NewsOne24

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু মুশফিকের

স্পোর্টস ডেস্ক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ০২:৪১ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

স্টেডিয়ামের আড়মোড়া তখনও ভাঙেনি। বিসিবির অফিস খোলে ১০টায়, সাংবাদিকদের ভিড়ও বাড়ে ১১টার পর থেকে। ভোরের স্নিগ্ধ মিরপুরে দেখা মেলে শুধু কয়েকজন মাঠকর্মীর। একমনে কাজ করে যান তারা। তাদের সঙ্গে কথা বলার কেউ থাকে না তখন। তবে গেল কিছুদিন তারা একজনকে পেয়েছেন, যে এসেই কুশল জিজ্ঞাসা করেন- জানতে চান কেমন চলছে সব। তিনি আর কেউ নন- মুশফিকুর রহিম।

নিউজিল্যান্ড থেকে দুঃস্মৃতি নিয়ে ফেরা মুশফিক বাড়িতে ছেলের সঙ্গে খেলা করেই সময় কাটান, তবে তার আত্মার সঙ্গে যে মিরপুরের এই মাঠটিও জড়িয়ে, তাই নিজেকে ফিরে পেতে বারবার এখানেই ছুটে আসেন। কোচের দেওয়া ট্রেনিং সিডিউল কিংবা ট্রেনারের বেঁধে দেওয়া জিম সেশন নয়- মুশফিক দিন চারেক ধরে খুব সকালে মিরপুরে আসছেন, রানিং করছেন কেবলই নিজের ইচ্ছা আর তাগিদ থেকে। উত্তরা থেকে গাড়ি চালিয়ে মিরপুরে চলে আসছেন বিশ্বকাপের আগে নিজেকে আরও বেশি ফিট, আরও বেশি চঞ্চল রাখতেই।

রানিং, স্ট্রেচিংয়ে, জিম আর নেট মিলিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঘাম ঝরিয়ে 'আপন প্রস্তুতিতে' নিজেকে খুশি রাখছেন মুশফিক। অবশ্য মুশফিককে যারা কাছ থেকে চেনেন তারা দেখেছেন একযুগ ধরে নীরবে নিভৃতে এভাবেই নিজের কাজটি নিজে করে চলেছেন তিনি। কখনও ফিটনেস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেন, কখনও ব্যাট-বলের নিবিড় প্রস্তুতিতে মগ্ন থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

এশিয়া কাপের পর ইনজুরির কারণে বিশ্রাম নিতে হয়েছিল তাকে। তখনও মাঝে মাঝে রোজা রাখতেন, যাতে করে বসে থাকার কারণে শরীরে মেদ না জমে! কোনো প্রতিকূলতাই তার এ তপস্যায় বাধা হতে পারে না, পারেনি কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডে খুব কাছ থেকে দেখে আসা বিভীষিকাময় ঘটনাও। তার এ পরিশ্রম কখনও কারও চোখে ধরা পড়ে, আবার অনেকে জানতেও পারে না। তাতে তার ভ্রূক্ষেপ নেই। তিনি ক্রিকেটে নিজেকে মুড়িয়ে রাখেন শুধু নিজেরই প্রয়োজনে, পরিতৃপ্তি পেতে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে শেষ টেস্টটা স্থগিত না হলে ২০ মার্চ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডেই থাকতে হতো জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। ইনজুরি মুক্ত হওয়ায় শেষ ম্যাচে খেলতেন মুশফিক। সেটা না হওয়ায় না খেলার আক্ষেপ হয়তো পোড়াচ্ছে তাকে। কিন্তু লক্ষ্য যখন অটুট, তখন পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। অতীত পেছনে ফেলে সুন্দর বিশ্বকাপের স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম শুরু করে দিয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের অন্য সিনিয়র সতীর্থদের মতো তিনিও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থেকে ছুটি নিয়েছেন। খেলোয়াড় ড্রাফটে নাম ছিল না তার। লিগে না খেলেও পিছিয়ে থাকছেন না।

তার এই একাগ্রতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। যে কারণে জাতীয় দলের অপশনাল অনুশীলনেও দেখা যায় তাকে। মেধার চেয়েও অধ্যবসায়কেই এগিয়ে রাখতে পছন্দ তার। আগামী প্রজন্মের জন্য যা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উদ্যমী মুশফিককে কার না পছন্দ! জাতীয় দল নির্বাচক হাবিবুল বাশার যেমন বললেন, 'মুশফিক সবার জন্য দৃষ্টান্ত। প্রত্যেক ক্রিকেটারের প্রস্তুতি আলাদা হয়। কিন্তু মুশফিক প্রতিটা টুর্নামেন্টে বা জাতীয় দলের ম্যাচের জন্য একই রকম প্রস্তুতি নেয়। একজন পেশাদার ক্রিকেটারের সব বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে দেখতে পাই। কোনো তরুণ ক্রিকেটার যদি বড় হতে চায়, সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাহলে মুশফিককে অনুসরণ করা উচিত।'

বহু আড্ডায় মুশফিকের পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার একাগ্রতা এবং ধৈর্য অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছেন। বর্তমান জাতীয় দলে মাশরাফির পর সবচেয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ার মুশফিকের। একযুগেরও বেশি। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের জন্য। এ কারণেই ক্রিকেট মাঠের অগ্রজ মাশরাফির কাছ থেকে সম্মান ও স্নেহ দুই-ই পান মুশফিক।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু মুশফিকের এ পরিশ্রমকে দেখেন অন্যভাবে। তার দৃষ্টিতে, মুশফিক জানে তাকে কী করতে হবে। সে যেহেতু লীগে খেলছে না, তাই প্র্যাকটিস করে। কিছু ক্রিকেটার আছে যারা নিজেদের যে কোনো সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখে। মুশফিক তাদের একজন। ও নিজেকে বিশ্বকাপের জন্য ঠিকই প্রস্তুত করছে। এটা খুবই ভালো।'

আগামী ২০ এপ্রিল থেকে জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু। ১০ দিনের প্রস্তুতি সেরে মে মাসের প্রথম দিকে আয়ারল্যান্ড যাবে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কন্ডিশনিং ক্যাম্প আর ম্যাচ খেলা দুটোই হবে সেখানে। সেজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন মুশফিকরা। নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি বগুড়াও যাননি। এ থেকে স্পষ্ট- তিনি একজন আপাদমস্তক পেশাদার ক্রিকেটার। খেলার মধ্যে না থেকেও নিজেকে প্রস্তুত করছেন বিশ্বকাপের জন্য।

নিউজওয়ান২৪/ইরু