চীনের ‘নিজস্ব বিশ্বব্যাংক’ প্রস্তুত, মাথায় হাত যুক্তরাষ্ট্রের!
অর্থ সমালোচক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০৮:০৮ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ শনিবার | আপডেট: ১১:০৮ এএম, ১৮ মে ২০১৬ বুধবার
২০১৩ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে দুনিয়ার শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে চীন ঘোষণা দেয় অন্যান্য দেশের সহযোগিতায় একটি নয়া আন্তর্জাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার। যুক্তরাষ্ট্র একে স্বাগত জানায় উদাত্ত কণ্ঠে। কিন্তু এখন সেই যুক্তরাষ্ট্রই এ নিয়ে শঙ্কায় আছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, চীনের নিকট প্রতিবেশী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানও অস্বস্তিতে আছে বিষয়টি নিয়ে।
ওই সময়টায় চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে অভিনন্দিত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছিলেন, “এটা একটা গ্রেট আইডিয়া।” কিন্তু চীন যখন এতদিনে সেই ব্যাংক (এশিয়া ইনফাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক) প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে, তখন তা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের জন্য গলার কাঁটা হয়ে ঠেকছে।
চীন বলছে, এই ব্যাংকের মাধ্যমে অনুন্নত দেশগুলোতে রেলপথ, সড়কপথ আর বিদ্যুৎখাতের মতো বিষয়গুলোতে সহায়তা করবে। কিন্তু চীন যাই বলুক, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে চীন একে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাবে। এর দ্বারা বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতিকে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ হাসিলের পক্ষে পরিচালিত করবে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, চীনের অতীত রেকর্ড এমন আশংকার কথাই বলে। তাদের মতে, বিভিন্ন দেশের অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে সহায়তা করা কিংবা অপ্রয়োজনীয় খাতে অবকাঠামো উন্নয়নে ওইসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করার এজেন্ডা রয়েছে চীনের।
তবে নিজেদের ভাবনা-চিন্তা-দুশ্চিন্তা যাই থাকুক, চীনের এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো কায়দায়ই ঠেকাতে পারছে না। আফগানিস্তান থেকে ইরাক পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নেওয়া শীর্ষ দেশগুলো যেমন ব্রিটেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়াও এই ব্যাংকের পাশে দাঁড়িয়েছে। দলে আছে চরম মার্কিন বৈরী ইরানও। যুক্তরাষ্টেকে হতাশ করে একের পর এক মিত্র চীনা উদ্যোগের এই ব্যাংকের ছাতার নিচে দাঁড়িয়েছে।
জাপান আর যুক্তরাষ্ট্রকে বিমুখ করে এখন পর্যন্ত ৫৭টি দেশ এই ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চীনের মুদ্রা ইউয়ানকে দুনিয়ার অপরাপর শক্তিশালী মুদ্রা যেমন ডলার, ইউরো, পাউন্ড আর ইয়েনের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। এটাও খারাপ খবরই চীনের প্রতিপক্ষ মহলগুলোর জন্য।
আইএমএফের চায়না ডিভিশন হেড ঈশ্বর প্রসাদের মতে, বিশ্বজুড়ে নিজেদের নীতির বৈধতা দানের পক্ষে এই ব্যাংক চীনের মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বিশ্ব পরিস্থিতির চলমান রঙ্গমঞ্চে পরিবর্তনের সূচনা করে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারবে।
চীনের মতে, তাদের নয়া ব্যাংকের প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলো যেমন বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ার অনুন্নত অঞ্চলের উন্নয়নে বড় ধরনের প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নে ব্যর্থ হয়েছে।
নয়া ব্যাংকের ভবিষ্যত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’। এর অধীনে ঐতিহ্যবাহী সিল্করুটের সমান্তরালে নির্মাণ করা হবে সড়ক, রেল ও জলপথ এবং পাইপলাইনের এক বিশাল নেটওয়ার্ক যার বিস্তার হবে মধ্যএশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরতীরবর্তী বন্দরগুলো এর আওতায় চলে আসবে।
এই চীনা ব্যাংকের ‘পচা শামুকে পা (বা নাক) কেটে’ না আবার বিশ্বমোড়লের আসনটি খোয়াতে হয়- এই আশংকায় এখন ওয়াশিংটনের গদিনশীনরা বেশ দুশ্চিন্তায়ই আছেন। কারণ, তাদেরকে একই সঙ্গে নিজদেশীয় রাজনীতির চোরাবালিতে পা ফেঁসে যাওয়ার ঝুঁকিও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যেহেতু, শুরুতেই এশিয়া ইনফাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের পক্ষে ‘তালিয়া বাজিয়ে’ উৎসাহ দিয়ে পরবর্তীতে এর বাস্তব-কর্কশতা টের পেয়ে একে আঁতুরেই বিনাশ করতে সব চেষ্টাই বিফলে গেছে তাদের।
অনেকেই বলে থাকেন, আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যত সহজ তাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া তত সহজ নয়। তবে এই ধরনের কথা এবার সত্যিই কঠিন পাল্লায় পড়েছে চীনের এই উদ্যোগে- এটা বলাই বাহুল্য। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে নয়া এই ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের একটি মন্তব্য। ‘ব্রেটন উডস: দ্য নেক্সট সেভেন্টি ইয়ার্স’ নামে সদ্য প্রকাশিত এক বইয়ের যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে তিনি লিখেছেন, “ইতিহাসে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই যে একটি সাম্রাজ্য অনন্তকাল ধরে বিশ্ব শাসনে সক্ষম!” (নিউইয়র্কটাইমস, নবভারত টাইমস অবলম্বনে)
নিউজওয়ান২৪.কম/জিএনএ