NewsOne24

ভাইয়ের দলকে ভোট! স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড দিল স্বামী

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১১:৪৭ এএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

প্রতীকি চিত্র

প্রতীকি চিত্র

ভোটটা দিলে কাকে?
সদর দরজা পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই এমন প্রশ্নে কিছুটা চমকে যায় গৃহবধূ আনসুরা। বারান্দা থেকে প্রশ্নটা উড়ে এসেছিল তার স্বামীর মুখ থেকে। 

হাসিমুখে আনসুরা বিবি জবাব দিয়েছিলেন, কেন গো, ভাইয়ের দল কংগ্রেসকেই দিলাম এবার...

বাস, আর যায় কোথা!

আনসুরার স্বামী তাহাসান শেখ তৃণমূলের কাট্টা সমর্থক। স্বামীর পরিবারের অন্যরাও তাই। তাই ‘ঘরের বউয়ের’ অমন জবাবটা তাদের হতবাক করে দিল। তারা সবাই আনসুরাকে বেধড়ক পিটিয়ে তক্তা বানাতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ঘটনা এখানেই শেষ হলো না। তারা আনসুরার মুখে অ্যাসিডও ঢেলে দিল।

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে এমনই জানিয়েছে আনসুরার ছেলে রুপসান শেখ। 

গত মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের ইসলামপুরের ওই ঘটনায় আশঙ্কজনক অবস্থায় আনসুরাকে ভর্তি করানো ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটলে ওইদিন রাতেই তাকে পাঠানো হয় বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভিক্টিমের শ্বাসনালী ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে।

জানা গেছে, দুজন দুজনকে পছন্দ করেই ঘর বেঁধেছিলেন ইসলামপুরের কেশবপুর গ্রামের আনসুরা আর তাহাসেন। কংগ্রেসের সমর্থক দু’বাড়ির পুরনো মিলমিশ আচমকাই ধাক্কা খেয়েছিল বছর দেড়েক আগে। গ্রামবাসীরা জানান, রাজনীতির উঠোন ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায়, সম্পর্ক থাকলেও তাহাসেন তার শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কারণ, আনসুরার পরিবার তাদের পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য হারায়নি। তবে আনসুরার বড় ভাই মইনুদ্দিন শেখ মূল কংগ্রেস (মানে যে কংগ্রেস থেকে মমতা বেড়িয়ে তৃণমূল করেছেন) দলে যোগ দেন। এখন তিনি গ্রামের পরিচিত কংগ্রেস নেতা।

এরই জের ধরে এবারের ভোটের লড়াইর আবহে দু’বাড়ির বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল। কংগ্রেস-তৃণমূলে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া যে লেগেই থাকত তা জানিয়েছেন পড়শিরা। তারই সূত্র ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুই পরিবারে কথা কাটাকাটি শুরু হয়েছিল। যা এক সময়ে গড়িয়েছিল হাতাহাতিতে। সেই হাতাহাতির জেরে আহত হয়েছিলেন আনসুরার দেবরের ছেলে সামসিয়ার রহমান। ঘটনাচক্রে তিনি ওই গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্য। ঝামেলা থিতিয়ে এলে ভোট দিতে যান আনসুরা। তিনি ভেবেছিলেন- সমস্যা মিটে গেছে। কিন্তু না! তার প্রমাণ পেলেন বাড়ি ফিরতেই। রাজনীতির নিমক অনেক কড়া তা আবারো প্রমাণ হলো। এখানে ঘৃণা-হিংসার শাসন এখন সবচেয়ে পরিচিত সত্য।

আনসুরার ছেলে রুপসান ময়ের ওপর অত্যাচারের বর্ণনায় জানায়, মাকে আমাদের সামনেই চুলের মুঠি ধরে পেটাচ্ছিল বাবা ও অন্যরা। আমার চাচার ছেলে সাফিয়ান এখন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। মাকে ছাড়ানোর বদলে সেও পেটাতে থাকে। তার পরেই ঘরে ঢুকে মায়ের মুখে বোতল থেকে কি একটা ঢেলে দেয়। মা চিৎকার করতে থাকে, ‘জ্বলে গেল গো! প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে বুঝলাম অ্যাসিড ঢেলেছে।’’

তবে, তাহাসান বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, এটা আমাদের স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগির ঘটনা। আমি ওকে দু’টো চড় মেরেছি বলেই ও অ্যাসিড খেয়েছে। 

রানিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ফিরোজা বেগম অবশ্য তা মানছেন না। তিনি বলেন, ঘটনাটা শুনে চমকে গিয়েছি। একজন মহিলাকে কেবল কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য এমন নারকীয় অত্যাচার করতে পারে কেউ! রানিনগর ব্লক তৃণমূল সভাপতি আমিনুল হাসান বাপি অবশ্য বলেন, নিতান্তই পারিবারিক ঘটনা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলার সময় বাথরুমে গিয়ে ওই মহিলা অ্যাসিড খেয়ে নেন। তাকে এখন রাজনৈতিক রং দেওয়া হচ্ছে। সূত্র: আনন্দবাজার