ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
সর্বশেষ:

দুই দলের নির্বাচনী কৌশল

যাহিন ইবনাত

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৫ নভেম্বর রোববার তাদের প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছে। এদিকে, ২৬ নভেম্বর সোমবার থেকে দলের মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিতে শুরু করেছে অনেক দিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা বিএনপি।
 
তবে এবার দুই দলই মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা এবং প্রতিপক্ষের কৌশলের ওপর অনেক বেশি জোর দিচ্ছে। তবে দল দুটি তাদের নিজ নিজ জোটের সঙ্গে বণ্টন করা আসনের বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট তথ্য প্রকাশ করেনি।

প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল

আওয়ামী লীগে দলীয় ৩৮ জনের মতো বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন এবং নতুন মুখ এসেছেন ৪৬ জনের মতো। ক্রিকেটার মাশরাফির প্রার্থী হওয়ার চমকও রয়েছে। কিন্তু দলটি প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় কোনো ঝুঁকি নেয়নি।

এদিকে, ২০১৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, তাতেও আওয়ামী লীগের আগের সংসদের ৪৮ জন সদস্য বাদ পড়েছিল।

কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদিসহ বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে দু-একজনকে বাদ দেয়া হলেও, তাদের পরিবার থেকেই অন্য সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

কোনো মন্ত্রী বা এমপি বাদ পড়লেও তারা দুর্নীতির কারণে বাদ পড়েছেন—এমন সমালোচনার আশঙ্কাতেও আওয়ামী লীগ সেই ঝুঁকি নেয়নি বলে জানা গেছে।

এ ছাড়াও টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে যেসব জায়গায় মাঠ পর্যায়ে কোন্দল বেড়েছে, সেটি সামাল দেয়ার ব্যাপারেও মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বিবেচনায় রেখেছে। যারা জয়ী হবেন বলে দলটি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছে, তাদেরকেই শুধুই শাসক দলটি অগ্রাধিকার দিয়েছে।

এইচ টি ইমাম বলেন, এবার নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপির বিবেচনা

বিএনপি এবার প্রথম বারের মতো দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিতে শুরু করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একটি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দলটির প্রধান জেলে রয়েছেন।

এদিকে, এই কারণে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নিতে পারার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। সেটি বিবেচনায় থাকলেও বিএনপি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে প্রার্থী করেছে। বিকল্প প্রার্থীর চিন্তাও দলটি করে রেখেছে বলে জানা গেছে।

খালেদা জিয়াকে ফেনী-১ এবং বগুড়া ৬ ও ৭ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে।

বিএনপি নেত্রীর দলীয় মনোনয়ন সম্পর্কিত চিঠি তার প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তরের মধ্য দিয়েই দলটি তাদের প্রার্থীদের চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। সে সময় সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিতে গিয়ে কেঁদেছেন।

বিবিসি বাংলার সুত্রে জানা গেছে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি নেয়া হয়নি।’

বিএনপি সিনিয়র কিছু নেতার আসন ছাড়া বেশির ভাগ আসনে মূল প্রার্থীর পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থীও রেখেছে। দলটির একজন নেতা জানান, মামলা এবং ঋণখেলাপির প্রশ্নসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় রেখে দুজন করে প্রার্থী রাখা হয়েছে, যাতে একজন বাদ পড়লে আরেক প্রার্থী বহাল থাকে।

এ ছাড়াও কোন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকতে পারবেন সে বিষয়টিকেও বিবেচনা করেছে বিএনপি। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাবে না।

মূলত দীর্ঘ ১০ বছর পর নির্বাচন করছে বিএনপি। দলের কঠিন সময়েও যারা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তাদেরকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে দলটি।

সেই বিবেচনায় বিএনপির ভেতরে প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বড় রকমের কোনো চমক চোখে পড়েনি।

তবে প্রধান দুই দলই এখনো তাদের নিজ নিজ জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করেনি। 

বিএনপির ২০ দলীয় জোটে তাদের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী থেকে আসনের চাহিদা কিছুটা বেশি। বাকি দলগুলোর জন্য বেশি আসন ছাড়তে হবে না বলে বিএনপির নেতারা বলেছেন।

হিসেব-নিকেশ:

 ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোকেও বেশি সংখ্যক আসন ছাড়তে হচ্ছে না। দলটির নেতারা জানান, তারা দুই দল (জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট) শরিকদের জন্য ৫০টির মতো আসন ছেড়ে দিতে পারেন।

এ বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রেও প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

২৬ নভেম্বর, সোমবার আওয়ামী লীগ তাদের জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের হিসাব-নিকাশ প্রকাশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তা করেনি। তবে ১৪ দলীয় জোট, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এবং নতুন শরিক অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ভাগাভাগিতে সব মিলেয়ে ৭০টির মতো আসন ছাড়তে চায় আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রেও প্রার্থীর জনপ্রিয়তাকে বড় যোগ্যতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বড় দুই দলই শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে সিদ্ধান্তে এসেছে। তবে কৌশলগত কারণে তারা এখনই সেটা প্রকাশ করতে চাইছে না। অবশ্য বুধবারই মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। সে দিন সব কিছু খোলাসা হবে।

নিউজওয়ান২৪/জেডআই

আরও পড়ুন
রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত