স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন, জানাবে প্রস্রাবের রং...

প্রস্রাবের সঙ্গে সরাসরি যোগ আছে কিডনির। আর কিডনি শরীরের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ।

প্রস্রাবের রং মাঝেমধ্যে পরিবর্তন হয় সেটা আমরা জানি। কখনো কখনো এটি স্বচ্ছ বা পরিষ্কার হয়। আবার কখনো হলুদ বা গাঢ় হলুদ হয়। তবে অধিকাংশ সময়ই মানুষ বিষয়গুলোকে ঠিকভাবে খেয়াল করে না বা এড়িয়ে যায়।

ইউরোলজিস্ট ডা. ড্যানিয়েল সোকিস বলেন, শরীরের বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হতে পারে। এবং প্রস্রাবের রং দেখে স্বাস্থ্যের কী অবস্থা সেটি অনেকটা বোঝা যায়। পাশাপাশি খাবার, সাপলিমেন্ট গ্রহণ, ওষুধ গ্রহণ এসবের ওপরেও প্রস্রাবের রং নির্ভর করে।

চলুন জেনে নেই প্রস্রাবের কোন রং কেমন হলে স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন হবে।

> পরিষ্কার বা স্বচ্ছ রং এর প্রস্রাব বেশি হলে শরীর বেশি আর্দ্র এই বিষয়টি নির্দেশ করে। এর মানে আপনি বেশি পানি পান করছেন। পানি যেমন শরীরের জন্য উপকারী, তেমনি অতিরিক্ত পানি পান শরীরের ক্ষতি করে। যেমন : কিডনির সমস্যা হতে পারে। যদি এ রকম হয় তাহলে কতটুকু পানি আপনার জন্য পর্যাপ্ত এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

> স্বচ্ছ হলুদ এর অর্থ আপনি স্বাভাবিক আছেন; আপনার শরীর ঠিকভাবে কার্যক্রম করছে এবং আপনি আর্দ্র আছেন।

> গাঢ় হলুদ রং এটা আরেকটি স্বাভাবিক রং প্রস্রাবের। এর মানে আপনার শরীর সঠিকভাবে কাজ করছে। তবে আপনার শরীর কিছুটা কম আর্দ্র এই বিষয়টিও নির্দেশ করে এই রং। এই সময় বেশি পানি পানের কথা ভাবতে পারেন আপনি।

> মধুর মতো রং প্রস্রাব যদি মধুর মতো রঙের হয়, এটি আরেকটি স্বাভাবিক অবস্থা। আপনার শরীর ভালোভাবেই কাজ করছে। তবে এর মানে এটাও যে আপনার শরীরে পানিশূন্যতা রয়েছে। এ সময় আপনি তরলজাতীয় খাবার বেশি খাবেন। প্রস্রাবের রং হালকা হলুদ বলে শরীরে ভালোভাবেই আর্দ্র রয়েছে।

> কমলা রং এটা আরেকটি লক্ষণ শরীরের পানিশূন্যতার। কিছু খাবার বা কিছু ওষুধের কারণেও প্রস্রাব এমন রং ধারণ করতে পারে। কিছু ল্যাক্সাটিভস এবং কেমোথেরাপি ওষুধ কমলার রঙের প্রস্রাব হওয়ার জন্য দায়ী।

এ ছাড়া কমলা রঙের প্রস্রাব লিভার ও পিত্তনালির সমস্যার কারণে হতে পারে। এই সময় পাশাপাশি মলের রংও পরিবর্তন হতে পারে। এ রকম অবস্থা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

> নীল অথবা সবুজ আপনি হয়তো এই ধরনের প্রস্রাবের কথা শুনে একটু আশ্চর্য হতে পারেন। এই ধরনের প্রস্রাব অত্যন্ত অপ্রতুল। তবে এর মানে এই নয় যে আপনি খুব জটিল কোনো রোগে ভুগছেন। খাবারের গাঢ় রঙের কারণে এটা হতে পারে। অবশ্য খাবারের সব রং যে ক্ষতিকর এমনটা নয়। অন্যদিকে, বংশপরম্পরাগত সমস্যা- হাইপারক্যালসেমিয়ার কারণে নীল প্রস্রাব হতে পারে এবং কিছু ইউরিনারি ট্যাক্ট ইনফেকশনের কারণে সবুজ প্রস্রাব হতে পারে।

> মেঘলা বা অন্ধকারাচ্ছন্ন এটা কিডনি সমস্যার লক্ষণ। অথবা ইউরিনারি ট্যাক্ট ইনফেকশন হলেও এই লক্ষণ দেখা যায়। এ রকম হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

> সিরাপের রং বা বাদামি মদ এটি পানিশূন্যতা এবং লিভারের সমস্যাকে নির্দেশ করে। কিছু খাবার এবং ওষুধ আপনার প্রস্রাবকে গাঢ় বাদামি করে দিতে পারে। এ রকম হলে পানি খাওয়া বাড়াতে হবে। তবে যদি এরপরও রং এর পরিবর্তন না আসে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

> লাল অথবা গোলাপি রং প্রস্রাবের রং লাল অথবা গোলাপি হওয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। তবে সব সময় এটা ঝুঁকির নাও হতে পারে। চারটি বিষয় আছে যার কারণে এই সমস্যা হতে পারে। রক্ত, খাবার, ওষুধ এবং টক্সিন- এসবের কারণে এ রকম হতে পারে। খাবারের মধ্যে বিট, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ইত্যাদি থাকলে এই সমস্যা হতে পারে। টক্সিন লেড অথবা মার্কারি রং পরিবর্তনের একটি কারণ হতে পারে।

প্রস্রাব এ রকম হলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা নির্দেশ করবে। যেমন: ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন, টিউমার, প্রস্টেট সমস্যা, কিডনিতে পাথর অথবা কিডনি রোগ এবং ব্লাডারে সমস্যা। এ রকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