মহাকাশে প্রাণ নিয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞান ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৩৪ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:৩৮ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার
পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে যে সৌরজগতের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন তা নিয়ে এখন চলছে নানা জল্পনা। লাল নক্ষত্রকে ঘিরে যে ৭টি গ্রহ পদক্ষিণ করছে তাতে প্রাণের সম্ভাবনা রয়েছে বলেই বিশ্বাস তাদের। তবে সবগুলোতেই যে প্রাণ আছে তেমনটা এখনই বলতে পারছেন না মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র বিজ্ঞানীরা।
তাদের বিশ্বাস, নক্ষত্রকে ঘেরা কক্ষপথে যে গ্রহগুলো মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে সেগুলোয় তরল পানি অবশ্যই আছে। আর তরল পানি যদি গ্রহগুলোয় থেকে থাকে তবে প্রাণী না থাকার কোন কারণ নেই। তাই ৭টি গ্রহের মধ্যে অন্তত ৩টি’কে নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই।
ট্রাপিস্ট ১ (TRAPPIST-1) নামের সৌরজগতে প্রাণের সম্ভাবনাময় গ্রহগুলোকে নিয়ে অনেকেই তাই নানা প্রশ্ন করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৩টি গ্রহে কী ধরনের উপাদান রয়েছে যাতে মনে হচ্ছে সেখানে প্রাণ রয়েছে?
এই প্রসঙ্গে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিমিতার সাসেলভ বলেন, গত বছর থেকেই মহাকাশের কয়েকটি গ্রহকে ঘিরে প্রাণের সম্ভাবনা অনেক জোরালো হয়েছে। গেল বছরই এই ধরনের ৩টি গ্রহ সম্পর্কে আমরা প্রথম জানতে পারি। এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী আরও বলেন, ‘গত ২ বছর ধরে আমরা গবেষণা করছিলাম। এই সৌরজগতে না হোক মহাকাশের কোথাও কী প্রাণের অস্তিত্ব নেই? কিন্তু যতই গবেষণা এগিয়ে যাচ্ছিল ততই সেই বিশ্বাসটা জোরালো হচ্ছিল।’
সাসেলভ বলেন, “আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেই রহস্যের সমাধান মিলবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। সর্বশেষ আবিষ্কৃত গ্রহগুলোর মধ্যে বিশেষ ৩টিকে ঘিরে আমাদের আশা বেশি। সেগুলোর ভূপৃষ্ঠ যে উপাদানে গঠিত তা আমাদের আগ্রহী করে তুলেছে। কেননা সেসব শিলা তরল পানি সংরক্ষণের জন্য সহায়ক। যদি সত্যিই পানি থাকে তবে সেখানে প্রাণের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।”
সাসেলভ আরও বলেন, ‘শিলাগুলোয় এমন কিছু উপাদান রয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি যা প্রাণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রাণের গঠনে যে ৬টি উপাদানের কথা বলা হয় তারমধ্যে সেখানে কার্বন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন রয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।’
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোর্তিবিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড কিপলিং’ও তেমনটাই মনে করছেন। তার মতে, এমন আবিস্কারে তিনি অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তার আগ্রহও বেড়ে গেছে বহুগুণ।
তিনি বলেন, ‘নক্ষত্রের দিকে আগে খেয়াল করুন। আমাদের সূর্যের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। এছাড়া, এর লাল রং বলে দেয় নক্ষত্রটি বহুকাল ধরে জ্বলবে।’
‘আরেকটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, যখনই কোনো ভিনগ্রহে আমরা প্রাণের অস্তিত্ত্ব খুঁজি.. জানার চেষ্টা করি সেটার পৃষ্ঠে তরল পানি রয়েছে কিনা। দেখে যা মনে হয়েছে, ওই গ্রহগুলোর পৃষ্ঠে তরল পানি রয়েছে। এছাড়া সেগুলোর পৃষ্ঠদেশে পাথরও রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।’
অধ্যাপক ডেভিড আরও বলেন, ‘তরল পানি শুধু থাকলেই হবে না। গ্রহগুলোয় পানি তরল থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে সেই গ্রহের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। অনেকটা আমাদের পৃথিবীর মত। যদি সেসব গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুব শীতল হত তবে পানি তরল থাকত না। আবার খুব উষ্ণ হলে পানি বাস্প হয়ে উড়ে যেত।’
অবশ্য তিনি এটাও স্বীকার করেন, গ্রহগুলোয় পানি থাকলেই যে প্রাণের সম্ভাবণা থাকবে এমনটা বলা মুশকিল। যে তিনটি গ্রহকে নিয়ে আমাদের এত আগ্রহ সেগুলোর অন্তত একটি আমাদের কক্ষপথে থাকা শুক্র’এর মত খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে। তবে গ্রহগুলোকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গেলে সাফল্য মিলতেও পারে।’
করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিসা ক্যাটলেঙ্গার বলছেন, ‘প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে এতদিন আমাদের নজর ছিল মহাকাশের অনেক দূরে থাকা নক্ষত্রগুলোর দিকে। এখন অবশ্য সেদিকে আমাদের তাকাতে হবে না। কেননা, খুব কাছেই যেসব গ্রহ আমাদের চোখে ধরা দিয়েছে তাই নিয়েই এখন গবেষণা চালান যাবে।’
নিউজওয়ান২৪.কম