ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

জান্নাতি চার নারী

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

যুগে যুগে ইসলাম এসে ফিরিয়ে দিয়েছে নারীদের অধিকার। অশিক্ষা আর কুসংস্কারের নর্দমা থেকে উন্নীত করেছে এক মহোত্তম জাতিতে। 

যখন নারীজাতি ছিল জুলুম-নিপীড়নে পিষ্ট, অধিকার বঞ্চিত, কেবলই ভোগ্যপণ্য তখন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ঘোষণা করেছিলেন নারীজাতির মুক্তির ইশতেহার। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নারীর শিক্ষাগত, পরিবারিক ও সামাজিক অধিকার। 

আর এই নারীদের মধ্য থেকে চারজন জান্নাতি নারীকে রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে, 

أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ : خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ ، وَفَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ ، وَآسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ ، وَمَرْيَمُ ابْنَةُ عِمْرَانَ

‘জান্নাতি নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারীরা হলেন ১. খাদিজা বিনতু খুয়াইলিদ, ২. ফাতিমা বিনতু মুহাম্মাদ, ৩. ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতু মুযাহিম এবং ৪. মারইয়াম ইবনাতু ইমরান।’ (আহমাদ, আলমুসনাদ : ২৯০৩; সহিহ)

(১) খাদিজা বিনতু খুয়াইলিদ:
আবরাহা কর্তৃক কাবা আক্রমণের পনেরো বছর আগে মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন খাদিজা বিনতু খুয়াইলিদ। তার পিতা ছিলেন ফিজার যুদ্ধের সেনাপতি খুয়াইলিদ ইবনু আসাদ। খাদিজা (রা.) ছিলেন আরবের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে বিশ্বস্ত লোক প্রয়োজন ছিল তার। এ দিকে মুহাম্মাদ (সা.) সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার জন্য পুরা আরবে প্রবাদতুল্য হয়ে উঠেছিলেন। খাদিজা (রা.) তাকে তার ব্যবসার পুরো দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। নবীজির চারিত্রিক মাধুর্যতায় মুগ্ধ হয়ে এক পর্যায়ে খাদিজা নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন নবিজিকে। ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তখন নবীজির বয়স ছিল ২৫, আর খাদিজার ৪০ বছর।

চল্লিশ বছর বয়সে মুহাম্মাদ (সা.) নবুয়ত লাভ করেন। প্রথম ওহি লাভের পর তিনি এতটাই ভীত হয়ে পড়েন যে, কাঁপতে কাঁপতে নিজ ঘরে প্রবেশ করে খাদিজাকে বলেন কম্বল দিয়ে গা ঢেকে দিতে। বারবার বলতে থাকেন, ‘আমাকে আবৃত করো, আমাকে আবৃত করো।’ পুরো ঘটনা শুনে খাদিজা (রা.) নবীজির সকল কথা বিশ্বাস করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নওফেলের কাছে যান। নওফেল তাঁকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খাদিজা ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। 

নবীজির দাওয়াতি কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিলেন খাদিজা (রা.)। তার সমস্ত সম্পদ ধীরে ধীরে ব্যয় করে দেন এ কাজে। এমনকি এক পর্যায়ে প্রচণ্ড অর্থকষ্ট শুরু হয়। নবুওয়তের সপ্তম বছর মক্কার কুরাইশরা মুসলিমদের বয়কট করে। তারা সবাই মিলে ‘শিয়াবে আবু তালিব’ নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে। অন্যান্য মুসলিমদের সঙ্গে খাদিজাও সেখানে ছিলেন। প্রায় ৩ বছর মুসলিমদের সেই দুর্গম স্থানে নির্বাসিত কাটাতে হয়েছিল। তখন গাছের পাতা খেয়েও দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। খাদিজা তখন কুরাইশদের ওপর নিজের প্রভাব খাটিয়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিতেন মুসলিমদের। এভাবে তার সমস্ত সম্পদ দিয়ে, মানসিকভাবে এবং শারিরিকভাবেও প্রচণ্ড কষ্ট সহ্য করে দীনের জন্য সারা জীবন কাজ করে গেছেন তিনি। ৬১৭ খ্রিস্টাব্দ মুতাবেক রমজান মাসের ১০ তারিখে ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন মুমিনজননী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা। মক্কার মুয়াল্লায় তার কবর অবস্থিত। 

