দুলাভাইয়ের তুলে নেওয়ার হুমকি, শ্যালিকার পুলিশ পাহারায় পরীক্ষা
রাজশাহী সংবাদদাতা
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ১১:২০ এএম, ৩ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার

পুলিশ পাহারায় পরীক্ষাকেন্দ্রে বিউটি
দুলাইভাই ‘তুলে নিয়ে যাবে’ মানে অপহরণ করবে শ্যালিকাকে- এমন হুমকির মুখে রাজশাহীর তরুণী বিউটি এইচএসসির প্রথম পরীক্ষা দিতে না পারলেও দ্বিতীয় দিন কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে পুলিশ পাহারায়।
গতকাল মঙ্গলবার বাগমারা উপজেলার মচমইল ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী বিউটি খাতুন পুলিশি পাহারায় বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দেন কেন্দ্রে বসেই। তবে তার না দেওয়া প্রথম পরীক্ষাটির ব্যাপারে বোর্ড কী ফয়সালা নেবে তা জানা যায়নি।
বিউটির পরীক্ষা কেন্দ্র ভবানীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে।
বিউটি খাতুনের স্বামী সিরাজুল ইসলাম জানান, তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির কারণে পরীক্ষা দেওয়া হলো না বিউটির- স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ হলে তৎপর হয় পুলিশ।
তিনি বলেন, সেটি প্রশাসনের নজরে আসার পর সোমবার রাত ১২টার দিকে তিনজন পুলিশ সদস্য বাড়ি এসে বিউটিকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বলেন।
বিউটি জানান, সাত মাস আগে উপজেলার তেলীপুর গ্রামের মন্টু প্রামানিকের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন।
বিউটি আরো বলেন, চার বছর প্রেম করে তারা বিয়ে করেছেন। কিন্তুতার বিয়ে মেনে নেননি তার বড় বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর চেয়েছিলেন তার ছোট ভাই আলমগীর হোসেনের সঙ্গে বিউটির বিয়ে দিতে। বিয়ের পর থেকে সিরাজুলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করানোর জন্য ভগ্নিপতি ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার একডালা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ মার্চ কৌশলে স্বামীসহ তাকে ডেকে নিয়ে যান জাহাঙ্গীর আলম। মাধাইমুড়ি গ্রামের বাবার বাড়িতে ডেকে নিয়ে রাত ৮টার দিকে জোর করে সিরাজুলের কাছে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন জাহাঙ্গীর।
কিন্তু তাতে স্বাক্ষর না করায় জাহাঙ্গীর ও তার ভাই আলমগীর পিটিয়ে জখম করে একটি ঘরে আটকে রাখেন সিরাজুলকে। এতে বাধা দেওয়ায় বিউটিকেও মারপিট করা হয়।
সিরাজুলের পরিবারের কাছ থেকে ঘটনা জানতে পেরে বাগমারা থানা পুলিশ ওই বাড়ি থেকে সিরাজুল ও বিউটিকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনার পরও এবং বিষয়টি পুলিশে জানাজানি হলেও দমে যায়নি বেপরোয়া জাহাঙ্গীর। পরে জানা যায়, বাগমারা থানা পুলিশ এ ব্যাপারে মামলা নিতে চায়নি। এজন্য দায়ী কতিপয় পুলিশ সদস্য যাদের যোগসাজশ আছে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে।
এরপর থেকে জাহাঙ্গীর বিভিন্নভাবে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ভবানীগঞ্জে পরীক্ষা দিতে গেলে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি। এ কারণে ভয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে পারিনি- সংবাদ মাধ্যমকে বলেন বিউটি।
রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র ও বিউটির স্বামী সিরাজুল বলেন, পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসলেও পরে বাগমারা থানা মামলা নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে বিউটি সোমবার আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বিউটি বাদী হয়ে তার বড় বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর, বড় বোন বিলকিস ও জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীরসহ পাঁচজনের নামে মামলাটি দায়ের করেছে।
এদিকে, মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল বিষয়টি মীমাংসা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সে কারণে মামলা নেওয়া হয়নি। তবে তারা আদালতে মামলা করেছেন শুনেছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ভবানীগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল সম্পর্কে ‘দুলাভাই’ জাহাঙ্গীরের খালু হন।
এদিকে, বাগমারা থানার ওসি নাছিম আরো বলেন, হুমকির কারণে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেননি সেটি তারা আগে থানায় জানায়নি। পত্রিকার সংবাদ দেখে পুলিশ পাহারায় তার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রত্যেক পরীক্ষার দিন পুলিশ গিয়ে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসবে এবং বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে জানান ওসি। কিন্তু যার হুমকির কারণে এতসব হচ্ছে সেই ‘দোর্দণ্ড প্রতাপ’ দুলাভাই জাহাঙ্গীরকে পাকড়াও করা হবে কি না তা নিয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।
বিউটি খাতুন উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে। তিনি মচমইল ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণ করেন। এসএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ ৪.৯১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
আর বিউটির দুলাভাই জাহাঙ্গীর আলম ভবনীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডলের স্ত্রীর বোনের ছেলে।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানা যায়নি। কেন তিনি অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও তার শ্যালিকাকে নিজের ভাইয়ের বউ বানাতে এত বেপরোয়া আচরণ করছেন- সেই রহস্য জানা যায়নি। বিষটি খোলাসা করতে ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডলকেও পাওয়া যায়নি। তার সেল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় বারবার কল করেও।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে