বিষখালী নদিতে ইলিশ শিকারের মহোৎসব
ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ফাইল ছবি
৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও ঝালকাঠির রাজাপুরে বিষখালী নদীতে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। বিষখালী নদীতে দিনরাত চলছে মা ইলিশ ধরার প্রতিযোগিতা। প্রায় তিনশতাধিক জেলে প্রতিদিন ইলিশ ধরছেন। আর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টা। সুগন্ধা নদীর মাটিভাঙা আবাসন প্রকল্পের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন যুবক। তারা তাকিয়ে আছেন নদীর দিকে। নদীর মাঝে ২০ থেকে ৩০টি নৌকায় করে জাল ফেলেছেন জেলেরা। এদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন মৌসুমি জেলে। কেউ মোটরসাইকেল চালক, কেউ আবার দিনমজুর। নিষিদ্ধ সময় জাল ফেলে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকার করছে তারা। ইলিশ ধরার কাজে তাদের সহযোগিতা করছে প্রভাবশালীরা।
মাছ ধরে নদী তীরে আসার সঙ্গে সঙ্গে কেউ জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে বস্তায় ভরছে, কেউ জাল টেনে কাজ এগিয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ বস্তা ভরে পাশের ছোট খাল ব্যবহার করে পানের বরজের পাশে মাছ গুলো নিরাপদে রেখে পুনরায় নামছে ইলিশ নিধনে। এ যেন সুগন্ধায় ইলিশ নিধনের মহোৎসব চলছে। একই অবস্থা চলছে সুগন্ধা নদীর অনুরাগ, আমিরাবাদ, খোজাখালী, কংসারদিঘী ও কুমারখালী এলাকায়। শুধু নলছিটির সুগন্ধায় নয়, বিষখালী নদীতেও দিনরাত সুযোগ পেলেই ইলিশ শিকারে নামছেন জেলে ও মৌসুমি জেলেরা। বিষখালী নদীর হদুয়া, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার প্রায় শতাধিক স্পটে চলছে মা ইলিশ শিকার। প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে তারা ইলিশ ধরছেন।
জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী যুবকরা নদীর তীরে থেকে ইলিশ শিকারের পুরো কার্যক্রম তদারকি করেন। তারা প্রত্যকে মোবাইলে হেডফোন ব্যবহার করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গতিবিধি জেলেদের কাছে পৌঁছে দেন। যখনই ভ্রাম্যমাণ আদালত, মৎস্য বিভাগ বা পুলিশের টহল গাড়ি দেখতে পান, তাৎক্ষনিক তা জেলেদের জানিয়ে দেন। এসব খবর পয়ে জেলেরা পাশের ছোট ছোট খালেল ভেতরে ঢুকে নিরাপদে আত্মগোপন করেন। কর্মকর্তারা চলে গেলে আবার জাল নিয়ে নদীতে নামেন। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনে ও রাতে জেলেরা নদী থেকে ইলিশ ধরছেন। তবে ধরা মাছের দাম পাচ্ছেন না খুব একটা। প্রতি কেজি ইলিশ মাছ মাত্র ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেসব জেলেরা প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে ইলিশ মাছ পৌছে দিচ্ছেন ক্রেতাদের বাড়িতে, তারা ৪০০ টাকা কেজিতে বড় ইলিশ বিক্রি করেন। যারা প্রভাবশালী মধ্যসত্যভোগী তারা জেলেদের কাছ থেকে কমমূল্যে কিনে বেশি টাকায় বিক্রি করেন। এখন মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলায় নদীতে মাছ ধরা খানিকটা কমে যাওয়ায় কিছু সময় জাল পেতে রাখলেই প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা প্রতিদিন ইলিশ শিকার করে তা নির্বিঘ্নে বিক্রিও করছেন।
নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, কিছুতেই থামছে না সুগন্ধায় ইলিশ ধরা। ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা হচ্ছে ইলিশ। বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। মাছ ধরা ঠেকাতে প্রশাসনও রয়েছে নদীতে। অভিযানের ট্রলার যখন মাটিভাঙা এলাকায় থাকে, তখন উৎসব করে মাছ ধরেন মল্লিকপুর থেকে দপদপিয়া এলাকার জেলেরো। আবার মল্লিকপুরের দিকে অভিযানের ট্রলার ছুঁটলে জাল নিয়ে নেমে পড়েন মাটিভাঙা এলাকার জেলেরা। এ অবস্থায় কোনক্রমেই মাছ ধরা থামছে না। মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ০৭ অক্টোবর থেকে ইলিশ মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে। এ নিষিদ্ধ এ সময় শতশত মন ইলিশ ধরেছে জেলেরা। এ যেন ইলিশ ধরার মহোৎসব।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে এবং রাতের অন্ধকারে জেলেরা অবাধে মা ইলিশ ধরছে। উপজেলার বিষখালী নদীতে শত শত জেলেকে উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ ধরতে দেখা গেছে। তাদের নেই কোন আতঙ্ক। যদিও মাঝেমাঝে সরকারিভাবে দুই-একটি ট্রলার মহড়া দিলেও এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে না যেতেই শত শত ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা প্রতিদিন এসব এলকায় শত শত মণ ইলিশ শিকার করে নির্বিঘ্নে বিক্রি করছে।
স্থানীয়রা জানান, সরকারিভাবে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণির লোভী জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে যেভাবে অভিযান পরিচালিত হতো, এ বছর তেমনটা হচ্ছে না।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলায় নদীতে মাছ ধরা খানিকটা কমে যাওয়ায় কিছু সময় জাল পেতে রাখলেই প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা প্রতিদিন ইলিশ ধরে নির্বিঘ্নে বিক্রিও করছেন।
এ ব্যাপারে রাজাপুর উপজেলা সহকারি মৎস কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের মাত্র দুটি ট্রলার রয়েছে, আমরা মা ইলিশ শিকার বন্ধ করার চেষ্টা করতেছি। অভিযান সব সময় চালানো হচ্ছে।
নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান রুবেল জানিয়েছেন, মা ইলিশ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। একা প্রশাসনের পক্ষে মাছ ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়। যে কারণে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতামূলক উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন তৎরপতাই কাজেই আসেনি। স্থানীয়দের সহযোগিতা পাচ্ছি না। যে কারণে সুগন্ধায় মাছ ধরা থামছে না। তার পরেও আমরা বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করে জেল জরিমানা করেছি।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস
- ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র আশ্রমের সেবককে কুপিয়ে হত্যা
- পরকীয়া, গোয়েন্দাগিরি আর ব্ল্যাকমেলিংয়ের জটিল কাহিনী
- পুলিশ ঘটনার শেষে নয়, আগেও আসে তাহলে!
- গাছের পাতা চুরি: রংপুরে বেগম রোকেয়া কলেজে তুলকালাম
- ত্রিশালে ‘অলৌকিক পানি’, ১৪৪ ধারা জারি
- টেকনাফে সোয়া লাখ ইয়াবা উদ্ধার
- সবুজ পাতার খামে হেমন্তের চিঠি
- সীমান্তরক্ষায় বিজিবিতে এবার নারী
- আধমণের হরিণ গিলে খেল পনের ফুটের অজগর (ভিডিও)
- নয়াপল্টনে হঠাৎ ড্রোন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক!
- শিকলে বাঁধা বাকপ্রতিবন্ধী ছেলের জন্য কেঁদে মরছেন মা-বাবা
- জামিন নামঞ্জুর, মানিকগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা তাপস সাহা জেলহাজতে
- ছাগলনাইয়ার ‘উভয় পক্ষের লোক’ যুবলীগ নেতা ফারুক!
- ব্যবসায়ী সাইফুল সাভারে মুক্ত
- ভারত সফরে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হয়নি: শেখ হাসিনা