ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘প্রধানমন্ত্রী মহান’, আমজাদ হোসেনও একজন!

যাহিন ইবনাত

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৫ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ বরেণ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার জন্য যে কোন সময় থাইল্যান্ড নিয়ে যাওয়া হবে। তবে অপেক্ষা ভালো একটি রিপোর্টের!

এর আগে, গত রোববার থেকে তাকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে লাইফ সাপোর্ট আছেন তিনি।

এরই মধ্যে চিকিৎসক প্রতিনিধি দল থেকে জানানো হয়, আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এখন তার কিডনি আর ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না।

আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল জানান, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পারিবারিকভাবে যোগাযোগ করেছেন। ব্যাংককের সেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে তারা আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চয়তা পেয়েছেন।

কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর এখন সবকিছু নির্ভর করছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাবার চিকিৎসার ব্যাপারে পুরোপুরি দেখভাল করছেন। আমরা চাই, বাবার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। সেটা দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই হোক, তা যত দ্রুত সম্ভব করা হোক।

এদিকে, আমজাদ হোসেনকে নিয়ে তার ছেলে সম্প্রতি সোহেল আরমান লিখেছেন, ‘ফিরে এসো বাবা।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘যে মানুষটি এ দেশের গণমানুষের কথা বলতেন, অবক্ষয়ের কথা বলতেন, যারা নিপীড়িত, অনাহারী, অবহেলিত তাদের কথা বলতেন। শ্রেণি সংগ্রামের কথা বলতেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের হয়ে প্রতিবাদ করতেন।

‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে যে মানুষটির সংলাপ শুনে দেশের পক্ষে মানুষ যুদ্ধ করেছে। যে মানুষটির কলম এ বাংলার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। যে মানুষটির লেখা গান কোটি কোটি মানুষের ঘরে। এখনো কোনো যুবক গেয়ে ওঠে ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’। যে মানুষটির চলচ্চিত্র বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘একটি আমজাদ হোসেন চলচ্চিত্র’ হয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে এনেছে। যাকে নিয়ে বলে শেষ করা যায় না। এ যেন অফুরন্ত ট্রেন লাইন। বাবা, আর লিখতে পারছি না। তোমার এত এত সৃষ্টি, এ যেন এক বিশ্ববিদ্যালয়!’

সেই লেখায় সোহেল আরমান শেষে লিখেছেন, মানুষটি মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহে বাধার কারণে সাত দিন ধরে হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।

এদিকে, আমজাদ হোসেনের অসুস্থতার খবর পেয়ে তার চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার দুপুরে এই গুণী নির্মাতার দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমানকে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তাদের কাছে আমজাদ হোসেনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে জানতে চান। সেখান থেকে বের হয়ে দোদুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, আমজাদ ভাইয়ের খবর পেয়েছি। তার জন্য সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমজাদ হোসেন। শৈশব থেকেই তার সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন। প্রথমেই তিনি অভিনয়ে করেন মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ সিনেমায়। এরপর তিনি অভিনয় করেন মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ সিনেমায়।

আমজাদ হোসেন একসময় চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় নির্মিত জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতা পুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।

গুণী এই পরিচালক ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পেয়ে তার প্রশংসায় ‘মুগ্ধ’ আমজাদ হোসেনের ছোট ছেলে সোহেল আরমান বলেন, এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী তার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন তা কল্পনাই করতে পারিনি। তিনি আসলেই মহান একজন মানুষ। তা না হলে তিনি আমার বাবার কষ্টে দুঃখ পেতেন না। 

 আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।

এ প্রসঙ্গে আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার খুরশিদুল আলম বিদেশে আমজাদ হোসেনের সব চিকিৎসা ব্যয় বহনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত তাদের জানিয়েছেন।

আরমান আরো বলেন, তাদের পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমজাদ হোসেনকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংকক পাঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সেখানকার ডাক্তার ও বাংলাদেশের ডাক্তারদের ইতিবাচক সাড়া পেলে যে কোন সময় তাকে বাইরে নেয়া হবে। এখন আমজাদ হোসেনের সর্বশেষ রিপোর্টের অপেক্ষায় দুই দেশের ডাক্তার অপেক্ষা করছেন। রিপোর্ট ভালো আসলে সবার সিদ্ধান্তে তাকে থাইল্যান্ড নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, আমজাদ হোসেন গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীতে তার বাসস্থানে স্টোক করেন। এরপর থেকে তিনি আইসিউতে রয়েছেন।

নিউজওয়ান২৪/জেডআই