ওজুতে যে ফজিলত
নিউজ ডেস্ক

ফাইল ছবি
প্রতিটি মুমিনের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। ঈমানের পরেই এই ফরজ বিধানের অবস্থান।
একজন মানুষ ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম প্রধানতম কাজ হলো দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। এই নামাজের জন্য প্রয়োজন হয় পবিত্রতার। এই পবিত্রতা অর্জিত হয় দুইভাবে। (১) ওজু। (২) গোসল।
ওজুতে রয়েছে ভিন্ন ফজিলত। কাল কিয়ামতের কঠিন ময়দানে ওজুর অঙ্গগুলো আলো জ্বলমল করতে থাকবে। অন্য নবীর উম্মতেরা আলো জ্বলমল দেখে তারা চিনতে পারবে এরা শেষ নবী, নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজি উম্মত। হাদীসে রয়েছে,
قال له رجل يا رسول الله كيف تعرف أمتك من بين الأمم فيما بين نوح إلى أمتك قال هم غر محجلون من أثر الوضوء ليس أحد كذلك غيرهم وأعرفهم أنهم يؤتون كتبهم بأيمانهم وأعرفهم يسعى بين أيديهم ذريتهم، رواه احمد
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞাস করলো হে রাসূলাল্লাহ! হজরত নুহ আলাইহিস সালাম থেকে শুর করে এই পর্যন্ত এতো অসংখ্য উম্মতের মাঝে আপনার উম্মতকে (কিয়ামতের দিন) কিভাবে চিনতে পারবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ওজুর কারণে তাদের হাত পা চমকাতে থাকবে। অন্য কোনো নবীর উম্মত এরূপ হবে না। আমি তাদেরকে চিনব এজন্য যে, তাদের আমলনামা (সর্বপ্রথম) তাদের ডান হাতে দেওয়া হবে। এজন্যও যে, তাদের সামনে তাদের সন্তানেরা দৌড়াতে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ, খন্ড: ৩৫ হাদিস: ৬৫)।
হাত পা উজ্জ্বল হওয়ার ব্যাপারে হজরত নোয়াইম মুজমির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عَنْ نُعَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّهُ رَأَى أَبَا هُرَيْرَةَ يَتَوَضَّأُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ حَتَّى كَادَ يَبْلُغُ الْمَنْكِبَيْنِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ حَتَّى رَفَعَ إِلَى السَّاقَيْنِ ثُمَّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ : إِنَّ أُمَّتِى يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ، رواه البخاري و مسلم
অর্থ : নিশ্চয় কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ঢাকা হবে যে, ওজুর প্রভাবে তাদের হাত পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা রাখে সে যেন তা করে নেয়।’ (বুখারি, হাদীস: ১৩৮, মুসলিম খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ১৪৯ হাদীস: ৬০৯)।
হজরত ওসমান গনী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ، رواه مسلم
অর্থ : যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওজু করে, তার শরীর থেকে তার গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও (গুনাহসমূহ) বের হয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।
ওজুর বদৌলতে গুনাহ মাফ হওয়ার আরো কয়েকটি হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে হজরত আমর ইবনে আবাসা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
عمرو بن عبسة يقول قلت يا رسول الله كيف الوضوء قال أما الوضوء فإنك إذا توضأت فغسلت كفيك فأنقيتهما خرجت خطاياك من بين أظفارك وأنا ملك فإذا مضمضت قال واستنشقت منخريك وغسلت وجهك ويديك إلى المرفقين ومسحت برأسك وغسلت رجليك إلى الكعبين اغتسلت من عامة خطاياك فإن أنت وضعت وجهك لله خرجت من خطاياك كيوم ولدتك أمك، رواه نسائي
অর্থ : তিনি বলেন- আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অজুর মধ্যে ফায়দা কী? নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি ওজু করবে ও দুই হাতের কব্জি ভালোভাবে ধৌত করবে, তখন গুনাহসমূহ আঙ্গুলের অগ্রভাগ ও নখ দিয়ে বের হয়ে যাবে। এরপর যখন তুমি কুলি করবে, নাকে পানি দিয়ে দু’নাকের ছিদ্র পরিস্কার করবে, মুখ ও হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে, তখন তুমি যেন তোমার গোনাহ সমূহকে ধুয়ে পরিস্কার করে দিলে। এরপর যখন তুমি তোমার চেহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে জমিনে রাখবে (নামাজ আদায় করবে) তখন তুমি এমনভাবে গুনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যে দিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছে’ (নাসাঈ শরিফ, হাদিস নং ১৪৭।)
সুবহানাল্লাহ, একটি ওজুর বিনিময়ে নিষ্পাপ জীবন লাভ করা! মহাবিস্ময়কর সংবাদ। ওজু মানুষের সম্মানকে বৃদ্ধি করে।
হজরত বিলালে হাবশী রাদিআল্লাহু আনহু এর আমল থেকে জানা যায়। হাদিসটি আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
عن أبي هريرة رضي الله عنه : أن النبي صلى الله عليه و سلم قال لبلال عند صلاة الفجر ( يا بلال حدثني بأرجى عمل عملته في الإسلام فإني سمعت دف نعليك بين يدي في الجنة ) . قال ما عملت عملا أرجى عندي أني لم أتطهر طهورا في ساعة ليل أو نهار إلا صليت بذلك الطهور ما كتب لي أن أصلي
