ঢাকা, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

টেস্টে বাংলাদেশের পথে যত বাঁধা

খেলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১৫ মার্চ ২০১৭  

১৭ বছর আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় টাইগারদের। শ্রীলংকার বিপক্ষে চলমান সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট দিয়ে অনন্য এক মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর ৯৯টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। পারফরমেন্স আশানুরূপ নয়। মাত্র ৮টি জয়ের বিপরীতে হারের স্বাদ পেয়েছে ৭৬টি।

তবে দেশের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এক বড় অর্জনই। এছাড়া ইতোমধ্যে ওয়ানডেতে দুর্দান্ত এক দল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে টাইগাররা। তারপরও এসব অর্জনের পথে কিছু বাঁধা-বিঘ্ন তো ছিলোই বাংলাদেশের। এরমধ্যে কয়েকটিকে বড় বাঁধা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া
অভিষেকের পর গেল ১৭ বছরে এ পর্যন্ত মাত্র ৯৯টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। বছরে টেস্ট খেলার গড় ৫ দশমিক ৮২। টেস্ট খেলুড়ে বড় বড় দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তারা বছরে গড়ে ২০ থেকে ২২টি টেস্ট খেলে। বছরে বেশি টেস্ট খেলায় এগিয়ে ভারত ও ইংল্যান্ড।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে হিসেবটি আরও স্পষ্ট হবে। ২০০৫ সালের মে মাসে টেস্ট অভিষেক হয় বাংলাদেশের বর্তমান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের। ২০০৬ সালের মার্চে টেস্ট অভিষেক হয় সদ্যই ইংল্যান্ড দলের সাদা পোশাকের অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া অ্যালিস্টার কুকের। অথচ, এখন কুকের টেস্ট ম্যাচ ১৪০টি। আর মুশফিকুরের ৫৩টি।

নিরাপত্তার খোড়া অজুহাত
নিরাপত্তা শংকার খোড়া অজুহাতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফর করেনি অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তথা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও, নিজেদের চিন্তা-ধারায় স্থির ছিলো অসিরা। তাই বাংলাদেশ সফরে আসেনি অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ সফর অস্ট্রেলিয়া বর্জন করার পর ভেস্তে যেতে বসেছিলো ইংল্যান্ডের আগমনও। গুলশানের একটি হোটেলে জঙ্গিদের হামলায় ১৮ বিদেশীসহ ২২জন নিহত হলে ইংল্যান্ড দলের সফর নিয়েও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভিভিআইপি নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে সফরে আসে ইংল্যান্ড। ইংলিশরা পাওয়া নিরাপত্তায় সন্তোষ প্রকাশ করে। এমনকি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে ইংল্যান্ড।

অস্ট্রেলিয়াকে না আনা গেলেও, ইংল্যান্ডকে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে নিরাপত্তা নিয়ে একটি দুঃস্মৃতি বাংলাদেশের ঠিকই রয়েছে। ২০১৩ সালে দেশে বিরোধী দলের রাজনৈতিক বিশৃংখলার কারণে বাংলাদেশ সফরে এসে মাঝপথেই দেশ ছাড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ক্যারিবীয়দের হোটেলের পাশে দু’টি বোমা বিস্ফোরণ হবার পর বাংলাদেশ সফরের মাঝপথেই দেশে ফিরে যায় সফরকারীরা।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মান দ্বিতীয় শ্রেনির মত
বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের প্রতিভা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে অবকাঠামোগত দিক থেকে কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান নিচু প্রকৃতির হওয়ার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিছু কিছু খেলোয়াড়ের পারফরমেন্স ভালো। বাংলাদেশের দু’টি চারদিনের প্রতিযোগিতা আছে কিন্তু ক্যালেন্ডারে নির্দিষ্ট সময়ের অভাব এবং প্রায় ম্যাচগুলো একতরফাভাবে হয়ে থাকে। ব্যাটসম্যানরা বারবার ডাবল-সেঞ্চুরি করলেও, পরের সপ্তাহে টেস্ট ফরম্যাটে খেলতে এসে ব্যর্থ হন। এছাড়া আম্পয়ারদের মান নিয়েও কিছুটা বিতর্ক আছেই।

পেস বোলারের ঘাটতি
বাংলাদেশের উঁচুমানের স্পিনার আছে। সাকিব আল হাসান অভিজ্ঞ ও বিশ্বসেরা স্পিনার। তরুণ মেহেদি হাসান মিরাজ ভবিষ্যত তারকা। কিন্তু টেস্ট জয়ের জন্য দলে পেস বোলারের প্রয়োজন। ২০০১ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে পেয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু তার হাঁটুতে মারাত্মক সব ইনজুরিতে পড়ে সেই স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়েছে বাংলাদেশের। এখন দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদকে ভবিষ্যত তারকা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে নিয়েও ভয়ে আছে ক্রিকেট ভক্তরা। ইনজুরিতে পড়ে যদি সাইডলাইনে চলে যেতে হয় তাদের। ২০১৫ সালে অভিষেকের পর মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছেন ফিজ এবং সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট অভিষেক ঘটা তাসকিনের ফিটনেস নিয়ে তো উদ্বেগ আছেই। দলের পেস গভীরতা বাড়াতে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক হিথ স্ট্রিককে আগে এবং সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি কর্টনি ওয়ালশকে দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব দেয় বোর্ড। তাদের প্রচেষ্টা এখনো চলছে।

নিউজওয়ান২৪.কম

খেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত