করোনা আতঙ্কের মধ্যেই পঙ্গপালের তাণ্ডব (ভিডিও)
নিউজ ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। মানুষের মাধ্যমে ছড়ানো এ মহামারিতে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পঙ্গপালের তাণ্ডব। ঘাস ফড়িংয়ের সমগোত্রীয় প্রাণী এই পঙ্গপাল।
পবিত্র কোরআন, বাইবেল ও গ্রিসের ইলিয়াডের মতো একাধিক ধর্মগ্রন্থে এসব পতঙ্গের আক্রমণকে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত শাস্তি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। মরু অঞ্চলে জন্ম নেয়া এই পঙ্গপাল আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের পর বর্তমানে পাকিস্তানে আক্রমণ করেছে। আর এতেই আতঙ্কে রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতও।
জেনে নিন মহামারি আকারে আর্বিভূত হওয়া ফসল খেকো এই পতঙ্গ সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য:
বিশ্লেষকদের মতে, পৃথিবীর প্রাণিজগতের মধ্যে অত্যন্ত বিস্ময়কর আচরণ দেখাতে সক্ষম এই পঙ্গপাল। কেননা অন্য কোনো প্রাণী এই পতঙ্গের মতো এত বড় দল নিয়ে নাটকীয়ভাবে দ্রুত আবির্ভূত হয় না। আর্কিডিডি পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ এই প্রজাতিটি মূলত বিশাল বিশাল ঝাঁক বেঁধে একত্রে আক্রমণ সাজায়। এতেই মাঠের পর মাঠ ফসল উজাড় হয়ে যায় মুহূর্তে। প্রায় ১০ লক্ষাধিক পতঙ্গের একটি ঝাঁক প্রতিদিন ৩৫ হাজার মানুষের খাদ্য সাবাড় করতে সক্ষম।
ঘাস ফড়িং এবং পঙ্গপালের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। কেননা ঘাস ফড়িং একাকী বসবাস করে আর পঙ্গপাল থাকে দলে। একক পঙ্গপালকে ইংরেজিতে বলা হয় লুকাস (Locust) ও তাদের ঝাঁককে বলা হয় লুকাস সোর্ম (Locust Swarm)।
একা থাকাকালীন পঙ্গপাল কখনোই কৃষি পণ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। যদিও বিশেষ বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক পরিবেশে পতঙ্গটির আচরণগত বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মূলত তখনই তারা মারাত্মক ক্ষতিকর পতঙ্গে পরিণত হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, পঙ্গপালের মস্তিষ্কের বিশেষ পরিবর্তনের কারণে তারা অতি দ্রুত বহুসংখ্যক সন্তান জন্ম দিতে পারে। এর মাধ্যমেই তারা সামান্য থেকে ধীরে ধীরে অতি বিশাল একটি দল গড়ে তোলে। পঙ্গপালের সংখ্যা অসম্ভব রকমের বৃদ্ধি পেলেই এদের মধ্যে উড়ে বেড়ানোর প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়।
তখন দলটি খাদ্যের গন্ধ নিয়ে নতুন নতুন খাবারের সন্ধান করে। যতক্ষণ কোনো অঞ্চলে খাদ্য শস্য আছে ততক্ষণই এরা সেখানে অবস্থান করে। কোনো একটি এলাকার খাদ্য শস্য শেষ হয়ে গেলে পতঙ্গগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে অতি দ্রুত অঞ্চলটি ত্যাগ করে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, পোকাগুলোর উপদ্রব ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। তাছাড়া মাটিতে পঙ্গপালের ডিম দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। এমনকি ২০ বছর পরেও পতঙ্গটির ডিম থেকে বাচ্চা হতে পারে। যদিও বাচ্চাগুলো শুরুতে উড়তে পারে না। অল্প বয়সে এগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে চলাচল করে। সাধারণত একটি বাচ্চা পঙ্গপালের পূর্ণ বয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় ৪ সপ্তাহ। এ সময় তাদের শারীরিক গঠন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন নিজের ওজনের প্রায় সমান খাদ্য গ্রহণ করে। আর পোকাগুলোর একটি ঝাঁক অল্প সময়ে হাজার হাজার টন খাদ্য শস্য খেয়ে ফেলতে পারে। এসব পতঙ্গ প্রতিনিয়ত দল বেঁধে সামনের দিকে এগোতে থাকে।
যাতায়াতের সময় পঙ্গপাল বাতাসের ওপর নির্ভর থেকে নিজের শরীরের শক্তি সঞ্চয় করে। মূলত বাতাসের গতিপথ অনুসরণের মাধ্যমে এগিয়ে চলে বলেই বাতাস যে দিকে যায় পঙ্গপালও সে দিকে আক্রমণ চালায়।
