ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

পাকিস্তানি স্কুলের মতে ‘পাঞ্জাবি অশ্লীল ভাষা’!

শিক্ষা ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১৪ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ১৪:০০, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

পাঞ্জাবিকে স্কুল-কলেজে আবশ্যিক বিষয় করার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে অনুষ্ঠিত র‌্যালি   -ফাইল ফটো

পাঞ্জাবিকে স্কুল-কলেজে আবশ্যিক বিষয় করার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে অনুষ্ঠিত র‌্যালি -ফাইল ফটো

পাকিস্তানে এবার পাঞ্জাবি ভাষাকে হেয় করার অভিযোগ উঠেছে। পাকিস্তানি পাঞ্জাবের শাহিওয়াল জেলার ফরিদ টাউনের এক অভিজাত স্কুল থেকে অভিভাবকদের কাছে পাঠানো নোটিশে পাঞ্জাবিকে “অশ্লীল ভাষা” বলে অবমাননা করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণসহ পাঞ্জাবি সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা। সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছে বিষয়টি। ওই স্কুলে পাঠরত শিশুদের অভিভাবক এবং পাঞ্জাবি বুদ্ধিজীবীরা দাবি তুলেছেন, দ্রুত ওই অপমানজনক নোটিশটির প্রত্যাহার এবং পাঞ্জাবিদের কাছে স্কুলটির কর্তৃপক্ষের ক্ষমা চাওয়ার। সামাজিক মাধ্যমে দাবি উঠেছে ওই স্কুলে পাঞ্জাবিকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার।

নোটিশে ঔদ্ধত্বপূর্ণভাবে পাঞ্জাবি ভাষাকে শিক্ষার্থী এবং তাদের বাবা-মার জন্য “অশ্লীল” বলে ঘোষণা করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিতর্কিত ওই নোটিশের দশটি ঘোষণার মধ্যে পাঁচ নম্বরটিতে বলা হয়েছে- স্কুলে এবং স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে সকালে, স্কুলে থাকা সময়ে এবং বাড়িতে থাকা সময়ে অশ্লীল ভাষার ব্যবহার অনুমোদিত নয়। ওই নোটিশে উল্লেখিত “অশ্লীল ভাষা”র (ফাউল ল্যাঙ্গুয়েজ) ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- অশ্লীল ভাষার মধ্যে আছে বিদ্রুপ-উপহাস, গালাগালি, পাঞ্জাবি এবং ঘৃণাবাচক কথা।

বৃহস্পতিবার দ্য ডন জানায়, স্কুলটির ওই নোটিশ পাঞ্জাবের সবগুলো শাখার অভিভাবকদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক নোটিশটিতে অভিভাবকদের স্বাক্ষর করে তা স্কুলে ফেরত পাঠাতেও বলা হয়েছে।

বিকনহাউস স্কুল সিস্টেম নামের ওই প্রতিষ্ঠানের ফরিদ টাউন শাখার প্রিন্সিপাল জামিল আহমেদ জানান, লাহোরে অবস্থিত স্কুলের হেড অফিস থেকে নোটিসের বিষয়বস্তু তাকে পাঠানো হয়। এতে ‘পাঞ্জাবি ভাষাকে অসম্মান করা হয়েছে কেন’- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি অস্বীকার করেন।

পাঞ্জাবি পণ্ডিত ও কলামিস্ট মুশতাক সুফি এ প্রসঙ্গে জানান, সেশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বিষয়টি দেখেছেন যা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে এবং পাকিস্তানি ও ভারতীয় পাঞ্জাবে বসবাসরত কোটি কোটি পাঞ্জাবিকে অপদস্ত করেছে।

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টাল কলেজের প্রফেসর ড. সাইদ ভুট্টা বলেন, বাবা ফরিদ থেকে নিয়ে খাজা ফরিদ পর্যন্ত প্রাচীন সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে পাঞ্জাবি ভাষার। এ ধরনের নোটিস পাঞ্জাবি ঐতিহ্যের প্রতি একটি শ্রেণির অসম্মান আর অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ।

লাহোরের সুপরিচিত প্রকাশক আমজাদ সালিম এ প্রসঙ্গে বলেন, আঞ্চলিক বাষার সুরক্ষা এবং পষ্ঠপোষকতা পাকিস্তানের একটি সংবিধান স্বীকৃত অধিকার যা কোনো স্কুল অস্বীকার করতে পারে না।

একজন পাঞ্জাবি অভিভাবক ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এর অর্থ আমাদের বাচ্চারা এখন থেকে আর তাদের দাদা-দাদী নানা-নানীদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না, কারণ ওইসব মুরুব্বীদের ভাষা তো পাঞ্জাবি।

প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসে লাহোরসহ পাকিস্তানের অনেক স্থানে পাঞ্জাবিকে প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ব্যাপক প্রচারণা, মিছিল, র‌্যালি, সভা-সমাবেশ করে পাঞ্জাবি আবাদি বোর্ড, মাসুদ খাদারপোশ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত