NewsOne24

নেত্রকোণার পাঁচ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার পলাতক আবদুল খালেক তালুকদারসহ পাঁচ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- পলাতক শেখ আবদুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা (৬৬), মো. কবির খান (৭০), আবদুস সালাম বেগ (৬৮) ও মো. নূরউদ্দিন ওরফে রোদ্দিন (৭০)। 

মামলার প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমীন খান মুন্নী সমকালকে জানিয়েছেন, এই মামলায় প্রথমে সাতজন আসামি ছিল। সাত আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল তদন্ত সংস্থা। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১২ আগষ্ট সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওইদিনই এক আসামি আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ট্রাইব্যুনালে এই মামলার যুক্তিতর্কের সময় গ্রেফতারকৃত আবদুর রহমান (৭০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে এক আসামি আহমদ আলী (৭৮) অভিযোগ (চার্জ) গঠনের আগেই ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর মারা যান। 

মুন্নী বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগই আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। 

প্রসিকিউশন সুত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার পূর্বধলার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির একাত্তরে বড় ভাই আবদুল খালেককে হত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মামলা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২১ আগষ্ট বাড়হা গ্রামে আবদুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয় ওই মামলায়। পরে মামলাটি ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। 

তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরের বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। এরপর তিনি ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রসিকিউশন বিভাগ ২০১৬ সালের ২২ মে আসামিদের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করে এবং একই বছর ১২ জুন অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

 এই রাজাকারদের বিরুদ্ধে একাত্তরে ডা. হেম সুন্দর বাগচী হত্যা, নির্যাতন, লুন্ঠণসহ একাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের বাড়িতে নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লূটপাট চালায় বলে প্রসিকিউশনে অভিযোগ রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তথ্য মতে, দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মজিদ মওলানা মুক্তিযুদ্ধে সময় নেজামে ইসলামির নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি জামায়াতের রাজনীতি করতেন। খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সর্বশেষ তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য হন। এছাড়া কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। আবদুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।