গুনাহ করতে করতে তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে যাও...
ধর্ম ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ০৯:৩০ এএম, ২৬ আগস্ট ২০১৯ সোমবার
আল্লাহু আকবার (ছবি: সংগৃহীত)
পরম করুণাময় মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ারা বান্দার প্রতি ক্ষমাশীল। কোনো এক মসজিদের দরজায় লেখা আছে, ‘গুনাহ করতে করতে যদি তুমি ক্লান্ত হয়ে যাও, তবে ভেতরে এসো, আল্লাহর ক্ষমার কলম এখনো ক্লান্ত হয়নি।’
সুবহানাল্লাহ! কত চমৎকার আশা জাগানো বাণী। দুনিয়ার রংমহলে ডুবে আমরা প্রভুকে ভুলে যাই। প্রভু কিন্তু আমাদের কখনো ভোলেন না। সন্তান মাকে ভুলে গেলেও মা সন্তান -কে ভোলেন না। মায়ের কান আর মন সব সময় সজাগ থাকে কখন সন্তান এসে ‘মা’ বলে ডাক দেবে।
একজন মমতাময়ী মা তার সন্তানকে যতটুকু ভালোবাসেন, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে তার চেয়েও বেশি মায়া করেন। এজন্যই আল্লাহর আরেক নাম রহমান। রহিম। দয়াময়। করুণাময়। আল্লাহর করুণা কত বেশি আসুন একটি গল্প থেকে জেনে নিই।
মহাকবি শেখ সাদি (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ বোস্তার শেষ অধ্যায়ে তওবার আলোচনায় গল্পটি বলেছেন। এক মূর্তিপূজক জীবনভর মূর্তির সেবা করে কাটিয়েছে। শয়নে-স্বপনে, ঘুমে-জাগরণে সে শুধু মূর্তির পূজা-অর্চনা, আরাধনা করত। একদিন সে বড় ধরনের মুসিবতে পড়ে গেল। মূর্তির সামনে সিজদায় অবনত হয়ে চোখের পানি ছেড়ে সে বলতে লাগল, হে আমার পরম পূজনীয় প্রভু! সারাটি জীবন তোমার আরাধনা করে কাটিয়ে দিয়েছি। আজ আমি এমন এক সমস্যায় পড়েছি, তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। দয়া করে আমাকে তুমি রক্ষা কর প্রভু।
এভাবে কয়েকদিন প্রার্থনার পরও মূর্তিপূজকের সমস্যা কাটল না। তখন সে হতাশ হয়ে বিমর্ষ মনে বলল, হায়! আমি কোন প্রভুর ইবাদতে জীবন কাটিয়ে দিয়েছি? এ মূর্তি তো আমার কোনো কথাই শুনতে পায়নি। আমি সব প্রভু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর দিকে মুখ ফেরাচ্ছি। মুসলমান যে আল্লাহর প্রার্থনা করে, আমিও সে আল্লাহরই দিকে মন ঘোরালাম। এই বলে মন্দিরের বেদিতে বসেই সে প্রার্থনার দুটি হাত তুলে বলল, ‘হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ! পুরোটা জীবন আমি ভুলের পথে ছিলাম। আজ এক মহাসংকটে পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি কে আমার আসল প্রভু। ওগো দয়াময় আল্লাহ! তুমি আমাকে এ সংকট থেকে বাঁচিয়ে দাও। তুমি ছাড়া আজ আর কোনো উপাস্য নেই আমার।’
এভাবে যখন কেঁদে কেঁদে সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে, তখনই খবর এলো তার ওই মুসিবত কেটে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। এক আল্লাহর ফকির পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করল। এই ফকির আগেও অনেকবার মূর্তিপূজককে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিয়েছে। মূর্তিপূজক বার বার বলত, আল্লাহর চেয়ে তার মূর্তি বেশি শক্তিশালী। ফকির যখন দেখল, তার মুসিবত কেটে গেছে, তখন সে মনে বড় দুঃখ পেল। সে বলল, হায়! যে মানুষটা সারা জীবন আল্লাহর বিরোধিতা করে গেল, আজ তারই প্রার্থনা কবুল হলো? সঙ্গে সঙ্গে ফকিরের মনে ইলহাম হলো, হে ফকির! মানুষটা মূর্তির কাছে চেয়ে হতাশ হয়েছে। আমার কাছে চেয়েও যদি হতাশ হতো তাহলে ওই পাথরের গড়া মূর্তি আর আমার মধ্যে পার্থক্য কী থাকত?
এ আবেগঘন গল্প বলার পর শেখ সাদি (রহ.) বলেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর কাছে চাও। যত অন্যায় তুমি করে থাকো না কেন, মনে রেখো, আল্লাহ কোনো মূর্তি নন। চাওয়ার পর যদি আল্লাহ না দেন, তবে আল্লাহ আর মূর্তির মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না। তাই বান্দার প্রার্থনা কবুল করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়। আমাদের অবশ্যই চাইতে হবে চাওয়ার মতো করে। আর আল্লাহর কাছে আমাদের সবচেয়ে বড় চাওয়া ও পাওয়া হলো ক্ষমা। তিনি যদি দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দেন, তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাতারে একটু জায়গা করে দেন, তবেই দুনিয়া ও আখেরাতে আমরা সফলকাম হব। কবির ভাষায়-
আমাদের সব ব্যর্থতা সফল হবে, যদি তুমি ক্ষমা কর।
আমাদের সব সফলতা ব্যর্থ হবে, যদি তুমি পাকড়াও কর।
ফিরে আসি শুরুর কথায়। আমরা যারা গুনাহ করতে করতে ক্লান্ত তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ক্ষমা করতে আল্লাহর কখনো ক্লান্তি আসে না। তাই আসুন, জীবনসূর্য ডুবে যাওয়ার আগেই আমরা আল্লাহর দুয়ারে ধরনা দিই। আল্লাহর কুদরতি পায়ে সিজদায় পড়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ক্ষমা চাই। ক্ষমা পেলেই আমাদের জীবন সুখ আর আনন্দে ভরে উঠবে।
হে আল্লাহ! ক্ষমা নামক চাদরে আমাদের জড়িয়ে রাখুন। আমরা যেন কখনই আপনার কোল ছেড়ে দুনিয়ার রঙে বিলীন না হয়ে যাই।
লেখক : সেলিম হোসাইন আজাদী, বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
নিউজওয়ান২৪.কম/আহনাফ