ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

ইমেইল করেছিলাম, পাত্তা দেয়নি কেউই...

সোহেল রহমান, পর্তুগাল থেকে 

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৫ অক্টোবর ২০১৮  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কল্পনাদি প্রায় ছয় বছর আগে নেপাল থেকে পর্তুগাল এসেছিলেন। অভিনয় ও গান করতেন নেপালে। পর্তুগাল এসে তাঁর জামাইয়ের সাথে মাঠে কৃষি কাজ করে জীবন চালান। ফল পাড়েন। পাশাপাশি নেপালে রেখে আসা তাঁদের দুই কিশোর বাচ্চার জন্য অপেক্ষা করেন, কবে তাঁদের ইউরোপ আনবেন। 

২০১৪ সালে ব্রাসেলস থেকে ফিরে আমি গিয়েছিলাম পর্তুগালের দক্ষিণে অ্যাটলান্টিকের পাড়ের আলেন্তেজুর ছোট শহর জাম্বুজিরায়। ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের ফল পাড়িয়ে মানুষদের জীবন নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম করব। কিন্তু বেশিরভাগই অস্বস্তিবোধ করেন। ক্যামেরায় তাঁদের এই কর্মযজ্ঞ ধারণ করতে ঘোর আপত্তি জানান। এ সময় এক ভোরে কল্পনাদির সাথে দেখা। ফলের ফার্মে। 

হাতে ক্যামেরা দেখায় আমাকে বলে উঠলেন, "কি ভাই, আমার ছবি তুলেন না কেন! আমি একসময় নাটক সিনেমায় অভিনয় করতাম। গান করতাম।" আমি ছবি তুলি। কথা বলি। তারপর দিদির সাথে আলাপ জমে। বাসায় নিয়ে জামাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। জীবনের গল্প বলেন। সে গল্প সিনেমায় তুলে ধরতে আমার লম্বা সময় লাগে। নাহ, ধারা বর্ণনা বা টিভি রিপোর্টাজের মত কোন তথ্যচিত্র না। ইংরেজিতে আমরা ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারি ফিল্ম বলি। বাংলায় এর যথার্থ শব্দ খুঁজে পাইনি। তথ্যচিত্র বা প্রামাণ্যচিত্র অবশ্যই নয়। 
এটা চলচ্চিত্র। ইংরেজি নাম- "সংস ফ্রম এনাদার ইডেন"। 

বাংলাদেশে থাকতে এটা দেখানোর ইচ্ছে ছিল খুব। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিকে -যারা ফিল্ম পড়ায়, ইমেইল করেছিলাম। পাত্তা দেয়নি কেউই।

ওই সময় দেশে থাকতেই ইউনিভার্সিটি অফ লিসবন আমাকে ইমেইল করে। আমার এক প্রফেসর তাঁদেরকে আমার কাজ সম্পর্কে জানান। তাঁরা তাঁদের ইন্টারন্যাশনাল সেমিনারে আমাকে আমন্ত্রণ জানায় আমার ফিল্মটি দেখাতে। ফিল্ম নিয়ে কথা বলতে। 

"সংস ফ্রম এনাদার ইডেন" নিয়ে ফেস্টিভ্যাল কেন্দ্রিক অন্য চিন্তা আছে। কিন্তু পিএইচডি শুরুর পর থেকে ইউনিভার্সিটি ও একাদেমিক দিকটা আমার জন্য অনেক গুরুত্ববহ হয়ে উঠে।

১২ অক্টোবর লিসবন ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল সেমিনারটায় থাকবেন আমেরিকা, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল ও নেপালের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রিসার্চার, ইউরোপীয় কমিশন, ইউনাইটেড নেশন ও পর্তুগালের ফরেন মিনিস্ট্রির বিভিন্ন কর্মকর্তা। থাকবেন ইউরোপিয়ান কমিশনের অধীনে মাস্টার্স করতে আসা বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। আর এই সেমিনারটায় একমাত্র যে ডকুমেন্টারি ফিল্মটি দেখানো হবে, সেটি এই অধমের। ফিল্ম প্রদর্শন শেষে প্রেজেন্টেশন আছে। কথা হবে। তারপর এই ফিল্ম নিয়ে দৌড়তে হবে দুনিয়ার আরো কিছু জায়গায়। সে পর্যন্ত সবাই দোয়া করবেন প্লিজ।

সকালে আম্মা তাঁর নাতি-নাতনিদের কাছে জানতে চাইবে, "আমার ছেলে ফেসবুকে কিছু লিখেছে? একটু পড়ে শোনাও তো! লিসবনে এখন রাত তিনটা বাজলেও, নিজের ঢোল নিজে না পিটিয়ে- এই খবর না লিখে তাই ঘুমাতে যেতে মন চাইল না।

[ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত]

নিউজওয়ান২৪/এমএস

প্রবাসী দুনিয়া বিভাগের সর্বাধিক পঠিত