মানুষের ত্বকের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার রহস্য...
নিউজ ডেস্ক
ফাইল ছবি
অল্প রোদেই কারো শরীর গোলাপি বর্ণ ধারণ করে আবার সারাদিন রোদে থেকেও অনেকের শরীরে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। এই বৈষম্যতার কারণ কী? এবং কীভাবে একই পূর্বপুরুষ থেকে সৃষ্ট মানুষের ত্বকের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হয়?
তবে যাই হোক, আমাদের ত্বক যুগ যুগ ধরে দারুণ অভিযোজন ক্ষমতার প্রতীক হয়ে আছে।
সবকিছুর মূলে রয়েছে মেলানিন নামক এক ধরনের রঞ্জক, যেটি ত্বক ও চুলের রং নির্ধারণ করে। এই উপাদানটি আসে মেলানোসাইট নামক ত্বকের অভ্যন্তরীণ এক ধরনের কোষ থেকে। এর দুইটি ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক গঠন রয়েছে। একটি হলো ইউ মেলানিন, যেটি ত্বকে বিভিন্ন রেঞ্জের বাদামি আভা সৃষ্টির জন্য দায়ী। চুলের রং কালো, বাদামি ও সোনালী হওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে ইউ মেলানিনের অবদান। অন্যটি হলো ফিও মেলানিন, যেটি ত্বকের লালচে বাদামি ও চুলের লাল রং ধারণের ক্রীড়নক। কারো কারো ত্বকের কোষ এ ইউমেলানিন সক্রিয় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ফিও মেলানিন। কিন্তু মানবজাতির মধ্যে শুরু থেকেই এই ভিন্নতা ছিল না।
মানুষের ভিন্ন ভিন্ন ত্বকের রঙ বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট, যার শুরু আজ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে যখন আমাদের পূর্বপুরুষরা উত্তর গোলার্ধ থেকে আফ্রিকায় এসে বসবাস শুরু করে। প্রাচীন এই মানুষরা বিষুব রেখা ও মকর ক্রান্তি রেখার মধ্যে বসবাস করত, যেটি ছিল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রবণ অঞ্চল। যখন মানুষের ত্বক ক্রমাগত অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসতে থাকে, তা ত্বকের কোষে থাকা ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ত্বকের রং কালচে হতে থাকে, যাকে বলি- 'রোদে পোড়া ত্বক'। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন যাবত চলতে থাকলে ত্বকে ঘটে এক বিশেষ পরিব্যক্তি বা মিউটেশন; যাকে বলে মেলানোমা। ত্বকের কোষের মেলানোসাইট- এ হওয়া এক মারাত্মক ক্যান্সার হল এই মেলানোমা। আধুনিক যুগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করি, প্রাচীন আদিপুরুষদের তেমন ব্যবস্থা ছিল না।
ভয়াবহ অতিবেগুনি রশ্মি প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে সানস্ক্রিন পূর্বপুরুষদের ত্বকেই তৈরি হতো! যার নাম মেলানিন। ত্বকে থাকা মেলানিনের ধরন এবং পরিমাণই নির্ধারণ করে সূর্যের আক্রমণ থেকে আপনি কতটা নিরাপদ। ত্বকে যখন সূর্যরশ্মি আঘাত করে, ত্বক তখন প্রতিক্রিয়া হিসেবে মেলানিন আবির্ভূত হয়। ত্বকে সূর্যের আলো পড়লে তা রডপসিন নামক ত্বকের আলোকসংবেদী কণাকে উদ্দীপ্ত করে। এই রোডপসিন তখন মেলানিনের ক্ষরণ ঘটায়। শ্বেত চামড়ার লোকেদের শরীর এই অতিরিক্ত মেলানিন ক্ষরণের ফলে তামাটে বর্ণ ধারণ করে। এজন্যই ইউরোপ বা আমেরিকায় ত্বকে তামাটে ভাব আনার জন্য সাদা চামড়ার মানুষরা সমুদ্রতীরে সানবাথ করে থাকে।
যাই হোক, উত্তর গোলার্ধ থেকে মানুষ এসে যখন যুগের পর যুগ আফ্রিকার অতি বেগুনি রশ্মি প্রবণ অঞ্চলে এসে বসবাস করতে থাকলো, তাদের দেহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চ মেলানিন ক্ষরণ প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেল, যা ছিল মূলত ইউ মেলানিন। ফলে ধীরে ধীরে তাদের দেহের রং তীব্র কালো বর্ণ ধারণ করলো। যা মেলানোমার বিরুদ্ধে তাদের শরীরের চিরস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কিন্তু আফ্রিকা থেকে মানুষ যতই ধীরে ধীরে উত্তরে এসে ইউরোপ ও এশিয়ায় বসবাস শুরু করলো, ততই ক্ষীণ সূর্যের আলোর সম্মুখীন হল। অতিবেগুনি রশ্মি ক্ষতিকর হলেও এই গ্রুপে কোন ভিটামিন ডি রয়েছে যা হাড়ের গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক।
যেহেতু এশিয়া ও ইউরোপে আসা মানুষরা ছিল উচ্চ মেলানিন যুক্ত ত্বকের অধিকারী তাই এখানকার ক্ষীণ সূর্যালোক তাদের শরীরে যথাযথ ভিটামিন ডি সরবরাহ করতে পারত না। তাই দেখা যেত তারা রিকেটস রোগে আক্রান্ত হয়ে ভঙ্গুর হাড় রুগ্ন শরীরের অধিকারী হচ্ছে দিনে দিনে। তো এই নতুন জায়গায় অভিযোজন এর জন্য মানুষের চামড়া আবার আস্তে আস্তে অভিযোজিত হতে থাকলো এবং হালকা রং ধারণ করব করল। আফ্রিকার অধিবাসীরা উচ্চ মেলানিন যুক্ত কালো চামড়া নিয়েই থেকে গেল, এবং উত্তরের মানুষরা এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিবর্তনের মাধ্যমে সাদা চামড়া প্রাপ্ত হল, যা এখনো দৃশ্যমান। মানবদেহ সত্যিই একটি অত্যাশ্চর্য বিষয়। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য এর কতবার যে বিবর্তন হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই!
নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ
- বাঙালির বংশ পদবীর ইতিহাস
- গন্ধভাদালি লতার উপকারিতা
- ‘ময়ূর সিংহাসন’
- মিশরীয় সভ্যতা এবং নীল নদ
- মধ্যযুগের ইতিহাস
- ব্যবহারের আগে জানুন প্লাস্টিক বোতলে চিহ্নের মানে কী
- পবিত্র কাবা শরীফের অজানা যত তথ্য
- হ্যালুসিনেশন আসলে কী, রোগ না অন্য কিছু?
- পিরামিডের অজানা তথ্য…
- বিকাশ নগদ এবং রকেট’র ভুল নম্বরে টাকা চলে গেলে ফেরত পাবেন যেভাবে
- চুম্বকের আদ্যোপান্ত...
- ‘চুম্বন’ আদর ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
- ‘রক্ত’ রঙের রহস্য...
- ‘ধানমন্ডি’ নামকরণের ইতিহাস
- মানুষের পর বুদ্ধিমান প্রাণী...