আরাফা দিবস ও রোজার ফজিলত
ধর্ম ডেস্ক
ছবি সংগৃহীত
জিলহজ মাসের নয় তারিখকে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফা দিবস বলে। এক আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিবস আরাফা দিবস।
আল্লাহ তায়ালা, আরাফা দিবসে, তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন কোনো দিবস নেই যেখানে আল্লাহ তায়ালা আরাফা দিবস থেকে বেশি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই নিকটবর্তী হন, ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, বলেন—ওরা কী চায়?[1] অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তায়ালা আরাফায় অবস্থানরতদেরকে নিয়ে আকাশবাসীদের সঙ্গে গর্ব করেন। তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা আমার কাছে এসেছে এলোথেলো ও ধুলায় আবৃত অবস্থায়।[2]
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরাফার ময়দানে সূর্যাস্তের পূর্বে বেলালকে (রা.) নির্দেশ দিলেন মানুষদেরকে চুপ করাতে। বেলাল বললেন, আপনারা রাসূলুল্লাহ (রা.) এর জন্য নীরবতা অবলম্বন করুন। জনতা নীরব হলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে লোকসকল! একটু পূর্বে জিবরাইল আমার কাছে এসেছেন। তিনি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আহলে আরাফা ও আহলে মুযদালেফার জন্য আমার কাছে সালাম পৌঁছিয়েছেন, ও তাদের অন্যায়ের জিম্মাদারি নিয়েছেন। ওমর দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! এটা কি শুধুই আমাদের জন্য? তিনি বললেন, এটা তোমাদের জন্য ও তোমাদের পর কেয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে তাদের জন্য। ওমর (রা.) বললেন, আল্লাহর অনুকম্পা অঢেল ও উত্তম।[3]
আরাফা দিবস মুসলমানদের ওপর আল্লাহর দ্বীন ও নেয়ামত পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিবস। তারিক ইবনে শিহাব থেকে বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ইহুদিরা হজরত ওমর (সা.)-কে বলল, আপনারা একটি আয়াত পড়েন, যদি তা আমাদের ওপর নাাজল হতো তাহলে এ দিবসে আমরা উৎসব পালন করতাম। হজরত ওমর (রা.) বললেন, আমি অবশ্যই জানি কী উদ্দেশ্যে ও কোথায় তা নাজিল হয়েছে, এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) কোথায় ছিলেন যখন তা নাজিল হলো। (তা ছিল) আরাফা দিবস। আর আমরা-আল্লাহর কসম- আরাফার ময়দানে। সুফয়ান বলেন, দিনটি জুমাবার ছিল কী-না, আমার সন্দেহ আছে। (আয়াতটি ছিল : الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ - আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম)। [4][5]
আরাফা দিবসের রোজা, পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।[6] তবে এ রোজা হাজিদের জন্য নয়, বরং যারা হজ করতে আসেনি তাদের জন্য। হাজিদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় আরাফা দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন। [7] ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.) এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আরাফার ময়দানে আরাফা দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। [8]
সূত্র:বাংলা হাদিস
[1] - عن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبدا من النار من يوم عرفة ، وإنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائكة فيقول : ما أراد هؤلاء ؟ (মুসলিম : হাদিস নং ১৩৪৮)
[2] - عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله يباهي بأهل عرفات أهل السماء ، فيقول لهم انظروا إلي عبادي جاؤوني شعثا غبرا (মুসনাদে আহমদ : ২/২২৪)
[3] -عن أنس رضي الله عنه قال : وقف النبي صلى الله عليه وسلم بعرفات وقد كانت الشمس تغرب ، فقال : يا بلال أنصت لي الناس ، فقام بلال ، فقال : أنصتوا لرسول الله صلى الله عليه وسلم ، فصمت الناس . فقال : يا معشر الناس أتاني جبريل آنفا فأقرأني من ربي السلام لأهل عرفات وأهل المشعر الحرام وضمن عنهم التبعات ، قام عمر بن الخطاب ুرضي الله عنه- فقال : يارسول الله هذا لنا خاصة قال : هذا لكم ولمن أتى بعدكم إلى يوم القيامة ، فقال عمربن الخطاب : كثر خير الله وطاب؟
(আলমাতজার আররাবেহ : ২৩৬ ; ইবনে মুবারক হাদিসটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন)
[4] - বোখারি : হাদিস নং ৪৬০৬
[5] - আরাফা দিবসে দ্বীন পরিপূর্ণ করে দেয়ার অর্থ কী? এর ব্যাখ্যায় ইবনে রজব বলেন, ওই দিবসে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেয়া কয়েকভাবে ঘটেছে। এক. মুসলমানরা, হজ্জ ফরয হওয়ার পর, নিরেট ইসলামী আবহে ইতোপূর্বে হজ্জ পালন করেননি। অধিকাংশ ওলামা এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। দুই. আল্লাহ পাক হজ্জকে (এই দিনে) ইব্রাহীমী ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনেন, এবং শিরক ও মুশরিকদেরকে বিচ্ছিন্ন করেন। অতঃপর আরাফার ওই স্থানে তাদের কেউই মুসলমানদের সাথে মিশ্রিত হয়নি।
নেয়ামতের পরিপূর্ণতা ঘটেছে আল্লাহর ক্ষমা-মার্জনা লাভের মাধ্যমে। কেননা আল্লাহর ক্ষমা ব্যতীত নেয়ামত পরিপূর্ণ হয়না। এর উদাহরণ, আল্লাহ তা’লা তাঁর নবীকে বলেন, لِيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا
যাতে আল্লাহ ক্ষমা করেন তোমার অতীতের ও ভবিষ্যতের ত্রুটি, ও পূর্ণ করে দেন তোমার ওপর তাঁর নেয়ামত। আর প্রদর্শন করেন তোমাকে সরল পথ (সূরা আল ফাতহ: ২)
[6] - عن أبي قتادة أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم عرفة ؟ فقال : يكفر السنة الماضية والباقية (মুসলিম : ১১৬৩)
[7] - দেখুন : মুসলিম : হাদিস নং ১১২৩-১১২৩
[8] - عن عكرمة قال : دخلت على أبي هريرة في بيته ، فسألته عن صوم يوم عرفة بعرفات ؟ فقال : نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن صوم يوم عرفة بعرفات (মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪, আহমদ শাকের বলেছেন : হাদিসটির সনদ শুদ্ধ)
নিউজওয়া২৪.কম/আহনাফ
- যে দোয়ায় গলার কাঁটা নেমে যাবে ইনশাল্লাহ!
- ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল
- দরুদে ইব্রাহিম
- মা-বাবার জন্য দোয়া
- তাহিয়্যাতুল-মাসজিদ
মসজিদে ঢুকেই দু’রাকাত নামাজ... - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি...
- দরুদে ইব্রাহিম
- কোরআন হাদিসের আলোকে জুমা’র দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ঋণ মুক্তির সর্বোত্তম আমল
- ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া ও আমলসমূহ
- পবিত্র কোরআনের তথ্যকণিকা
- জুমার দিনের ৩ আমল
- হযরত আদম আ. এর বিয়ের মহর কত ছিল!
- ফেরেশতা পরিচিতি...
- ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’