চেয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে একটি চিঠি পৌঁছে দেন।

প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিজন কান্তি সরকার। সিইসি, ইসি সচিব ও আরো দুই কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশন বৈধতা দেয়ার পর আদালত তা বাতিল করছেন। 

নির্বাচন কমিশন বৈধ ঘোষণার পর আদালত অবৈধ ঘোষণা করায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ইসির ভুলে আমরা কেন শাস্তি পাব। এই অবস্থায় আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দুটি প্রস্তাব করেছি। প্রথমত আমাদের যে ৮ আসনে আদালতের রায়ে প্রার্থী শূন্য হয়েছে, সেসব আসনে পুনঃতফসিল দেয়া হোক অথবা আমাদের অন্য যে বৈধ প্রার্থী ছিল  তাদের মধ্য প্রার্থিতা দেয়া হোক। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা। 

এদিকে, দলের মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত আটটি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন। আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে জামালপুর-৪, বগুড়া-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, রংপুর-১, ময়মনসিংহ-৮, ঝিনাইদহ-২, জয়পুরহাট-১, রাজশাহী-৬। 

নিউজওয়ান২৪/জেডএস

আরও পড়ুন
রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত