ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

সৌদিতে বাংলাদেশিকে নিয়ে ইন্সটাগ্রামে ঠাট্টা-মশকরা, অতঃপর...

প্রবাস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১২:০৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬

মধ্যপ্রাচ্যে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় করা সেই ছবি যাতে নাজির আল-ইসলাম তাকিয়ে আছেন স্বর্ণের দোকানের শোকেসে      ছবি: আল-কাহতানির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে

মধ্যপ্রাচ্যে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় করা সেই ছবি যাতে নাজির আল-ইসলাম তাকিয়ে আছেন স্বর্ণের দোকানের শোকেসে ছবি: আল-কাহতানির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে

নাজির আল-ইসলাম আব্দুল করিম নামের ৬৫ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আছেন দীর্ঘকাল। সেখানে তার পেশা: পরিচ্ছন্নকর্মী। সম্প্রতি তিনি একটি স্বর্ণালঙ্কারের দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে কাচের শোকেসে তাকিয়ে দেখছিলেন ভেতরের মহামূল্য আর মনোলোভা অলঙ্কারগুলো।

যে কোনো হৃদয়বান, সংস্কৃতিবান, বিবেকবান মানুষ এই দৃশ্য দেখে অনুভব করবেন যে তিনি কী ভাবছিলেন তখন। এটা হতে পারে হয়তো তার স্নেহের কন্যাকে, পুত্রবধূকে বা প্রিয়তমা স্ত্রীকে সারাজীবনেও এমন জিনিস কিনে দিতে না পারার আক্ষেপে মরছিলেন তিনি তখন। কিংবা হতে পারে বিদেশে ক্লিনারের কাজ করে জীবনভর সঞ্চিত অর্থের কিছু ব্যয় করে দু/একটা ক্ষুদ্র অলঙ্কার নিজের প্রিয়জনদের জন্য নেওয়া যায় কি না- এমনই হয়তো ভাবছিলেন তিনি।

কিন্তু ভোগ-বিলাস দিনকাটানো বিত্তের চর্বিতে জন্ম নেওয়া কিছু মানুষের কাছে সামর্থহীনের এই আবেগ-বাসনার কোনো মূল্যই নেই। তারা এর অর্থ করে অন্যভাবে, তাদের বিবেকহীণ বিনোদনের উপকরণ হিসেবে।

তেমনি এক বিবেকহীন ‘মানুষ নামের নির্বোধ মাংসপিণ্ড’ স্বর্ণের দোকানের শোকেসে তাকিয়ে থাকা নাজির ইসলামের ছবিটি ফটো শেয়ারের সামাজিক মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করে দেন সঙ্গে একটি ক্যাপশনহ। এতে ওই ব্যক্তি ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন, এই লোকটির তো শুধু আবর্জনার দিকেই তাকিয়ে থাকার অধিকার আছে!

তবে খামোখাই নিরপরাধ লোককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে পোস্ট করা ওই ছবি ও মন্তব্য নজরে আসে ৩৮ বছর বয়সী অপর সৌদি নাগরিক আব্দুল্লাহ আল-কাহতানির। ঘটনা তাকে ব্যথিত করে। তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ওই ছবিটি পোস্ট করে লোকটিকে খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন তার অ্যাকাউন্ট অনুসরণকারীদের।

ইনসানিয়াত নামের কাহতানির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা টুইটটি ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে শেয়ার হয় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি। এরপর খুব দ্রুতই নাজির যে এলাকায় ডিউটি দেন সেখানকার টুইটার ব্যবহারকারীরা তাকে খুঁজে বের করে- কাহতানির টুইট পোস্টের তিন ঘণ্টার মধ্যেই!
সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে যায় পরিস্থিতি। এবার ঠাট্টা-বিদ্রুপ নয়, দাঁড়িয়ে যায় নাজিরের সমর্থক-পৃষ্ঠপোষক একটি পক্ষ। টিটকারি আর বিদ্রুপকারীদের চেয়ে এই দলটা অনেক ভারী হয়ে দেখা দেয়।

নাজিরের প্রতি সম্মান-ভালবাসা আর সহানুভূতির আবেশে তাড়িত লোকজন তাকে পাঠাতে থাকেন নানান উপহার। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ওই উপহারের মধ্যে আছে একটি আইফোন সেভেন, একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি স্মার্টফোন, নগদ অর্থ, খাদ্যপণ্য, মাতৃভূমি বাংলাদেশে ঘুরে আসার জন্য রিটার্ন এয়ার টিকেট, এবং অতি অবশ্যই এক সেট স্বর্নের অলংকার।
নাজিরের সাক্ষাৎ পেতে বা তাকে উপহার দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন শুধু সৌদি আরব নয়, গালফভুক্ত অন্যান্য দেশের লোকজনও।

বিষয়টির বর্ণনায় আল কাহতানি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পরিচ্ছন্নকর্মী নাজিরকে খুঁজে পাওয়া এবং তাকে উপহার দিয়ে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে লোকজনের সহৃদয়ায় তিনি অভিভূত।

তিনি বলেন, আমি আশা করি অন্য মানুষের প্রয়োজনে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যেতে যেন সবসময় এভাবেই আমরা একত্রিত হতে পারি।

ঘটনা প্রসঙ্গে নাজির আল-ইসলাম জানান, স্বর্ণের দোকানের সামনে তার যে ছবি তোলা হয়- তা তিনি ঠাহরই করেননি। তবে ওই সময়টায় তিনি একটি আলোর ঝলকানি টের পেয়েছিলেন, কিন্তু তা কিসের সে ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না। পরে জানতে পারেন যে তার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে, নাজির সাহেব এতসব উপহার পেয়ে অভিভূত এবং এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

এখানে একটি বিষয় আবারো প্রামণ হলো, ইতিবাচক মানুষদের উদ্যোগ দুষ্টপ্রকৃতির লোকজনের যে কোনো নেতিবাচক অপকর্মের সূচনাকেও শেষতক মহৎ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

তবে যে ব্যক্তি নাজির আল-ইসলামের ছবি দিয়ে ওই নির্দয় বিদ্রুপাত্মক পোস্টটি দিয়েছিলেন ইন্সটাগ্রামে- তার পরিচয় জানা যায়নি। সিএনএন, মিররঅনলাইন
নিউজওয়া২৪.কম/একে

প্রবাসী দুনিয়া বিভাগের সর্বাধিক পঠিত