ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

বর্ণহীন তুষার...

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

যদিও আমাদের দেশ তুষারপাত মুক্ত। কিন্তু শীত প্রধান দেশে অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে অনেক তুষারপাত হয়। 

দেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। তবে উত্তর মেরুর কাছাকাছি দেশগুলোতে আমাদের দেশের চেয়ে অনেক বেশি শীতল আবহাওয়া হওয়ায় সেখানে প্রতি বছরই তুষারপাত হয় এমনকি পানি জমেও তুষারের মত হয়। 

এই তুষার নিয়ে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। এরকম তিনটি ভুল ধারণা সম্পর্কে জেনে নিন-

প্রথমত, প্রত্যেক তুষারকণাই আলাদা। এই ধারণাটি ভুল। ১৯৮৮ সালে একজন বিজ্ঞানী প্রথম দেখতে পান যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে এক তুষার ঝড় থেকে দু’টি অভিন্ন তুষারকণা পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর বিজ্ঞানীরা আলাদা একটি ধারণা পান। বিজ্ঞানী জানতে পারেন, প্রত্যেক তুষারকণা ৩৫টি আলাদা আকৃতি গঠন করতে পারে। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না কেনো একই তুষারকণা ৩৫টি আকৃতি ধারণ করতে পারে। তারা আরো ৮টি উদীয়মান আকৃতি আবিষ্কার করতে পেরেছেন এর মধ্যে আরো বৈচিত্র্য পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় ভ্রান্ত ধারণাটি হচ্ছে তুষার সাদা। অনেক কবিও তাদের কবিতায় ও লেখকগণ তাদের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসে 'তুষারের ন্যায় শুভ্র' এই উপমা ব্যবহার করেন। তবে আসলে প্রকৃতপক্ষে এই তুষারের কোনো রঙ নেই! তুষার পুরোপুরি বর্ণহীন। তুষার তৈরি হয় বরফকণা থেকে, আর এই বরফের কণা ঠিক এরকম যে এর মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারে না। তবে এই বরফ কণায় আলো প্রবেশ করতে না পারলেও এই বরফের টুকরায় সুর্যের আলো ঠিকই প্রতিফলিত হয়। যখন আলো বরফখন্ডে পড়ে তখন সেই আলো বরফখন্ডের তথা তুষারকণার বিভিন্ন তল থেকে তা প্রতিফলিত হয়। এই আলাদা আলাদা প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এজন্যই আমরা তুষারের খন্ডকে সাদা রঙের দেখি। তুষার সব সময়ই দেখতে যে শুধু এক রঙের বা সাদা হয় তা না। এক্ষেত্রে কুখ্যাত হলুদ তুষারের কথা বাদ দেয়া হল। এই হলুদ রঙের তুষার ভুলক্রমেও খাওয়া নিষেধ। এই হলুদ তুষার ছাড়াও প্রাকৃতিক নীল তুষার এমনকি গোলাপি রঙের তুষারও পাওয়া যায়।

ঘন তুষার মাঝেমধ্যে দেখতে নীল রঙের হয়। বিজ্ঞানীরা এর কারণও বের করেছেন। এই ঘন তুষার নীল দেখার কারণ হচ্ছে ঘন তুষার আলাদা অতিরিক্ত এক স্তর সৃষ্টি করে। এই স্তর আলোর জন্য ফিল্টার তৈরি করে। এর জন্য বেশিরভাগ লাল আলো ফিল্টার শোষণ করে নেয়। অতিরিক্ত লাল আলো শোষণ করে নিলেও নীল আলো সেই ফিল্টারে শোষিত হয় না। এজন্যই সেই ঘন তুষার নীল রঙের দেখতে হয়। রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে এরকম তুষার প্রায় দেখা যায়। আবার এই তুষারই বিভিন্ন অঞ্চলভেদে গোলাপি রঙের হয়। এই অঞ্চলগুলো মূলত পর্বত অঞ্চল ও মেরুর উপকূলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলগুলোতে ক্রাইওফিলিক পরিষ্কার পানির শৈবাল জন্মে। এখন ক্রাইওফিলিক পরিষ্কার পানি নিয়ে আপনি হয়তো প্রশ্ন করবেন, এটি কী?

এই ক্রাইওফিলিক পরিষ্কার পানি হচ্ছে শীত প্রধান অঞ্চলে অনেক সময় পানির ধরণ ভিন্ন থাকে যেখানে সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন শৈবাল জন্মে। এর মধ্যে সাধারণত এই ভিন্নতা দেখা যায় পর্বত অঞ্চলের পানিতে ও মেরুর কাছাকাছি উপকূলে। এই ক্রাইওফিলিক শৈবালের লাল রঙের পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থের জন্যেই তুষারের রঙ সাদা না হয়ে সাদার মধ্যে লালাভ হয়ে গোলাপি হয়। এরকম গোলাপি তুষার দেখা যায় অ্যান্টার্টিকা মহাদেশে বিশেষ করে এর পিটারমান দ্বীপ এই ধরণের তুষারের জন্য বিখ্যাত। আবার মেরুর ভাল্লুকগুলোর পশমও তুষারের মতো পরিষ্কার তবে আলো তা পার করে না, ফলে আলোর প্রতিফলনের জন্য তুষারের ন্যায় ভাল্লুকগুলোর গায়ের রংও সাদা। তবে তুষার অঞ্চলে বাস করা এই ভালুকগুলোর পশম যদি শেভ করা হয় তাহলে সেগুলো কালো রঙের দেখা যাবে।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