NewsOne24

কুয়েতে জাতীয় পতাকাহীন বাংলাদেশ দূতাবাস!

কুয়েত প্রতিনিধি

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ০৬:১৯ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার

ওপরেরটি পুরনো দূতাবাস ভবন, নিচেরটি (কালো রঙের ১ ও ২ নং ভবন) নয়া দূতাবাস ভবন    ছবি: নিউজওয়ান২৪.কম

ওপরেরটি পুরনো দূতাবাস ভবন, নিচেরটি (কালো রঙের ১ ও ২ নং ভবন) নয়া দূতাবাস ভবন ছবি: নিউজওয়ান২৪.কম

১ আগস্ট থেকে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থান পরিবর্তন করেছে। আগে দূতাবাসটি ছিল খালদিয়া এলাকায়। এখন সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মরুময় আর জনহীন প্রায় মেসিলা এলাকায়। এ বিষয়ে দূতাবাসের কাউন্সেলর আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করানোও হয়েছে। নয়া দূতাবাস ভবনের ঠিকানা হচ্ছে বাড়ি নং- ৯১ ও ৯৩, রোড নং-১৬, ব্লক নং ৭।  

কিন্তু নয়া দূতাবাস ভবনে কাজ শুরু হলেও তাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তোলা হয় নাই। যা দেশি-বিদেশি সবার কাছেই দৃষ্টিকটু ঠেকছে। এছাড়া জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা থাকলে নয়া অফিসের ঠিকানা খুঁজে পেতেও সুবিধা হতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির বাংলাদেশি যারা কুয়েতের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মসূত্রে অবস্থান করছেন- তারা যখন জন্মসনদ, পাসপোর্ট, প্রবাসীসনদ ইত্যাদি প্রয়োজনে দূতাবাসমুখো হন তাদের দূতাবাস ভবন খুঁজে পেতে সুবিধা হয় পতাকার কারণে। কিন্তু কী এক আজব কারণে দূতাবাস আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছে না তা জানা যায়নি। 

দূতাবাস খুঁজতে গিয়ে সম্প্রতি অনেকেই পেরেশানিতে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকে অভিযাগ করেন, দূতাবাসে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ডদেরও দেখা যায় না সময়মতো ডিউটিতে। দরকারি কাজে যাওয়া প্রবাসীরা একারণেও বিভ্রান্তিতে পড়ছেন- একে তো পতাকা নেই, তার ওপর ভবনের সামনে সিকউরিটি গার্ডদের দেখা যায় না। এতে করে সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির প্রবাসীরা কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারেন না যে ‘এটা কি বাংলাদেশ দূতাবাস’ কিংবা ‘ভাই, বাংলাদেশ দূতাবাসটা কোথায়?’  

এ বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের অভিযোগ- দূতাবাসের অধিকাংশ কর্মীই নিজকাজে অদক্ষ, অযোগ্য এবং খামখেয়ালি। তবে তাদের এসব অযোগ্যতা আর দায়িত্বের প্রতি অবহেলার কারণে কোনো শাস্তি বা জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয় না বললেই চলে। তাই, তাদের সৃষ্ট সব সমস্যার ভোগান্তি গিয়ে পোহাতে হয় ওই প্রবাসী শ্রমিকদেরকেই।

প্রবাসীরা দূতাবাসের এসব অপেশাদার আচরণের বিষয়গুলোতে মাননীয় রাষ্ট্রদূত ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন। কুয়েতের আবদালিতে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিক সাদিক জামাল বলেন, ‘ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা যদি এসব বিষয়ে কঠোর হন এবং তদারকি করেন বিষয়গুলো নিয়মিত- তবেই এমন বেখেয়ালি আচরণ বন্ধ হবে।’ সুলাইবিয়ায় কর্মরত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শামীম তৌফিক বলেন, ‘যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একটি গৌরবময় দেশের দূতাবাসে জাতীয় পতাকা উড়বে না দিনের পর দিন- এটা কেমন বিষয় ভাবতেও রুচিতে বাঁধে।’ 

এদিকে, দূতাবাস স্থানান্তরের কথা জানয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দূতাবাস আরো জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট পর্যন্ত খালদিয়ার পুরনো ভবনেই ফি সংক্রান্ত কনস্যুলার সেবাসমূহ যেমন পাসপোর্ট/ভিসা/ট্রাভেল পারমিট/ড্রাইভিং লাইসেন্স সত্যায়ন/রিলেশন সার্টিফিকেট/জন্ম সনদ/নামসংশোধন সনদ/আমমোক্তারনামাসহ প্রভৃতি সেবাসমূহ চালু থাকবে। 

আর ফি ব্যতীত কনস্যুলার সেবাসমূহ যেমন মৃত্যু সংক্রান্ত সনদপত্র/প্রবাসী সনদপত্র/বিভিন্ন অভিযোগ সংক্রান্ত পত্রাদি প্রদান/গ্রহণ দূতাবাসের নয়া ঠিকানা থেকে করা যাবে। এছাড়া আগামী ১৬ আসস্ট থেকে দূতাবাসের সব ধরনের কার্যক্রম মেসিলার নয়া দূতাবাস ভবন থেকে পুরোদমে শুরু হবে বলে জানানো হয়।

তবে এতকিছু বোঝার পরেও দূতাবাস কর্তৃপক্ষ কেন তাদের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছে না তা রহস্যময় বলে মনে করছেন অনেকে। এটা কি তাহলে আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিনে পতাকা অর্ধনমিত না করার কূটকৌশল/ষড়যন্ত্রের অংশ- তাও ভেবে দেখা দরকার বলে প্রবাসীদের অনেকেই মনে করছেন। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পুরনো ভবন থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা কিন্তু ইতোমধ্যেই নামিয়ে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাজকর্ম চলমান কুয়েতে অবস্থিত এমন দুটি ভবনের কোনোটিতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা নেই।

এসব বিষয়ে জানতে দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট ফোন নম্বরগুলিতে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।   

নিউজওয়ান২৪.কম/এআর