ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

বার্সেলোনাকে বাঁচালেন মেসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৩ এপ্রিল ২০১৯  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

লা লিগায় ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে ৪-৪ গোলে ড্র করেছে বার্সেলোনা। ভিয়ারিয়ালের হয়ে গোল করেছেন চুকোওজি, টোকো একাম্বি, ইবোররা ও বাক্কা। বার্সেলোনার হয়ে গোল করেছেন কুতিনহো, ম্যালকম, মেসি ও সুয়ারেজ।

৬১তম মিনিটে কুতিনহোর বদলি হিসেবে মেসিকে মাঠে নামালেন ভালভার্দে। ততক্ষণে স্কোরলাইন ২-২। মেসি নামতে না নামতেই বার্সেলোনার জালে আরও এক গোল দিয়ে দিল স্বাগতিকেরা। ১ গোলে পিছিয়ে বার্সেলোনাকে তখন দিশেহারাই মনে হচ্ছিল। মেসিও কেমন যেন নিজের ছায়া হয়ে ফিরছেন। কাতালানদের বুকে আরও একবার ছুরি চালিয়ে বসল ভিয়ারিয়ালের খেলোয়াড়েরা। বার্সেলোনা পিছিয়ে পড়ে ৪-২ গোলে। 

ম্যাচের বাকি আর মিনিট দশেক। ম্যাচের অমন সময়ে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ বোধ হয় মেসির হৃদয়েই হচ্ছিল। তা না হলে মেজাজ হারিয়ে মেসি কেন হলুদ কার্ড দেখবেন! কিন্তু তিনি মেসি বলেই জানেন জবাবটা খেলা দিয়েই দিতে হবে।
 
নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হতে যখন আর কয়েক সেকেন্ড বাকি মেসি তখনই তাঁর ঝুলি থেকে জাদুর কাঠি বের করে আনলেন। অসাধারণ ফ্রি কিকে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান কমালেন। 

কাজ তখনে শেষ হয়নি। মেসি তখন অপেক্ষায় একটা মুহূর্তের, যখন তাঁর সেই জাদুর কাঠি আরেকবার ছোঁয়ানোর সুযোগ মিলবে। যোগ হওয়া সময়ে দেখা মেলে সেই মুহূর্তের—কর্নার কিক পায় ভালভার্দের শিষ্যরা। কর্নার কিক নিতে মেসি ছুটে গেলেন নিজেই। দুর্দান্ত মাপা কর্নার কিক নিলেন। বক্সে থাকা সুয়ারেজ সেটা জলে জড়ালেন। দলকে বাঁচালেন পরাজয়ের লজ্জার হাত থেকে।

ম্যালকম একাদশে থাকলেই যেন বার্সেলোনা হারে। চলতি মৌসুমের পরিসংখ্যান দেখে অন্তত সেটাই মনে হবে সবার। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনা যে চারটি ম্যাচ হেরেছে তার তিনটিতেই যে ম্যালকম ছিলেন প্রথম একাদশে! ভালভার্দের কানে কানে কেউ এ তথ্যটা দিয়েছে কি না জানা যায়নি। দিলে বার্সা কোচ হয়তো ভেবে দেখতেন বিষয়টা। সে যা-ই হোক। নিশ্চিত হারতে যাওয়া একটা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ড্র করে ফিরেছে বার্সেলোনা। 

সত্যি কথা বলতে কী, এমন ম্যাচে দেখেও সুখ। এমন উত্তেজনা, জয় পরাজয়ের দোলাচল আর কটা ম্যাচেই বা দেখা যায়! শুধু ফুটবল বলেই হয়তো এমনটা সম্ভব।

ম্যাচের শুরুর আঘাতটা করেন কুতিনহো। ১২তম মিনিটে এই ব্রাজিলিয়ানের গোলে এগিয়ে থেকেই খেলা শুরু করে বার্সেলোনা। ১৬তম মিনিটে ভিয়ারিয়ালের বুকে ফের ছুরি চালায় বার্সেলোনা। এবার হন্তারক ম্যালকম। ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সেলোনা খেলছিল নিজেদের মতো করেই।

ভিয়ারিয়াল খোলস ছেড়ে বের হয় একটু পরে, রয়ে-সয়ে। ২৩তম মিনিটে চুকোওজি প্রথম ধাক্কাটা দেন। প্রথমার্ধে আর গোল না পেলেও দ্বিতীয়ার্ধের ৫০তম মিনিটে টোকো একাম্বির গোলে সমতায় ফেরে স্বাগতিকেরা। তখনো তারা বার্সেলোনার 

সঙ্গে জয়ের কথা চিন্তা করেনি হয়তো। কারণ রক্ষণ জমাট রাখার কৌশল তাদের খেলায় পরিষ্কার। ৬২তম মিনিটে ইবোররার গোলে এগিয়ে বার্সেলোনাকে যেন চেপে ধরতে চায় ভিয়ারিয়াল।
 
এক গোলে পিছিয়ে থাকা বার্সেলোনা গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে। ওপরে উঠে খেলা বার্সেলোনার রক্ষণে খানিকটা চির ধরে। এ সুযোগটাই নেয় ভিয়ারিয়ালের আক্রমণভাগ। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে তাঁরা। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে বাক্কার গোলে ব্যবধানটা যখন ৪-২ বার্সেলোনা শিবিরে তখন অস্থিরতা। এমন অস্থিরতায় পেয়ে বসেছিল মেসিকেও। মেজাজ হারিয়ে দেখেন হলুদ কার্ড। 

মেসির পর হলুদ কার্ড দেখেন সার্জিও রবার্তো। হলুদ কার্ডের দেখা পেয়েছেন ভিদাল-সুয়ারেজরাও। এ ম্যাচে বার্সেলোনার ৭ জন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড দেখেছেন। অন্যদিকে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ভিয়ারিয়ালের গনজালেজ।

ভিয়ারিয়াল যখন দশজনের দল, তখনই বার্সেলোনার ত্রাতা হিসেবে হাজির হন লিওনেল মেসি। পেয়ে যান তাঁর জাদু দেখানোর সুযোগ! ৯০তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে সরাসরি ফ্রি কিকে গোল করে ব্যবধান কমান বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন এই গোলমেশিন। 

ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগ মিলিয়ে মেসিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি সরাসরি ফ্রি কিক থেকে এক মৌসুমে ৬টির বেশি গোল করছেন সেই ২০০৬-২০০৭ মৌসুম থেকে। এরপর যোগ হওয়া সময়ে সেই জাদুকরী কর্নার কিক। মেসির কর্নার কিক থেকে পাওয়া বলে শট নেন সুয়ারেজ; দর্শক বনে যান ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক।

খেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত