ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

১০ বছর ধরে তারা নারী পাচার ও প্রতারণা করে আসছিল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ৩১ মে ২০১৬   আপডেট: ২২:৩৩, ২ জুন ২০১৬

ঢাকা: টঙ্গী ও ময়মনসিংহ থেকে ৬ নারী পাচারকারীকে গ্রেফতার ও অপহৃত ৩ নারীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১।

র‌্যাব জানায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম থেকে আগত অথবা গ্রামের অল্প বয়সী মেয়েদের প্রেমের অভিনয়ে বিয়ের ফাঁদে ফেলছিল। এরপর অসহায় ওইসব শিশু-কিশোরী-তরুণীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করতো তারা।

পরবর্তীতে মোটা টাকার বিনিময়ে তাদের অন্যত্র পাচার বা বিক্রি করে দিত। বিষয়টি সম্প্রতি র‌্যাব-১ এর নজরে আসলে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ভোররাতে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন ভিকটিমকে উদ্ধার করে। এরা হচ্ছেন (১) ফাতেমা আক্তার (২৬), পিতা-বজলু মিয়া, সাং-কাঁশখালী, থানা-কাউখালী, জেলা-রাঙামাটি, (২) রিতা আক্তার ওরফে নূপুর (২০), থানা-মতলব, জেলা-চাঁদপুর ও (৩) রোকসানা (২০), সাং-দৌলতখান, ভোলা।

এসময় নারী পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের ছয় সদস্যেক পাকড়াও করা হয়।

এরা হচ্ছে (১) লিটন মিয়া (৩০), পিতা শাহজাহান খাঁ, সাং-চর-সামাইল, থানা-শিবচর, জেলা-মাদারীপুর বর্তমান ঠিকানা টিঅ্যান্ডটি পশ্চিমপাড়া টিটু মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া, থানা-টঙ্গী, জেলা-গাজীপুর, (২) শামীম মিয়া (২৮), পিতা-মৃত মমতাজ উদ্দিন হাওলাদার, সাং-ভবানিপুর, থানা-দৌলত খাঁন, জেলা-ভোলা বর্তমান ঠিকানা ভাটারা, (৩) মাসুদ (৩৮), পিতা- একেএম হেলাল উদ্দিন, সাং-কানিহারি, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ, বর্তমান ঠিকানা পূর্বআরিচপুর, থানা-টঙ্গী, জেলা-গাজীপুর, (৪) রবিউল ইসলাম (৪০), পিতা-মৃত বদরুল হক, সাং-রানী শিমুল, থানা-শ্রীবর্দী, জেলা-শেরপুর, বর্তমান ঠিকানা চেরাগআলী (দত্তপাড়া), থানা-টঙ্গী, জেলা-গাজীপুর, রফিকুল ইসলাম ওরফে মাহবুব ওরফে শাহীন (২৪), পিতা-লাল মিয়া (বক্কর), সাং-বলিহার মাঠের পাড়, থানা-পীরগাছা, জেলা-রংপুর বর্তমান ঠিকানা শারদাগঞ্জ, কাশিমপুর, থানা-জয়দেবপুর, জেলা-গাজীপুর, (৬) জুয়েনা আক্তার স্বপ্না (২২), স্বামী লিটন মিয়া, পিতা ছিরু হাওলাদার, সাং- উত্তর জয়নগর, থানা দৌলতখান, জেলা ভোলা।

প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে অতঃপর...

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পাচারকারী শামীম প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এবং ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিকটিম রিতা আক্তার নূপুরকে গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে চক্রের আরেক সদস্য লিটনের টঙ্গীর ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে নূপুরকে ময়মনসিংহ গাঙ্গিনাপাড় যৌনপল্লীতে বিক্রির দর কষাকষি চলছিল। গোপন সংবাদের সূত্রে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল লিটনের বাসায় সোমবার গভীর রাতে অভিযান চালায়।

ভিকটিম রিতা আক্তার নূপুরকে উদ্ধারের পর পাচারকারী লিটন এবং শামীমকেো আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে অন্য দুজন ভিকটিম ফাতেমা আক্তার ও রোকসানাকে ময়মনসিংহ গাঙ্গিনাপাড় পতিতালয় থেকে উদ্ধার করা হয়। এসময় আটক করা হয় পাচারকারী চক্রের সক্রিয় মাসুদ, রবিউল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম ওরফে মাহবুব ওরফে শাহীনকে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, লিটন দম্পতি রিতা আক্তার নূপুরকে ভাড়া করা বাসায় আটকে রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শন কের শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করতো।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা অপরাধের সত্যতা স্বীকার করে এবং বহুদিন যাবৎ এধরণের অপকর্মে জড়িত রয়েছে মর্মে জানায়।

আসামিরা আরও জানায়, তারা বিভিন্ন চুরিসহ প্রতারণার মাধ্যমে বাস ও ট্রেনের যাত্রীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আত্মসাৎ করে থাকে। কখনও বাসের যাত্রীসেজে পাশে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কৌশলে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে এক পর্যায়ে পান, ঠাণ্ডা পানীয়, চা বা অন্যান্য খাবার জাতীয় জিনিসের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন করে অথবা মলম ব্যবহার করে চোখ অন্ধ করে টাকা পয়সা হাতিয়ে চম্পট দিত।

তারা আরও একটি একটি কায়দায় প্রতারণা করতো। এই কায়দার কোডনেম ‌`কার্টুন ব্যবসা`। এক্ষেত্রে কোনো প্রাইভেট গাড়িতে যাত্রীকে গন্তব্যে পোঁছে দেওয়ার কথা বলে চাতুরির মাধ্যমে তার আস্থা অর্জন করতো। পরে তাকে লোভের ফাঁদে ফেলে তার কাছে টাকা নিয়ে নকল টাকা বা সাদা কাগজ খামে ভরে দিয়ে পালিয়ে যেত। এ প্রতারক এবং নারী পাচারকারী চক্রটি দীর্ঘ ১০ বৎসরের অধিক সময় ধরে ধূর্ততার ফাঁদে ফেলে মানুষদের জানমালের ক্ষতিসহ নিরীহ মানুষদের সর্বস্বান্ত করে আসছে।

এ চক্রের মূলহোতাসহ আরও ২০-৩০ জন সদস্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সক্রিয়ভাবে অপকর্মে জড়িত আছে বর্তামানে। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরএ

আরও পড়ুন
অপরাধ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত