ঢাকা, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
সর্বশেষ:

পুনর্গঠনে যেতে চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘অবিশ্বাস্য বিপর্যয়’ হয়নি বলে মনে করছে বিএনপি। তবু নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে দল পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখছে দলটি।

কিন্তু তাড়াহুড়ো নয়, বরং ভেবেচিন্তে এগোতে চায়। এ জন্য আগে সাংগঠনিক দুর্বলতা খোঁজা হচ্ছে। তাই শিগগিরই জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তনও আসছে না। দলের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দলের নির্ভরযোগ্য নেতাদের ভাষ্য, দেশে কী ধরনের ভোট হয়েছে, তা মানুষ দেখেছে। এবারের নির্বাচনে কোনো ফল বিপর্যয় হয়নি; বরং দেশের জনগণের ভোটের অধিকার ক্ষমতাসীনরা কেড়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে বিএনপি তথা ধানের শীষ প্রতীকের যে ‘ভরাডুবি’ হয়েছে, সে জন্য নেতাকর্মীদের দায় দিতে চান না নেতারা। তার পরও নিয়মিত পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দলের বিভিন্ন কমিটিতে হাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

জানা গেছে, সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান, সংগঠনের দুর্বলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ১৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই মূলত সাংগঠনিক কার্যক্রমে হাত দিতে চান নীতিনির্ধারকরা। ওই টিম এখন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কাজ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কমিটি গঠন নিয়মিত প্রক্রিয়া। বিএনপিও এর বাইরে নয়। এটা আমরা অবশ্যই করব। তবে সারাদেশে নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার কারণে বাড়িঘরছাড়া। বহু নেতাকর্মী কারাবন্দি। দলের চেয়ারপারসনও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় কারাবন্দি। এ অবস্থায় আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ নেত্রীকে কারামুক্ত করা, দলকে আরো শক্তিশালী করা। এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা মাঠে আছি।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অন্য সময়ের মতো এবার ঢালাওভাবে দল পুনর্গঠন করা হবে না। যেসব কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ, যেখানে কমিটি নেই, অপেক্ষাকৃত দুর্বল নেতৃত্ব রয়েছে, এমন সব কমিটিতে হাত দেওয়া হবে। এখন থেকেই সেসব কমিটির বিষয়ে একাধিক স্তরের নেতাদের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এসব কমিটিতে কোন ধরনের সঠিক নেতৃত্ব আসা উচিত সেটাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কাজটি করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দল পুনর্গঠন ও করণীয় নিয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকে তারেক রহমান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দলের কোথায় কোন দুর্বলতা আছে, তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের তথ্য পাওয়ার পর পুনর্গঠনে হাত দেয়া হতে পারে। তবে এবার কমিটি হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে প্রথমেই ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুনর্গঠনে হাত দেয়া হবে। কৃষক দল, তাঁতী দলসহ যেসব অঙ্গ সংগঠন থেকেও নেই, সেসব কমিটির বিষয়ে কী করা যায় তা নিয়ে সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, এবারের পরিবেশ পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটময় হওয়ায় দলের মধ্যে যেন কোনো বিভেদ তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে পুনর্গঠনের সময় বাড়তি নজরও দেয়া হবে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকটি পদ শূন্য। দলটির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি স্থায়ী কমিটিরও পুনর্গঠন জরুরি। ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে দুটি পদ শুরু থেকেই শূন্য। এ ছাড়াও তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এমকে আনোয়ারের মৃত্যুতে আরও তিনটি পদ শূন্য হয়। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বয়োবৃদ্ধ। সালাহউদ্দিন আহমেদ আইনি জটিলতায় ভারতের শিলংয়ে আছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এ অবস্থায় শূন্যপদ পূরণ করে স্থায়ী কমিটি কার্যকর করা উচিত।

সম্প্রতি, দলের স্থায়ী কমিটির দুই নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তাব করলে বিএনপির পুনর্গঠন নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু হয়। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, এখনই কোনো কাউন্সিল হবে, এমন কোনো খবর তাদের কাছে নেই। তার পরও কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দেখা করতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে সেখানে তার সঙ্গে কথা হতে পারে।

জানা গেছে, শিগগিরই স্থায়ী কমিটি থেকে কাউকে বাদ দেয়া হবে না। তবে কেউ যদি পদত্যাগ করতে চান বয়সের কারণে সে ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সম্প্রতি, স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও দল পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে স্থায়ী কমিটির নেতাদের মতামত, বিগত আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগ্য ও তরুণ নেতৃত্ব আবিষ্কার করা গেছে। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দিতে হবে। 

পুনর্গঠনে প্রথমে একই পদে আগ্রহীদের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে কাজ না হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবার ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি করতে হবে, এতে কমিটি গঠনকেন্দ্রিক বিভেদ দূর করা সম্ভব হবে।

নিউজওয়ান২৪/আ.রাফি

আরও পড়ুন
রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত