ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

অনলাইনেই বিয়ের পাত্রপাত্রী, কতোটা নির্ভরযোগ্য?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩০, ৩১ অক্টোবর ২০১৮  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ছেলে অরিত্রকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত তার বাবা-মা সহ পরিবারের অনেকেই। কারণ তেমন কিছু না, ছেলের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু উপযুক্ত পাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে ছেলেকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েও তাকে রাজি করাতে পারেনি তারা। অবশেষে ছেলে যখন রাজি হলো, পাত্রী পাওয়া নিয়ে পড়তে হলো বিপাকে। এদিকে ছেলের পছন্দের কেউ নেই। আত্মীয়স্বজন বিভিন্ন মেয়ের খোঁজ দিলেও দেখেশুনে পুরোপুরি পছন্দ হয়নি কাউকেই। অরিত্রর এক বন্ধু তাকে হঠাৎ এক বুদ্ধি দিয়ে বসলো। একটি মেট্রিমোনিয়াল সাইটের লিংক দিয়ে বললো, এখানেই মিলে যাবে কাঙ্ক্ষিত পছন্দের পাত্রী। অরিত্রর বাবা-মা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে তারাও এখানে পাত্রী খোঁজায় মন দিলেন। 

অনলাইনে মেট্রিমোনিয়াল সাইটের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। যদিও সে বিষয়ে আমরা এখনো ততটা অভ্যস্ত হতে পারিনি। প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবন বদলেছে, পুরো পৃথিবীটাই আমাদের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা এখন একটি মাত্র ক্লিক করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কোথায় ঘুরবো, কোথায় থাকবো, কোন পণ্য কিনবো, কোথায় কোন পেমেন্ট করতে হবে- এসবই এখন অনলাইনে বসেই করা এখন আড্ডা আর সম্পর্কও চলছে অনলাইনে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে রয়েছে চ্যাটিং এর সুবিধা। এসবের মাঝে বিয়েশাদিকেও আর বাদ রাখা হয়নি। সেই তাগিদ থেকেই এসেছে বিভিন্ন অনলাইন ডেটিং সাইট বা মেট্রিমোনিয়াল সাইট।

সম্প্রতি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাবিশ্বে অন্তত ২০ কোটি মানুষ প্রতি মাসে ডিজিটাল ডেটিং করে। যুক্তরাষ্ট্রে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বিয়ে হয় ডেটিং সাইটের মাধ্যমে। চীন ও জার্মানিতেও ডেটিং সাইটে বিয়ে বা প্রেম জমজমাট। বাংলাদেশ, ভারতেও রয়েছে মেট্রিমোনিয়াল সাইট। বিশ্বে অনলাইন ডেটিং ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। প্রতিযোগিতা আর দুটোই বাড়ছে। ফেসবুকও এই বাজারে প্রবেশ করেছে। অনেক ডেটিং সাইট ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তাদের লিংক শেয়ার করছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ডেটিং সাইট ‘টিন্ডার’। এটির জনপ্রিয়তা বেশি। টিন্ডারের পাশাপাশি ডেটিং অ্যাপ ‘বাম্বল’ও বেশ জনপ্রিয়। 

চীনের অন্যতম জনপ্রিয় ডেটিং সাইট ‘তানতান’। ইউ ওয়াং ২০১৫ সালে এটি চালু করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তানতানের ব্যবহারকারী ছিল দুই কোটি। এই সাইট ব্যবহার করে এক কোটি মানুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও সত্যি।

এই ডেটিং সাইটগুলো দিন দিন তাদের বৈচিত্র্য বাড়াচ্ছে। এমনকি নারীদের জন্যও আলাদা ডেটিং সাইট রয়েছে। এমনকি মুসলিম, খ্রিষ্টান, ট্রাম্প সমর্থক, ভিগানদের জন্যও রয়েছে আলাদা সাইট। বাইকারকিস, ফার্মাসঅনলি, আগলি বাগ বল—এ রকম কিছু ডেটিং সাইট। 

এই সাইটগুলোতে রয়েছে অসংখ্য পাত্রপাত্রীর প্রোফাইল। রেজিস্ট্রেশন থাকলে যেকোনো পাত্র বা পাত্রীর বয়স, উচ্চতা, ওজন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পছন্দ, অপছন্দ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে পাত্র বা পাত্রী নিজের পছন্দমতো জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারেন। তবে তথ্যের যথার্থতা ঠিক না রাখলে মেট্রিমোনিয়াল সাইটগুলো গ্রহণযোগ্যতা হারাতেই পারে।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, এর বিশ্বাসযোগ্যতা কতোখানি। মানে অ্যাপ বা সাইট আমাদের যে সঙ্গী খুঁজে দিচ্ছে সেটা আমাদের পরবর্তী জীবনের জন্য কতোটা স্থায়ী হচ্ছে, আমরা এটাকে কতোটা বিশ্বাস করতে পারি সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসছে। পশ্চিমা আধুনিক দেশগুলো এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই সাইটগুলো জনপ্রিয়তা পেলেও আমাদের দেশে এর ব্যাপ্তি এখনো কম। 

সঙ্গী বেছে নেওয়াটা সারাজীবনের একটি প্রশ্ন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সেটা কীভাবে বেছে নেবেন সেটা আপনার পছন্দ। সঙ্গী আজীবন বিশ্বস্ত থাকবে কি না, সেটা সঙ্গী বাছাইয়ের সময়ে কারো পক্ষে তো জানা সম্ভব নয়। সারাজীবন একসঙ্গে থাকা আর বিশ্বাস ধরে রাখা- দুটোই নির্ভর করে আপনাদের মানসিকতার ওপর, পরিস্থিতির ওপর। 

তবে যোগাযোগের আগে খেয়াল রাখবেন যে সাইটে আপনি ভিজিট করছেন সেটা কতোটা বিশ্বাসযোগ্য। কাউকে পছন্দ হলে তার বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজ করাটা অবশ্যই আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ব্যস্ততার যুগে যোগাযোগটা ভার্চুয়ালকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেছে। আগের সেই ঘটকালিও কমে গেছে। মেট্রিমনিয়াল সাইটগুলো তাই এত জনপ্রিয়। তাই মেট্রিমোনিয়াল সাইটগুলোকে একটু সতর্ক হতে হবে। অসদুপায় অবলম্বন বা ভুল তথ্য থেকে সরে আসতে হবে। তাহলে জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।

নিউজওয়ান২৪/এমএস

লাইফস্টাইল বিভাগের সর্বাধিক পঠিত