NewsOne24

সরকারি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য অবৈধ 

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

প্রতীকী: ছবি

প্রতীকী: ছবি

সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে সরকারের করা নীতিমালাকে বৈধ বলে রায় দেয়া হয়েছে।

এর ফলে এখন থেকে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কেউ কোচিং করাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজীব আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালাসহ শিক্ষকদের করা পৃথক ৫টি রিটের ওপর শুনানি শেষে এ রায় দেন।

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, তার মেয়ে তানিয়া আমীর। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান এবং দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

২০১৭ সালে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুদক একটি তদন্ত করে।

দুদকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়।

পরে ওই নোটিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২ নিয়ে শিক্ষকেরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

এরপর আদালত গতবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠির কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করেন।

পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার অনুমতি চেয়ে লিভ টু আপিল করে। আপিল বিভাগ গত বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে মামলার ওপর জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।

পরে আদালত এ রুল নিষ্পত্তির জন্য সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামালকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন।

এর দীর্ঘদিন পর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। কিন্তু, রায় ঘোষণার আগে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল কোচিং বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করতে চাইলে আদালত তাকে সে সুযোগ দেন।

এরপর গত ২৭ জানুয়ারি আদালত এ-সংক্রান্ত সব রিটের শুনানি শেষ করে বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ধার্য করেন।

পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অ্যামিকাস কিউরিসহ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাইকোর্ট সরকারি স্কুলে কোচিং বাণিজ্য অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘দুদক এই বাণিজ্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছিল, সেটাকে বৈধ বলে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। পাশাপাশি আদালত কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের নীতিমালা-২০১২ কে বৈধ বলেছেন।’

কোচিং বাণিজ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে দুদকের এই আইনজীবী বলেন, ‘স্কুল-কলেজ চলাকালে শিক্ষকরা অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর মতো কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড করতে পারবেন না। কোচিং বাণিজ্য বলতে এটাই বোঝানো হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের কোচিং নিয়ে দুদক যে তদন্ত করেছে, সেটিকে হাইকোর্ট এখতিয়ারবহির্ভূত বলেছেন। সেটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারি কর্মচারীদের জন্য নীতিমালা তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।’

রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেছেন, ‘রায়ে কিছুটা অবাক হয়েছি। তবে, পুরো কপি হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিন রায়ের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জন্য আরো কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষযে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আদালত বলেছেন— কোচিং বাণিজ্যের চেয়েও অনেক গুরুতর অপরাধ আছে, দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। যেমন: হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, ভূমি অফিসে দুর্নীতি হচ্ছে, কাস্টমসে দুর্নীতি হচ্ছে, পোর্টে দুর্নীতি হচ্ছে। এগুলোয় কমিশনের বেশি নজর দেয়া উচিত, যদিও এই বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

নিউজওয়ান২৪/আ.রাফি