(২) ফাতিমা বিনতু মুহাম্মাদ:
ফাতিমা (রা.) ছিলেন নবীজির প্রিয়তম কন্যা। তার মা ছিলেন খাদিজা (রা.)। ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মক্কায় সেই নাজুক দিনগুলোতে ছায়া হয়ে ছিলেন পিতার পাশে। হিজরতের সময় ফাতিমাও নবিপরিবারের অন্যদের সঙ্গে হিজরত করেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ খলিফা মহান বীর আলি ইবনু আবু তালিবের স্ত্রী এবং সাইয়িদুনা হাসান ও হুসাইনের মা। তার বদান্যতা, মহানুভবতা আর মমতা ছিল প্রবাদতুল্য। প্রিয় বাবা দয়ার নবীর চরিত্রের প্রতিটি গুণই তার জীবনে প্রতিফলিত হতে দেখা গেছে। তিনি ছিলেন আমানতদারী, লাজুক, নম্র ও সরলমনা। ছিলেন নির্ভীক ও তেজস্বিনী। নবিজির ওফাতের মাস কয়েক পরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং মদিনার বাকিতে তাকে দাফন করা হয়।

(৩) আসিয়া বিনতু মুযাহিম:
আসিয়া বিনতু মুযাহিম ছিলেন জঘন্য আল্লাহদ্রোহী শাসক ফেরাউনের স্ত্রী। আসিয়ার কোলেই লালিত-পালিত হয়েছিলেন নবী মুসা আলাইহিস সালাম। ফিরাউনের রাজপ্রাসাদের যাবতীয় আরাম-আয়েশকে বিসর্জন দিয়ে আসিয়া গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তাওহিদকে। ঈমান এনেছিলেন আল্লাহর ওপর। এতে ফিরাউন তার ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়। আসিয়ার ওপর নেমে আসে জুলুম-নির্যাতন। তাকে জিঞ্জিরে বেঁধে রাখা হয়, বিশাল পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়। পাথরের আঘাতে তার দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়। কিন্তু এতসব অমানবিক নির্যাতনেও আসিয়াকে চুল পরিমাণ টলানো সম্ভব হয়নি তার ঈমান থেকে। 

(৪) মারইয়াম ইবনাতু ইমরান: 
মারইয়াম ইবনাতু ইমরান ছিলেন বাইতুল মুকাদ্দাসের নাসিরা শহরের বাসিন্দা। পিতা-মাতার ইচ্ছানুযায়ী বাইতুল মুকাদ্দাসের খেদমতে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তার পিতার নাম ছিল ইমরান এবং নবী যাকারিয়ার শ্যালিকা বিবি হান্না ছিলেন তার মা। 

মারইয়াম ছিলেন চিরকুমারী। কিন্তু আল্লাহর আদেশে তিনি গর্ভে ধারণ করেছিলেন নবী ঈসা আলাইহিস সালামকে। বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। এমনকি স্বগ্রামও ছেড়ে যেতে হয়। বিপদাপন্ন মারইয়াম কোনো আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে একটি পতিত জমিনে এক খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিলেন এবং নবী ঈসাকে প্রসব করলেন। পাক-পবিত্র হয়ে সন্তান নিয়ে আবারো বাইতুল মুকাদ্দাসে ফিরে গেলেন। কোলের শিশু তার মায়ের নিষ্কলুষতার ঘোষণা দিল। আর ভবিষ্যতে তার নবী হওয়ার ব্যাপারেও জানিয়ে দিল। মারইয়াম আলাইহাস সালাম তাকে গড়ে তুললেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর দক্ষতার শিক্ষা দিয়ে। ত্রিশ বছর বয়সে ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছ থেকে ওহি লাভ করেন এবং ইসলাম প্রচার শুরু করেন।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড