ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

শরবতকে বের করে দিচ্ছে পাকিস্তান!

বটতলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ৪ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ২৩:০৭, ৭ নভেম্বর ২০১৬

শরবত গুলা- প্রথম ছবিটি ১৯৮৪ সালে তোলা, দ্বিতীয়টি ১৭ বছর পরের

শরবত গুলা- প্রথম ছবিটি ১৯৮৪ সালে তোলা, দ্বিতীয়টি ১৭ বছর পরের

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির এক সময়কার দুনিয়া তোলপাড় করা ‘আবিষ্কার’ সবুজ নয়না ‘আফগান গার্ল’কে এবার দেশ থেকে বহিষ্কার করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। শরবত বিবি ওরফে শরবত গুলার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে- তিনি প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিক। তবে পাকিস্তানি পরিচয়টা জাল।

সেই জাল-জালিয়াতির ভুয়া আইডি কার্ডের জন্য পেশওয়ার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে গত ২৬ অক্টোবর৷

শরবত নামের তখনকার ১২ বছরের কিশোরীর বিস্ফারিত সবুজ চোখে মোনালিসা টাইপ এমন কিছু একটা ছিল, যা ভোলার নয়- মূলত তাকে নিয়ে দুনিয়াজুড়ে তোলাপাড়ের কারণ এটাই ছিল, যা প্রভাবশালী সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল কোটি কোটি পাঠক হৃদয়ে। সেটা ১৯৮৫ সালের জুনের ঘটনা। জিওগ্রাফিক পরে তাকে নিয়ে ডকুমেন্টারিও করে যার নাম দেয় ‘মোনালিসা অব আফগান ওয়ার’ (আফগান যুদ্ধের মোনালিসা)।

এদিকে, শুক্রবার ডন.কম জানায়, ১৫ দিন কারাভোগের পর শরবত গুলাকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে। তবে তার আগে তাকে ১ লাখ ১০ হাজার পাকিস্তানি রুপিয়া জরিমানাও পেরিশোধ করতে হবে। শুক্রবার এমনি রায় দিয়েছে পেশওয়ারের অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন বিষয়ক বিশেষ আদালত।

তিনি নিজে দোষ স্বীকার করেছেন এবং নারী বিধায় তাকে বিশেষ বিবেচনা করা হবে বলে জানায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। তবে যে অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেলদণ্ডের বিধান রযেছে।

গত ২৬ অক্টোবর শরবতকে তার বাসস্থান পেশওয়ারের নাওথিয়া থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (ফিয়া)। তার বিরুদ্ধে কমম্পিউরাউজড আইডি কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। এর একদিন পর জাতিসংঘের শরণার্থী হাউকমিশন জানায়, শরবত তদের রেজিস্ট্রিকৃত শরণার্থী নন।

এর আগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছিলেন, নারী হিসেবে শরবত গুলার মামলাটিকে মানবিকতার জায়গা থেকে বিবেচনা করা হবে। আমরা তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবো অথবা সাময়িক ভিসা দিয়ে পাকিস্তান ত্যাগ করতে বলব। কিন্তু এরপরই আমরা সেই সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আটক করতে প্রচেষ্টা চালাবো, যারা তাকে নকল পরিচয়পত্র দিয়েছিল।

অপরদিকে, জিওগ্রাফিক আলোকচিত্রী ম্যাককারি এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, শরবত গুলাকে গ্রেফতারের ঘটনা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে তার জন্য সর্বোচ্চ করব। প্রয়োজনীয় আর্থিক ও আইনি সহায়তা নিয়ে আমরা তার ও তার পরিবারের পাশে আছি।

উল্লেখ্য, নাম-পরিচয় গোপন করে পাকিস্তানি পরিচয়পত্র নেওয়া আফগান শরণার্থী শরবত একা নন, এমন হাজার হাজার আফগান পাকি কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে পরিচয়পত্র নিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তান এসব আফগানদের নিজদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। এ বিষয়ে ইসলামাবাদ সরকার তাদের ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। ভুয়া নাগরিক সনাক্তকরণে অভিবাসন কর্মকর্তারা এ যাবত ৯ কোটি ১০ লাখ আইডি কার্ড পুনঃযাচাই করেন। এরমধ্যে ৬০ হাজার ৬৭৫টি পরিচয়পত্র ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র করতে সহযোগিতা করার অভিযোগে ১৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ইসলামাবাদ। 

শরবত উদ্বাস্তু নন, পাকিস্তানিই!
শরবতকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা ম্যাককারি ১৭ বছর পর ২০০২ সালে আবার তার খোঁজ পান, আফগানিস্তানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে৷ শরবত গুলা তখন রুটি তৈরির কারিগর, অর্থাৎ তন্দুরওয়ালার স্ত্রী ও তিন সন্তানের জননী৷

পরে শরবত স্বামীর সঙ্গে পাকিস্তানের পেশাওয়ারে যান এবং সেখানেই থাকতে থাকেন পাকিস্তানি পরিচয়ে৷

গত ২৬ অক্টোবর সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে এসময় ফিয়া সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে খানাতল্লাসির নামে তাদের কাছ থেকে ২ হাজার৮০০ ডলার কেড়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন শরবতের দেবর শাহশাদ খান৷

শাহশাদ দাবি করেন, শরবত বৈধভাবেই পাকিস্তানে রয়েছেন, কেননা তিনি তার ভাই রহমত খানের স্ত্রী৷ রহমতের জন্ম পাকিস্তানে এবং পাঁচ বছর আগে মারা যান তিনি৷

১৯৮৪ সালে শরবত গুলা যখন আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারির ক্যামেরাবন্দি হন তখন তার বয়স মাত্র ১২ বছর। পরে ১৯৮৫ সালের জুনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ওই ছবিটি আসার পর বিখ্যাত হয়ে যায়।

আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় শরবত পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের একটি শরণার্থী শিবিরে ছিলেন। পাকিস্তানি নাগরিকত্বের সনদ তথা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য ২০১৪ সালের এপ্রিলে শরবত বিবি নামে আবেদন করেন তিনি।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত