NewsOne24

জাপার মহাসচিব পদে পরিবর্তনের আভাস

নিউজ ডেস্ক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ১০:২৯ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

জাতীয় পার্টিতে চলছে অস্থিরতা। নেতায় নেতায় চলছে ঠান্ডা লড়াই। এরশাদের অবর্তমানে পার্টির মূল নেতৃত্ব নিজের কব্জায় রাখতে মরিয়া পার্টির হাতেগোনা কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

আপাতদৃষ্টিতে এরশাদের সহোদর জিএম কাদেরকে ভবিষ্যত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ ওই সব নেতারা। তারা চান সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশনকে পার্টির ভবিষ্যত চেয়ারম্যান করা হোক।

এদিকে জিএম কাদেরকে পার্টির ভবিষ্যত চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় সারাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আছেন স্বস্তিতে। এরইমধ্যে দল পরিচালনায় ভবিষ্যত চেয়ারম্যানের কিছু পরিকল্পনার কথা প্রকাশ হওয়ায় তৃণমূলে দেখা দিয়েছে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা।

ভবিষ্যতে ‘ক্লিনম্যান’ চেয়ারম্যান ও একজন যোগ্য মহাসচিবের নেতৃত্বে জেলায় জেলায় শক্তিশালী অবস্থান তৈরির জন্য ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাপার নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি বিরোধিতাকারীদের প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছেন অনেক জেলার নেতারা। কিন্তু কেন্দ্রে জি এম কাদের বিরোধীরা এখনো সক্রিয় থাকায় পার্টিতে অপ্রকাশ্যে চলছে ঠান্ডা লড়াই। 

অন্যদিকে ৪ এপ্রিল জি এম কাদেরকে পুনরায় পার্টির ভবিষ্যত চেয়ারম্যান ঘোষণার পর থেকে এরশাদের বাসবভন প্রেসিডেন্ট পার্কের নিরাপত্তা ও প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হাতে। যা অব্যাহত আছে এখনো। কাদের বিরোধীরা যাতে এরশাদকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে চাপ দিতে না পারে। শুধু তাই নয়, এরশাদ নিজেও শেষ বয়সে নিজ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে ভাইকেই পার্টির উত্তরাধিকার হিসেবে দেখতে চান। যার কারণে পার্টিতে কাদের বিরোধীদের একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেন না এরশাদ। সঙ্গে এরশাদকে এ সিদ্ধান্তে অটল থাকতে সাহস ও শক্তি যোগাচ্ছেন তারই আরেক ছোট ভাই, যিনি আমেরিকা প্রবাসী। তিনিও চান বড় ভাই’র হাতে গড়া রাজনৈতিক দলটি অন্তত নিরাপদে থাকুক। মানুষ স্মরণ করুক আরো অনেক বছর। 

সম্প্রতি জাপার দুই প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের প্রসঙ্গটি পরিবর্তনের জন্য প্রেসিডেন্ট পার্কে গেলে তিনি তা প্রত্যাখান করে সেই দুইনেতার ভৎর্সনা করেন। তারপরও হাল ছাড়ছেন না কাদের বিরোধীরা। তারা গুলশানে একাধিক বাসায় দফায় দফায় বৈঠক করছেন। যদিও তাদের সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা ভবিষ্যত ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে এরইমধ্যে দলের বৃহত্তর স্বার্থে পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছে দলকে শক্তিশালী করার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন অনেক প্রবীণ-নবীন নেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, অনেকবার বলেছি, পার্টিতে পল্লীবন্ধুর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন কে হবে, পার্টির ভবিষ্যত কর্ণধর। যদিও এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানারকম আলোচনা আছে। কিন্তু পার্টির বৃহত্তর স্বার্থে এরশাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত সবাই।

পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, প্রেসিডিয়াম থেকে শুরু করে পার্টির সব পদ-পদবী আমরা এরশাদের স্বাক্ষরে পেয়ে থাকি। পার্টিতে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জি এম কাদেরের বিষয়েও তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করি তবে পার্টির মঙ্গলজনক হবে।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস দেখলে আমরা বুঝতে পারব এ দেশে পরিবারের বাইরে কোনো পার্টি টিকে থাকতে পারেনি। মুসলিম লীগ ও জাসদও হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। যারা এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে নেতা বানানোর চেষ্টা করছেন, তারা প্রকৃতপক্ষে এরশাদ ও জাপার মঙ্গল কামনা করেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নব্বইত্তোর ছাত্রনেতা ও পার্টির সিনিয়র এক ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, জাপায় রাজনৈতিক কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আছে পারিবারিক কোন্দল। আর এ কোন্দলে পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জড়িত থাকলেও, তৃণমূল অথবা মধ্যম সারির কোনো নেতাকর্মীই এ দ্বন্দ্বে নেই। সিনিয়র নেতারাই সিদ্ধান্ত নিয়ে পল্লীবন্ধুকে বার বার বিভ্রান্তিতে ফেলেন। অতীতেও তারা বহুবার এমনটা করেছেন, যার কারণে এক সময়ের শক্তিশালী জাপা এখন ষড়যন্ত্রকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

এদিকে সিঙ্গাপুর থেকে জি এম কাদের মুঠোফোনে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় পার্টি একটি বড় দল ও সংসদের প্রধান বিরোধীদল। এখানে পদ-পদবীর জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পল্লীবন্ধু এরশাদ আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সমন্বয়ভাবে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। সবাই এক টেবিলে বসলে, অনেক বিভেদ ও সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ইনশাল্লাহ কোনো দ্বন্দ্বই থাকবে না। জাপা হবে পল্লীবন্ধুকে স্মরণে রাখার মতো দল।

এদিকে মঙ্গলবার পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে জাপার ভবিষ্যত চেয়ারম্যান। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী কাউন্সিলে এ বিষয়ে নিষ্পত্তি হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহাসচিব পদেও আসতে পারে পরিবর্তন।

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি