মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী আব্দুস সুবহানের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আব্দুস সুবহান -ফাইল ফটো
মুক্তযুদ্ধকালে মসজিদে আশ্রিতদের বের করে এনে তলোয়ার দিয়ে জবাই করতো সে...
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি ও জামায়াত নেতা আব্দুস সুবহান (৮০) মারা গেছেন। আজ (শুক্রবার) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত প্রধান সহকারী কারারক্ষী শেখ কামাল হোসেন জানান, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সুবহান বার্ধ্যক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ২৪ জানুয়ারি তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রভাবশালী জামায়াত নেতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে একই বছরের ১৮ মার্চ ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়। সেই মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলো।
জামায়াত নেতা আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে মুক্তযুদ্ধের সময় নিরীহ বাঙালিদের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানিদের দোসর ও দালাল এই জামায়াতি পাবনা-৫ আসন থেকে পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের মনোনয়নে এমপি হন সুবহান। পাকিস্তান আমলে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য সুবহান পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক হেড মাওলানার দায়িত্বেও ছিলেন।
মসজিদ আশ্রিতদের বের করে তলোয়ার দিয়ে জবাই করেছিলেন
আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় দিতে গিয়েআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেছিলেন- ‘এ কী নৃশংসতা! মসজিদ থেকে বের করে এনে তলোয়ার দিয়ে গলা কেটে মানুষজনকে হত্যা করেন সুবহান ও তার সহযোগীরা! এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
রায়ে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত তিনটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই রায় ঘোষণা করেছিলেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্যানেল ট্রাইব্যুনালের ১৬তম এবং জামায়াতে ইসলামীর নবম নেতার বিরুদ্ধে এ রায় দেন।
তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৯টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একটিতে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, “আবদুস সুবহান সামান্য অপরাধী নন। তিনি গুরুতর অপরাধী। তিনি সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ১৯৭১ সালে অপরাধে সহযোগিতা করেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। আবদুস সুবহান পাবনা জেলা জামায়াতের তৎকালীন আমির ছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তায় তিনি গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে অংশ নেন বলে সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়, আবদুস সুবহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব কাজ করেছেন তাতে তাকে একজন ‘কুখ্যাত ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা যায়।”
যে তিন অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড : ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিলের পর এক সপ্তাহের মধ্যে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে অপহরণ করে মোয়াজ্জেম হোসেন, মোতালেব খান ও তার ছেলে নাজমুল হক খানসহ ২০ জনকে হত্যার অভিযোগ (নম্বর ১) প্রমাণ হওয়ায় আবদুস সুবহানকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। একাত্তরে সহযোগী জামায়াত নেতা ও বিহারিদের সঙ্গে নিয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে জামে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া স্বাধীনতাকামী মানুষকে অপহরণ করে হত্যা করেন সুবহান।
একাত্তরের ২ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঈশ্বরদীর সাহাপুর গ্রামে অসংখ্য বাড়িঘর লুটপাট ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং কয়েকজনকে হত্যা করে (অভিযোগ নম্বর ৪)।
একাত্তরের ১২ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি বিরাট বহর পাবনার সুজানগরের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে তিন-চার শ মানুষকে হত্যা এবং বিভিন্ন বাড়িঘরে লুটপাট চালায় ও পুড়িয়ে দেয় (অভিযোগ নম্বর ৬)।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুস সুবহান পাবনা জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন। তিনি একাত্তরে দলটির কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ছিলেন। একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় শান্তি কমিটি গঠিত হলে পাবনা জেলায় সুবহান প্রথমে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পরে সহসভাপতি হন।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে
- কুমিল্লার এক মামলায় জামিন পেলেন খালেদা
- জঙ্গি অর্থায়ন: শাকিলার জামিন ২০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত
- ফাঁসির মঞ্চ নেই ফেনীতে: কুমিল্লা-চট্টগ্রাম জেলে যাবে রাফির খুনিরা
- জামিন আবেদন নাকচ, ‘শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী’ কারাগারে
- আবরার হত্যা: কারাগারে ‘পিটুনি-সম্বর্ধনা’ অনিককে
- খসরুর জামিন বাতিল, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
- রেনু হত্যায় গুজব রটনাকারী রিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
- কারাগারে নেয়া হচ্ছে খালেদাকে
- ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা
- সস্ত্রীক জামিন পেলেন মির্জা আব্বাস
- অরিত্রীর আত্মহত্যা: মামলার প্রতিবেদন ৯ জানুয়ারি
- ৯ বছর পর জানা গেল!
ডিভোর্সড স্ত্রীকে বারবার দেখতে যাওয়ার মাশুল... - প্রেমিক সৈকত যে কারণে রুম্পাকে হত্যা করে বলে সন্দেহ পুলিশের
- পাপিয়াকাণ্ডে মানবজমিন সম্পাদকসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে এমপির মামলা
- সেফুদার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ায় দুই মামলা