যাত্রাপথে এক একটি পঙ্গপালের দল নতুন নতুন ঝাঁকের সঙ্গে মিলিত হয় এবং কয়েকটি বড় বড় ঝাঁক একত্রিত হয়ে আরও অতিকায় ঝাঁকের সৃষ্টি করে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এসব অতিকায় ঝাঁকে কয়েক বিলিয়নের অধিক পঙ্গপাল থাকতে পারে। অতিবৃহৎ একটি ঝাঁক প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। যেখানে প্রতি কিলোমিটারের ঝাঁকে ৪ থেকে ৮ কোটি পতঙ্গের অবস্থান।
পঙ্গপালের দল তাদের চলার পথে খাবার উপযোগী সবকিছুকেই সাবাড় করে যায়। পতঙ্গটির আক্রমণে যে কোনো অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় মারাত্মক ধস নামতে পারে। এসব পোকা কোনো অঞ্চলে আক্রমণ করলে সেখানকার কোনো গাছের পাতাও অবশিষ্ট থাকে না।
গত বছর হর্ণ অব আফ্রিকার দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় চারশ গুণ অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এর ফলে ২০১৯ সালের শেষ এবং ২০২০ সালের শুরুর দিকে পৃথিবীর একাধিক অঞ্চলে পঙ্গপালের ব্যাপক বংশ বৃদ্ধি দেখা দেয়।
এ সময়ের মধ্যে সোমালিয়া এবং ইথিওপিয়ার ১২ হাজার হেক্টর ও কেনিয়ার প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করেছে ঘাস ফড়িংয়ের সমগোত্রীয় এই প্রাণী।
পঙ্গপাল সেখানকার মরুভূমিতে জন্ম নেওয়ার পর বর্তমানে কেনিয়া, ইরিত্রিয়া, জিবুতি এবং উগান্ডাসহ নিকটবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। পতঙ্গটির আক্রান্ত অঞ্চলে হেলিকপ্টার ও বিমান থেকে কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো রকমের প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
তাছাড়া প্রায় একই সময়ের মধ্যে মরুভূমির পঙ্গপাল এশিয়ার দেশ পাকিস্তানেও আক্রমণ করে। আর এতেই আতঙ্কে রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত।
১৯৯৩ সালে ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছিল পাকিস্তান। যার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মার্চে দেশটিতে আবারো পতঙ্গটি আঘাত হানে। তখন পাঞ্জাবের দক্ষিণাঞ্চল, খাইবার পাখতোনখোয়া এবং সিন্ধু অঞ্চলের প্রায় ৯ লক্ষাধিক একর জমির ফসল নষ্ট হয়। মূলত এর পরপরই দেশজুড়ে পঙ্গপালের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি পাকিস্তানে আক্রমণকারী পঙ্গপাল ভারতেও ঢুকতে শুরু করেছে।
বিভিন্ন গবেষণার পর জাতিসংঘ দাবি করছে, এখনই পোকাগুলোকে ঠেকানো না গেলে চলতি বছরের জুনের মাধ্যমে এদের সংখ্যা প্রায় পাঁচশ গুণ বৃদ্ধি পাবে। তখন আফ্রিকার অন্তত ৩০ দেশে এই পতঙ্গ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তখন বিশ্বের ২০ শতাংশ ফসলি জমি এই পঙ্গপাল দ্বারা আক্রান্ত হবে। এর ফলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগের এক ভাগ লোকের বেঁচে থাকার মতো খাবারের সংকট দেখা দেবে।
পঙ্গপালের তাণ্ডব>>> দেখুন ভিডিও <<<
নিউজওযান২৪.কম/এমজেড
- পাকিস্তানি পরমাণু হামলা ঠেকাতে পারবে না ভারত: রুশ বিশেষজ্ঞ
- ইমরান খানের স্ত্রী শুকরের মাংস পাকান!
- কুয়েতে সীমিত আকারে বাংলাদেশি পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের অনুমোদন
- অভিযানে পিস্তল জ্যাম, দারোগা মুখে বললেন ‘ঠা ঠা’! (ভিডিও)
- ‘বিশেষ অঙ্গ’ বড় হওয়ায় আদালতে প্রেমিকার অভিযোগ!
- কে হবে শ্রেষ্ঠ ‘গাই সুন্দরী’!
- এবার সৌদিতে প্রকাশ্যে নারী নিগ্রহ
- থাই-উপসাগরের তলায় শুয়ে আছে ফ্লাইটএমএইচ৩৭০!
- যে তিন কারণে `মনহুশ` রাহুল!
- ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হলেন ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্র
- নেপালে পাহাড়ি এলাকায় কলেজবাস খাদে, নিহত ২১
- ‘সিমেন্টের ব্যাগ’-এ বিয়ের পোশাক!
- শান্তিমিশনে যৌন হয়রানি: ২ ভারতীয় সেনার শাস্তি
- মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসছে!
- পাপোষে হিন্দু দেবদেবী ও কোরানের ছবি: বিতর্কে অ্যামাজন