NewsOne24

‘ধর্ষিতার’ স্বপ্ন বনাম নিরপরাধ ব্যক্তির ২৯ বছরের দুঃস্বপ্ন!

আইন-কানুন ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ০৬:৪৯ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৩৬ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৬ বৃহস্পতিবার

ডেনভার কাউন্টি জেল থেকে মুক্তি পাবার পর স্বজন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মোসেস-এল

ডেনভার কাউন্টি জেল থেকে মুক্তি পাবার পর স্বজন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মোসেস-এল

স্বপ্নে ‘ধর্ষকের’ নাম: ২৮ বছর দণ্ডের পর জানা গেল তিনি নির্দোষ
‘ধর্ষণের শিকার’ তরুণীর স্বপ্নে তার নাম এসেছিল- তাই তাকে গারদে কাটাতে হয়েছে দীর্ঘ ২৮ বছর। স্বপ্নে পাওয়া নামকেই আদালত প্রামাণ্য-দলিল বিবেচনায় তাকে অভিযুক্ত করে রায় দিয়েছিল।

কিন্তু ওই মামলার পুনর্বিচারে এখন দেখা গেছে- ওই ব্যক্তি নির্দোষ। তাই তাকে খালাস দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আইন আর বিচারের জগতের আপাত ‘উদ্ভট’এই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারে।

ক্লারেন্স মোসেস-এল নামের বর্তমানে ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে ৪৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল ডেনভারের এক আদালত। ১৯৮৮ সালে তার বিরুদ্ধে এই দণ্ড দেওয়া হয়েছিল প্রতিবেশী এক নারীকে ধর্ষণ, চুরি ও মারপিটের অভিযাগে। যদিও মোসেস বারবারই বলে আসছিলেন, ভুলবশতঃ তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তিনি ওই ব্যক্তি নন।

মোসেস ২০১২ সাল পর্যন্ত এই রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। এসময়ে তার কাছে আলোর ঝিলিক হয়ে দেখা দেয় অপর এক কয়েদির একটি চিঠি। ওই কয়েদি চিঠিতে জানান, উল্লেখিত নারীর সম্মতিতেই একসময়ে তার সঙ্গে যৌনসংসর্গ করেছেন তিনি। পরে তিনি ওই নারীকে মারপিট করেন।

এ সূত্রে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে নতুন করে উদ্যম খুঁজে পান তিনি। সেই প্রচেষ্টা ফল বয়ে আনে শেষ পর্যন্ত।
সম্প্রতি ডেনভার ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট তাকে নির্দোষ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে এই সিদ্ধান্তের আগে জুরিরা চার ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করেন।

এই রায় ঘুরে যাবার পেছনের কারণ হিসেবে বিবাদীর আইনজীবীরা জানান, বাদী তার বয়ানে প্রথম দিকে তিনজনের নাম বলেছিলেন সন্দেহভাজন হিসেবে। শেষে তিনি মোসেসের নাম বলেন যা তিনি স্বপ্নে পেয়েছেন। বাদীর জবানবন্দিতে অসংলগ্নতা ছিল।

সবশেষে ডিএনএ টেস্টও প্রমাণ দেয় যে মোসেস-এল ডেনভার পুলিশের ক্ষমাহীন ভুলের অসহায় শিকার হয়েছেন।
নয়া প্রমাণাদি সামনে আসার পর ডেনভার ডিস্ট্রিক্ট জজ কানডেইস গেরডেস গত বছরই বলেন, মোসেসের ওপর থেকে অভিযোগ সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে দেওয়া রুলিংয়ে তিনি বলেন- জুরিরা তাকে নির্দোষ ঘোষণা করতে পারেন, প্রমাণাদি এমন কথাই বলছে।

এরপর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস তার পুনর্বিচারের উদ্যোগ নেয় এবং তার জামিনেরও ব্যবস্থা করে। মোসেসকে কারাদণ্ড দেওয়ার পর থেকেই কৃষ্ণাঙ্গরা অভিযাগ করে আসছিল যে একজন নির্দোষ লোককে ফাঁসানো হয়েছে।
তবে ডিস্ট্রিক্ট জজ গের্ডেসের ঘোষণার পর আইনজীবীরা বলেছিলেন, প্রথম বিচারের জুরিরা মনে করেছিলেন মোসেসকে দোষী সাব্যস্ত করতে বাদীর জবানবন্দিই যথেষ্ট। আর স্বপ্নে তার নাম আসার বিষয়টি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে জোগাড় করা অনেকগুলো প্রমাণের একটি।

এ বিষয়ে মোসেসের আইনজীবী এরিক ক্লেইন কলেন, বাদী ‘ধর্ষিতার’স্বপ্ন মোসেসের জন্য ২৯ বছরের দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে!

২৮ বছর জেল খাটার পর চূড়ান্ত মুক্তির আগে এক বছর ধরে তিনি জামিনে ছিলেন।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে