ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

সন্তানের জন্য ৪৪ বছর রোজা রাখা ‘ভেজি বুড়ি’ আর নেই!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩০, ১০ জুলাই ২০১৯  

আদরের ছেলে শহিদুলের সঙ্গে সখিরণ     -ফাইল ফটো

আদরের ছেলে শহিদুলের সঙ্গে সখিরণ -ফাইল ফটো

সারা বিশ্বের মা জননীদের আদর্শের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন সখিরণ নেছা ওরফে ভেজি বুড়ি। যিনি নিজের সন্তানের মঙ্গলের জন্য প্রায় ৪৪ বছর ধরে রোজা রেখেছেন। যখন এই কথাটি আপনাদের জানাচ্ছি, তখন সখিরণ নেছাকে দাফন করার প্রক্রিয়া চলছিল। ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে যে সবার প্রিয় সেই সখিরণ নেছা ওরফে ভেজি বুড়ি আর নেই। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪৪ বছর আগে ভেজিরন নেছার ১২ বছল বয়সী বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে ঘটনার দেড় মাস পর ভেজিরন নেছা গ্রামের মসজিদ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেন যে, ছেলে ফিরে এলে তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন রোজা রাখবেন। এরপর ওই দিনই হারানো ছেলের সন্ধান পান তিনি। হারানো শহিদুলকেফিরে পেয়ে প্রতিজ্ঞা পূরণে দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে রোজা রাখেন তিনি। সেই অনন্যা অসাধারণ মা ভেজি বুড়ি গত ৮ জুলাই, সোমবার বিকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুরে নিজ বাড়িতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

১৫ দিন ধরে তিনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন। রক্ত তৈরি করার কোষগুলো তাঁর অকেজো হয়ে পড়েছিল। সোমবার রাত ১২টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর গ্রামে আদর্শ মা সখিরণ নেছাকে দাফন করা হয়। 

হতদরিদ্র ঘরের একজন সাধারণ মা ছিলেন তিনি। কাজ করতেন মানুষের বাড়িতে। কখনো ঝাল (কাঁচা মরিচ) আর কলাই তুলে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ৪৪ বছর রোজা পালন করলেও খাওয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন একেবারেই সাদামাটা। কোনো সময় শুধু পানি মুখে দিয়েই রোজা ভাঙতেন। দুনিয়া জোড়া মায়েদের জন্য ‘রোল মডেল’ সখিরণ সন্তানের জন্য ১৯৭৫ সাল থেকে এক নাগাড়ে রোজা পালন করে বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারাবিশ্বে ব্যতিক্রম একজন মমতাময়ী মা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছিলেন।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সখিরণের স্বামী আবুল খায়ের ছিলেন সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান। তাঁর যখন বিয়ে হয়, সম্পদে ভরপুর ছিল স্বামী আবুল খায়েরের সংসার। ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের জননী ছিলেন সখিরণ। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবী পরিবারে পরিণত সখিরণের সংসার। একপর্যায়ে ১১ বছর বয়সী বড় সন্তান শহিদুল হারিয়ে গেলে তাঁর জন্য রোজা পালন শুরু করেন তিনি। বেশ কয়েক বছর পরে একপর্যায়ে শহিদুল বাড়ি ফিরে এলেও রোজা রাখা আর বন্ধ করেননি সখিরণ। ছেলে শহিদুলের বয়স এখন ৫৫। এমন মা পাওয়া বর্তমান জামানায় সত্যিই দুর্লভ গর্বের বিষয়। মা সখিরণ তোমায় স্যালুট।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে 

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত