আমরা এই জায়গায় বসেছি বাপের টাকায় না: হাইকোর্ট
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ১১:৫৭ এএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার
আমরা এই জায়গায় বসেছি আমার বাপের টাকায় না। এখানে ট্যাক্সের টাকা আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রিকশাওয়ালার টাকাও আছে। শুধুমাত্র একজন রিকশাওয়ালা নয় একজন ফকিরকেও ভ্যাট দিতে হয়, সবাইকে ভ্যাট দিতে হয়। সমস্ত পাবলিক প্রতিষ্ঠানে এদেশের জনগণের টাকা আছে। এইগুলা একটু মাথায় নিয়েন। আর তাদেরও এগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত।
গ্রীন লাইন বাস কোম্পানির মালিক আলাউদ্দিনের উদ্দেশ্যে গতকাল (বুধবার) এই আবেগঘন মানবিক কথাগুলো বলেন হাইকোর্ট।
বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে গ্রীন লাইন পরিবহনের মলিকের পক্ষ থেকে বুধবার ৫ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে হাইকোর্টের মাধ্যমে। এ সময় গ্রীন লাইনের মালিক আলাউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা চালককে যদি ঘুমাতে না দেন, মানসিক বিশ্রাম না দিয়ে তাকে যদি আবারও গাড়ি চালাতে বলেন- সেও বেশি টাকার জন্য গাড়ি চালায়। এতে তার (ড্রাইভারের) মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না।
গ্রীন লাইন বাসের মালিক আলাউদ্দিন আদালতকে বলেন, আমার কিছু কথা যদি আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে শুনেন- কেমনে কীভাবে দুর্ঘটনা হলো। তখন আদালত বলেন, সেটা আমরা শুনব। আপনাদের বক্তব্য থাকতে পারে সেটা আমরা অবশ্যই শুনব। দেখেন আপনারা ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। মানুষের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটাও তো দেখতে হবে।
এই যে ধরেন আপনি বিদেশে গেছেন চিকিৎসার জন্য আমরা কোনো আদেশ দেয়নি। তখন মালিক বলেন, আমি চিকিৎসা রেখেই চলে এসেছি।
আদালত বলেন, আপনাদের কোন কথা থাকলে বলবেন অবশ্যই আমরা শুনব। মামলাটাতো পেন্ডিং।
হাইকোর্ট আরো বলেন, দেখেন ইদানিং মানুষ বাড়ছে, গাড়িঘোড়াও বাড়ছে। চালকরাও বেপরোয়া হয়েছে। একজন চালককে আট ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালাতে দেয়া উচিত। এই জিনিসগুলা আপনারা মালিকদের দেখা উচিত।
গ্রীন লাইনের মালিককে উদ্দেশ্য করে আদালত আরও বলেন, আপনারা যদি একজন চালককে প্রোপারলি ঘুমাতে না দেন। তারও তো ক্লান্তি আছে... এই যে ঘটনা ঘটেছে তা কিন্তু দুর্ঘটনার পর্যায়ে পড়ে না। সে (রাসেল সরকার) গাড়ি থামাতে গেল অথচ আপনার চালক তার ওপর দিয়ে চালিয়ে দিল... যেহেতু মামলাটি পেন্ডিং আছে সেহেতু আমরা মন্তব্য করলাম না। কিন্তু এই যে বিষয়গুলো এটি বিবেচনা করে দেখা উচিত।
হাইকোর্ট বলেন, আপনারা, আমরাও কিন্তু এদেশের মানুষ। আপনি মুরুব্বি হয়েছেন। আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। বাস মালিক সমিতিরও দায়িত্ব আছে। এই যে দেখেন সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটলো। বাচ্চারা রাস্তায় নামলো। পুলিশেরও অবহেলা আছে। আপনাদেরও কিছু অবহেলা আছে। আপনারা জানেন আমি আর কারণ উল্লেখ করলাম না। এরা এদেশেরই সন্তান। একটি ছেলে মারা গেলে শুধুমাত্র তার বাপ মা’রই গেল না। তারা দেশেরও সম্পদ।
আদালত আরও বলেন, একজন মানুষ মারা গেলে সে কিন্তু আর ফিরে আসে না। এক কোটি চাওয়া হয়েছিল আমরা কিন্তু তা দেয়নি। আমরা সেটি কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
এ পর্যায়ে মালিক বলেন, এটি আপনাদের বিবেচনার মধ্যে রইল। আমার সাধ্যে যা কুলায় মানবতার খাতিরে তাকে সবকিছু করব।
বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এসব বক্তব্য দেওয়া হয়। বুধবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে রাসেলকে ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ৪ এপ্রিল প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল রাজধানীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় গাইবান্ধার বাসিন্দা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ১৪ মে রুল জারি করেন। রুলে কেন রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ এক রায়ে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন।
নিউজওয়ান২৪.কম/এলএন