নুসরাতকে হত্যাচেষ্টাকারী অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি আটক
স্টাফ রিপোর্টার
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ০১:২০ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার
অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে ফেনী থেকে ঢামেক হাসপাতালে আনার পর স্বজনদের আহাজারি -ফাইল ফটো
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার এজহারভুক্ত আসামি জোবায়ের আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে আটক করা হয়েছে এ মামলার প্রধান আসামি ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিকে।
পপি অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের সহপাঠী। সেও এবার নুসরাতের মতো সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিল। আর জোবায়ের সোনাগাজী পৌরসভা এলাকার তুলাতলির আবুল বশারের ছেলে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানা পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই রাতেই সোনাগাজী পৌর এলাকার চনচান্দিয়ার বাসা থেকে পপিকে আটক করা হয়।
এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এজাহারভুক্ত তিনজনসহ দশজনকে পাকড়াও করা করা হল; যাদের মধ্যে ৭ জন কারাগারে আছে এবং বাকিদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানির’ অভিযোগ এনে গত মার্চে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার। সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ ও হুমকি দিতে থাকে অধ্যক্ষ সিরাজ ও তার লোকজন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষ তার অনুসারীদের দিয়ে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালান বলে অভিযোগে জানা গেছে।
ওই ঘটনায় কেরোসিন ঢেলে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যায় তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছে নুসরাত।
সেখানে নুসরাত বলেছে, গত শনিবার সকালে ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বোরখা পরা চার নারী তাকে মামলা তুলে নিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
জবানবন্দিতে নুসরাত জানায়, বোরখায় মুখ ঢাকা থাকায় ওই চারজনের কাউকে চিনতে পারেননি। তবে এক পর্যায়ে তাদের একজন আরেকজনকে শম্পা নামে ডেকেছে, সেটা তার মনে আছে।
পরিদর্শক কামাল বলেন, জবানবন্দিতে নাম আসা শম্পাকে খুঁজতে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপিকে আটক করেছি আমরা। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সঙ্গে পপির সম্পৃক্ততা আছে কি না এবং এ ঘটনায় জড়িতদের সন্ধান পেতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কলেজ সূত্র ও স্থানীয়রা জানায়, শ্লীলতাহানির মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাতে বাধা দিয়েছিল পপি। এছাড়া অধ্যক্ষের পক্ষে করা মানববন্ধনেও তাকে দেখা যায়।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান যে মামলা করেছেন তাতে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামির তালিকায় নাম থাকা বাকি সাতজন হলেন- পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, সাবেক ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।
এছাড়া ঘটনার সময় ‘হাতমোজা, চশমা ও বোরকা’ পরিহিত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।
এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে লাইফসাপোর্টে থাকা নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর কথা ভাবা হলেও চিকিৎসকরা বলেছেন, তার নাজুক অবস্থার কারণে এখনই তা সম্ভব না।
পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে