তাবিজ-কবজ ও জাদু আসলেই কী শিরক?
ধর্ম ডেস্ক
ফাইল ফটো
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শয়তানরা কুফরীতে লিপ্ত হয়ে মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০২)।
বস্ততঃ অভিশপ্ত শয়তানরা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার জন্য। হারুত ও মারুত নামক দু‘জন ফেরেশতার কাহিনী বর্ণনা প্রসংঙ্গে আল্লাহ বলেন,
‘তারা উভয়ে কাউকে জাদু শিখানোর আগে এ কথা বলে দিত যে আমরা পরীক্ষাস্বরুপ। কাজেই তোমরা কুফরীতে শামিল হয়ো না। তারপর তাদের কাছ থেকে মানুষেরা এমন জাদু শিখতো, যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ও সংঘাত ঘটানো যায়। অথচ তারা আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারতো না। তারা যে জাদু শিখতো তা তাদের শুধু ক্ষতি করতো, উপকার করতো না। আর এ কথাও জানিয়ে দিত যে, যে ব্যক্তি জাদু আয়ত্ত্ব করবে, কিয়ামতে তার কোনো অংশ পাওনা নেই।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১০২)।
আরো পড়ুন>>> বিশ্বনবী (সা.) এর প্রথম জুমা এবং খুতবা
এ জন্য বহু পথভ্রষ্ট লোককে জাদুর আশ্রয় নিতে দেখা যায়। গোমরাকারী লোকদের ভ্রান্ত ধারণা যে, এটা নিছক হারাম কাজ। মূলতঃ তা যে কুফরী কাজ, তারা তা বুঝতে পারে না। পর পুরুষের সঙ্গে কোনো মহিলার প্রেম-প্রণয় সৃষ্টি, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোর কাজে এমন সব রহস্যপূর্ণ মন্ত্র পাঠ করে জাদু করা হয়, যা অধিকাংশ শিরক ও কুফরীতে পরিপূর্ণ।
জাদুকরের জন্য ইসলামী বিধান মৃত্যুদন্ড। কারণ তা আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কুফরীতে সম্পর্কযুক্ত। রাসূল (সা.) যে সাতটি কবীরাগুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন, তাতে জাদু সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা উচিত এবং দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় জায়গায় ক্ষতিকর এমন কাজের ধারে কাছে যাওয়া উচিত নয়।
হাদিসে আছে, ‘জাদুকরের শাস্তি তরবারীর আঘাতে তাকে খতম করা।’ (তিরমিযী)।
ইবনে আবদা বলেছেন, হজরত ওমর (রা) ইন্তেকালের এক বছর আগে আমাদের কাছে এ মর্মে ফরমান আসে যে,‘জাদুকর স্ত্রী বা পুরুষ যেই হোক তাকে হত্যা কর।’ (বুখারী)।
হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। যে জাদু করে, তার জন্য জাদু করা হয়, আর যে ভবিষ্যদ্বাণী করে, তার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, যে শুভ অথবা অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে বা কাউকে বিশ্বাস করতে উপদেশ দেয়, তারা আমার বান্দা নয়।’
হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘গণক ও জাদুকর উভয়ই কাফের।’ হজরত আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) বলেন. রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরণের লোক জান্নাতে যাবে না। (১) মদ্যপায়ী। (২) রক্ত সম্পর্ক আত্মীয়তা ছিন্নকারী। (৩) জাদুর ওপর আস্থা স্থাপনকারী। (মুসনাদে আহমাদ)।
আমাদের জানা প্রয়োজন যে, ইসলামে তাবিজ ব্যবহারে অনুমতি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবিজ ব্যবহারকে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
(مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ)
‘যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো সে শির্ক করল।’ (মুসনাদে আহমাদ, (৪/১৫৬) ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নম্বর (১/৮০৯)) এ মর্মে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
তাবিজে বিভিন্ন ধরণের অর্থহীন আঁকিবুঁকি, ইবলিশ শয়তান, নমরূদ, ফেরআউন, হামান, কারূন ইত্যাদির নাম লেখা হয়। লেখা হয় বিভিন্ন যাদু ও তেলেসমাতী বিষয়। তাবিজে এসব লেখা থাকলে তা ব্যবহার করা শিরক এতে কোনো সন্দেহ নাই।
তবে পুরো কোরআন, কোরআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া দ্বারা তাবিজ লেখা থাকলে অনেক আলেম তাকে শিরকী তাবিজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন নি। কিন্তু তা শিরকী তাবিজের রাস্তাকে খুলে দিতে পারে- এ দৃষ্টি কোন থেকে হারাম বলেছেন।
তাছাড়া তাবিজে আল্লাহর নাম, আল্লাহর কালাম ইত্যাদি থাকলে তাতে এগুলো অসম্মান হয় এতে কোনো সন্দেহ নাই। কারণ, মানুষ এগুলো গলায়, কোমরে পেঁচিয়ে রাখে যার কারণে, অনেক সময় ঘুমের অবস্থায় সেগুলো তার শরীরের নিচে যায়, তাবিজ পরা অবস্থায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীর নাপাক হয়, এগুলো শরীরে ঝুলা অবস্থায় মানুষ কত শত অশ্লীলতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, টয়লেট ও নাপাক স্থানে যায়। ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কোরআন ও হাদিসের দোয়া ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম।
সর্বোপরি কথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোরআন ও দোয়া লিখে তাবিজ ব্যবহার করেছেন বা কাউকে লিখে তাবিজ দিয়েছেন তার কোনো প্রমাণ নাই। বরং তিনি কোরআনের বিভিন্ন সূরা ও বিভিন্ন দোয়া পড়ে রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) করেছেন, তার প্রিয় দৌহিত্র দ্বয় তথা হাসান ও হুসাইন (রা.)- কে রুকিয়া করেছেন, তাঁর কন্যা ফাতিহা (রা.)-কে করতে বলেছেন এবং তা উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। কোরআনের তাবিজ বৈধ হলে তিনি অবশ্যই নিজে বাস্তবায়ন করতেন এবং সাহাবীদেরকে তার শিক্ষা দিতেন। কিন্তু এমন কোনো তথ্য সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
উল্লেখ্য যে, ‘আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) তার অবুঝ সন্তানদের জন্য তাবিজ লিখে তা লটকিয়ে দিতেন’ বলে তাবিজ ব্যবহারের পক্ষে যে দলীল দেয়া হয় তা মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে দুর্বল। শাইখ আলবানী (রাহ.) হাদিসের এ কথাটুকু যঈফ হওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
মোটকথা, কোরআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া, আল্লাহর নাম ও সিফাত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা তাবিজ দেয়া হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে শিরক। অন্যথায় অনেক আলেমের মতে তা শিরক না হলেও হারাম। (যদিও কোনো কোনো আলেম তা জায়েয বলেছেন। কিন্তু তা দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয় না)।
সুতরাং কোরআন-দোয়া, আল্লাহর নাম ও সিফাত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা লিখিত তাবিজ সর্বসম্মতিক্রমে শিরক কিন্তু এগুলো দ্বারা লিখিত তাবিজ অগ্রাধিকার যোগ্য মতানুসারে হারাম এবং রাসূল (সা.) এর আদর্শ পরিপন্থী কাজ।
নিউজওয়ান২৪.কম/আহনাফ
- যে দোয়ায় গলার কাঁটা নেমে যাবে ইনশাল্লাহ!
- ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল
- দরুদে ইব্রাহিম
- মা-বাবার জন্য দোয়া
- তাহিয়্যাতুল-মাসজিদ
মসজিদে ঢুকেই দু’রাকাত নামাজ... - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি...
- দরুদে ইব্রাহিম
- কোরআন হাদিসের আলোকে জুমা’র দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ঋণ মুক্তির সর্বোত্তম আমল
- ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া ও আমলসমূহ
- পবিত্র কোরআনের তথ্যকণিকা
- জুমার দিনের ৩ আমল
- হযরত আদম আ. এর বিয়ের মহর কত ছিল!
- ফেরেশতা পরিচিতি...
- ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’