মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব সম্পর্কে...(পর্ব-১)
ধর্ম ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সোমবার

ফাইল ছবি
সত্যবাদিতার বিপরীত হচ্ছে মিথ্যাচার। যে মিথ্যা বলে সে মিথ্যাবাদী। মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না।
মিথ্যার ফলে সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মিথ্যা মানুষকে ইহকালে ঘৃণিত ও নিন্দিত করে এবং পাপের পথে পরিচালিত করে। আর পাপ তাদের জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করে। তাই মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব সুদূর প্রসারী।
মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
(১) মিথ্যা হিদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত করে :
মিথ্যা মানুষের কথা ও কাজের মধ্যে গড়মিল সৃষ্টি করে। ফলে মিথ্যাবাদীর আচরণে সততার অভাব ধরা পড়ে। সে সুবিধা আদায়ের জন্য এদিক-সেদিক দৌড়ে বেড়ায় এবং কোনটা হালাল, কোনটা হারাম তা বিচার করে না। সমাজের মানুষ তাকে বিপজ্জনক মনে করে। ঘৃণিত এই স্বভাবের কারণে সে ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে ছিটকে পড়ে এবং আল্লাহর হিদায়াত থেকে বিরত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (মুমিন/গাফের ৪০/২৮)।
(২) প্রশান্তি বিলুপ্ত ও সন্দেহ সৃষ্টি করে :
মিথ্যা মানুষের মনে সন্দেহ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। মিথ্যাবাদীর অন্তর সর্বদা অস্থিরতা বিরাজ করে এবং এটি তার মানসিক প্রশান্তি বিদূরিত করে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ
হয় তা পরিত্যাগ কর, যাতে সন্দেহ নেই তা গ্রহণ কর। কেননা সত্য হচ্ছে প্রশান্তি আর মিথ্যা হচ্ছে সন্দেহ’।
মিথ্যা মানুষের অন্তরকে সংকুচিত করে ও সর্বদা চিন্তিত রাখে। এজন্য মিথ্যুক ব্যক্তি সর্বদা পার্থিব জীবনে মানসিক অশান্তি নিয়ে দিনাতিপাত করে। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘মানসিক প্রশান্তিই সবচেয়ে বড় প্রশান্তি এবং মানসিক শাস্তিই সবচেয়ে বড় শাস্তি।
(৩) অন্তরকে পীড়িত করে :
মিথ্যা মানুষের অন্তরের নিফাক বা কপটতার রোগ জন্ম দেয়। ফলে সমাজে দ্বিমুখী নীতির মানুষ
সৃষ্টি হয়। এ ব্যাধি মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দেয়। এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূর প্রসারী। এটি মানুষের উত্তম গুণাবলী ছিনিয়ে নেয়। তাকে সৎ আমলসমূহ থেকে বিরত করে এবং তার উন্নত মূল্যবোধগুলো বিদূরিত করে। ফলে এ ধরনের মানুষ প্রকৃত মুমিন হতে পারে না।
তাদের মিথ্যাচারিতার কারণে তাদের জন্য পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ারা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللّهِ وَبِالْيَوْمِ الآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ
يُخَادِعُونَ اللّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَّ أَنفُسَهُم وَمَا يَشْعُرُونَ
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللّهُ مَرَضاً وَلَهُم عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
‘আর লোকদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহ ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। অথচ তারা বিশ্বাসী নয়। তারা আল্লাহ ও ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এর দ্বারা তারা কেবল নিজেদেরকেই ধোকা দেয়। কিন্তু তারা তা বুঝতে পারেনা। তাদের অন্তরের ব্যাধি রয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি তাদের মিথ্যাচারের কারণে।’ (সূরা: বাক্বারাহ, আয়াত: ৮-১০)।
৪. রিজিক ও বরকতে ঘাটতি সৃষ্টি করে :
মিথ্যা এমন এক জঘন্য অপরাধ যা মানুষকে পাপের পথে পরিচালিত করে। মিথ্যা বলার মাধ্যমে মানুষ সাময়িকভাবে লাভবান হতে চেষ্টা করে। কিন্তু এতে সে সাময়িক কিছু অর্জন করতে পারলেও
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রহমত হতে বিরত হয়। অনুরূপভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা ও কসম পণ্যের বিক্রি বাড়ালেও তার বরকত কমে যায়। ফলে মিথ্যাবাদী প্রকৃত প্রস্তাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এজন্য ইমাম বুখারী (রহ.) সহীহ বুখারীতে অধ্যায় রচনা করেছেন- ‘মিথ্যা বলা ও দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখায় ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত মুছে যায়’।
নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে ততক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতার এখতিয়ার থাকবে। যদি তারা সত্য বলে ও যথাযথ বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি পণ্যের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ও মিথ্যা বলে তবে ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত চলে যাবে’।
তিনি (সা.) আরো বলেন, ‘মিথ্যা কসম পণ্যের কাটতি বাড়ায় কিন্তু বরকত কমিয়ে দেয়’। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম করা থেকে বিরত থাক। কেননা এর কারণে (সাময়িক) পণ্য বেশি বিক্রি হলেও বরকত কমে যায়’।
(চলবে...)
সূত্র: তিরমিযী হা/২৫১৮; মিশকাত হা/২৭৭৩; ইরওয়াউল গালীল হা/১২। আল-জাওয়াবুল কাফী, পৃঃ ১০৬। বুখারী, ‘ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়’ অনুচ্ছেদ- ২২। বুখারী হা/২০৮২। বুখারী হা/২০৮৭; মিশকাত হা/২৭৯৪। মুসলিম হা/১৫৬০; মিশকাত হা/২৭৯৩।
নিউজওয়ান২৪/আ.রাফি