অর্থ : একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজের সময় হজরত বিলাল রাদিআল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাস করলেন হে বিলাল! তুমি ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক গ্ররুত্বপুর্ণ যে আমল করেছে তার কথা আমাকে বল। কেননা জান্নাতে আমি তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, দিন বা রাতে যখনই আমি অজু করি তখনই আমি সামাথ্য অনুযায়ী (তাহিয়্যাতুল ওজু ) নামাজ পড়ি। এছাড়া আর তেমন কিছুই করি না। (বুখারি: খণ্ড ০১ পৃষ্ঠা ৩৮৬ হাদিস নং ১০৯৮)। এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম ওজুর পর সামার্থ অনুযায়ী নামাজ আদায় করা। আর এর ফজিলত কি তাতো উপরের হাদিস থেকে জানা যায়।
ওজুর যদি কোনো ফজিলত না-ও থাকতো তাহলে মুমিন বান্দার প্রয়োজন ছিল ওযজু করা। কারণ নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন শর্ত। ওজু ও গোসল ব্যতীত পবিত্র হওয়া সম্ভব নয়। নামাজ যেমন বেহেস্তের চাবি, তেমনি ওজুও নামাজের চাবি। এটি আমার কথা নয়, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। তিনি বলেন,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلاَةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُورُ
অর্থ : হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বেহেস্তের চাবি নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো ওযু।’ (মুসনাদে আহমদ খণ্ড ৩১ পৃষ্ঠা ৭৩ হাদিস নং ১৫০৩৯)।
এছাড়া মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম হলো নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা। যার হুকুম পবিত্র কোরআনুল কারিমে রয়েছে। ঘোষণা হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ
অর্থ : হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৬।)
আবার ওজু ছাড়া নামাজ হবে না। তাই তার গুরুত্ব ফরজ ইবাদতের মতোই।
عن ابن عمر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : لا اِيْمَانَ لِمَنْ لَا أمَانَةَ لَهُ وَلَا صَلَاةَ لِمَنْ لَا طَهُوْرَلَهُ وَلَا دِيْنَ لِمَنْ لَا صَلَاةَ لَه إنَّمَا مَوْضَعُ الصَّلاَةِ مِنَ الدِّيْنَ كَمَوْضَعِ الرَّأسِ مِنَ الْجَسَدِ رواه الترغيب
অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার আমানত ঠিক নেই তার ঈমানও (পরিপূর্ণ) নেই। যার ওজু নেই তার নামাজও আদায় হয় নাই। আর যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে না তার কোনো দ্বীন নেই। আর দ্বীনের মধ্যে নামাজের স্থান এমন যেমন শরীরের মধ্যে মাথার স্থান। অর্থাৎ মাথা ব্যতীত যেমন কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না, তদ্রুপ নামাজ ব্যতীত দ্বীনও বাকি থাকতে পারে না।’ (তারগিব খণ্ড ০১ হাদিস নং ১৪৬)।
হজরত আবু মালিহ তার পিতা (উসামা রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
عَنْ أَبِي مَلِيحٍ عن ابيه قَاَلَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلي الله عليه وسلم : لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلاَةَ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةَ مِنْ غُلُوِلٍ رواه النسائي
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ব্যতীত নামাজ কবুল করেন না। এবং অবৈধ সম্পদের সাদকাও কবুল করেবেন না।’ (নাসাই হাদিস নং ০৬)।
ওজুর বিরাট আরেকটি ফজিলত হলো ওজুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করা।
عن ابن عمر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم :مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ - أَوْ فَيُسْبِغُ - الْوُضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وحده لا شريك له واشهد أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
অর্থাৎ হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সকল নিয়ম কানুনসহ উত্তমরূপে অজু করবে। এরপর أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وحده لا شريك له واشهد أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ (কালিাময়ে শাহাদত) পড়বে, তার জন্য বেহেস্তের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম খণ্ড ০১, হাদিস: ১৪৪)।
উল্লেখিত পবিত্র কোরআন-হাদিসের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওজু সহজ একটি কাজ কিন্তু এর গুরুত্ব ও ফজিলত অশেষ। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার সকল মুসলিম উম্মাকে এই ওজুর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস
- যে দোয়ায় গলার কাঁটা নেমে যাবে ইনশাল্লাহ!
- ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল
- দরুদে ইব্রাহিম
- মা-বাবার জন্য দোয়া
- তাহিয়্যাতুল-মাসজিদ
মসজিদে ঢুকেই দু’রাকাত নামাজ... - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি...
- দরুদে ইব্রাহিম
- কোরআন হাদিসের আলোকে জুমা’র দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ঋণ মুক্তির সর্বোত্তম আমল
- ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া ও আমলসমূহ
- পবিত্র কোরআনের তথ্যকণিকা
- জুমার দিনের ৩ আমল
- হযরত আদম আ. এর বিয়ের মহর কত ছিল!
- ফেরেশতা পরিচিতি...
- ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’