NewsOne24

রোহিঙ্গা নিয়ে বিচার ঠেকাতে মার্কিনি কৌশল মিয়ানমারের!

নিউজওয়ান২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৯:৩৭ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

দুর্দশাগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের হাজারো করুণ অবস্থার একটি চিত্র   -ফাইল ফটো

দুর্দশাগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের হাজারো করুণ অবস্থার একটি চিত্র -ফাইল ফটো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেউ আন্তর্জাতিক গুরুতর অপরাধ করলেও তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) তদন্ত ও বিচার ঠেকাতে একটি কৌশল নিয়ে থাকে ওয়াশিংটন। তা হলো আইসিসি’র তদন্তকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা না দেওয়া। 

মার্কিনিদের ওই নীতির বিষয়টি তুলে ধরে মিয়ানমারও আইসিসিকে সহযোগিতা না করার লক্ষ্যে তার নীতিকে যৌক্তিক প্রমাণের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

এর প্রমাণ মিলেছে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে। গত বুধবার সেখানে পোস্ট করা এক বার্তায় প্রকাশ- আগের দিন মঙ্গলবার আইসিসি তদন্তকারীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত একটি খবর গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছিল। সেই প্রেক্ষাপটে দূতাবাস এসংক্রান্ত আরো বিশ্বাসযোগ্য টুইট ও ওয়েবসাইটের খবর প্রকাশ করছে। ওই বার্তার নিচে মিয়ানমার দূতাবাস এসংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর একটি টুইট ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনের ওয়েব লিংক প্রকাশ করে।

অর্থাৎ বিচার ঠেকানোর যুক্তরাষ্ট্রীয় কৌশলের তরফদারি শুরু করেছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো নিষ্ঠুর রাষ্ট্র মিয়ানমার।

উল্লেখ্য, মাইক পম্পেও গত ১৫ মার্চ টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতি আমি আজ ঘোষণা করছি। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসিতে যোগ দেয়নি কারণ এর (আইসিসির) বিশাল ও অপরিমেয় ক্ষমতার কারণে। আইসিসি আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।

এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘ইউএস ইম্পোজেস ভিসা ব্যান অন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট ইনভেস্টিগেটরস : পম্পেও’ (আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের তদন্তকারীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে : পম্পেও)।

জাতিসংঘ গঠিত তদন্ত কমিশন রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের জোরালো অভিযোগ আনলেও মিয়ানমার বলেছে, তার ওপর আইসিসির কোনো বিচারিক এখতিয়ার নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ধারায় মানবতাবিরোধী মিয়ানমার সরকারের যুক্তি, তার দেশ আইসিসির সদস্য নয় এবং রোম সংবিধি সই করেনি।

এটা জ্বলন্ত সত্য যে রোহিঙ্গারা গণবাস্তুচ্যুতির শিকার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। আইসিসি স্বপ্রণোদিত হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকার প্রেক্ষাপট তদন্ত শুরু করলেও অং সান সুকির মিয়ানমার তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

শুধু তাই নয়, এমনকি রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে জাতিসংঘ গঠিত কমিশন, মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার তাদের দেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা ইতিবাচক ভূমিকার জন্য যারা ওয়াশিংটনের হরদম প্রশংসা করেন তাদের জন্য বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বললেও তার নিজের ওপর আইসিসির এখতিয়ার স্বীকার করছে না। দেশটি ইচ্ছা করেই আইসিসির সদস্য হয়নি। আইসিসি গঠন সংক্রান্ত রোম সংবিধিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সই করেও যুক্তরাষ্ট্র পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তানে ২০০৩ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করে আসছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর হেফাজতে থাকা বন্দিরাও এমন অপরাধের শিকার হয়েছে বলে জানা যায়। আইসিসির কৌঁসুলি ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে আদালতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অপরাধ তদন্তের অনুমতি চেয়েছিলেন। আইসিসির বিচারক ওই আবেদন পর্যালোচনা করছেন।  

এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও মিয়ানমার— উভয়েই মনে করে যে তাদের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাদের দেশের বিচারব্যবস্থাতেই তার প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।
সরব 

রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চুপসে যাওয়া অবস্থান

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নিপীড়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শুরুর দিকে বেশ সরব ছিল। নিপীড়নের বিষয়ে অনুসন্ধানে যখন যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জোরালো ইঙ্গিত মিলে তখনই তা স্বীকার করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের গড়িমসি শুরু হয়। এমনকি কৌশলগত কারণে এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র গুরুতর সত্য স্বীকার করা থেকেও বিরত রয়েছে।

কূটনীতিক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ) বলেন, রোহিঙ্গা সংকটকে পুঁজি করে অনেক দেশ মিয়ানমারের ওপর নিজের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।

মিয়ানমারের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রসঙ্গে ওই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে নয়, চীনে যেতে চায়। চীনের সঙ্গে তাদের মূল সম্পর্ক। সূত্র: কালের কণ্ঠ