একটি স্যাটায়ারের খসরা...
মিজানুর রহমান
প্রকাশিত : ০৩:১০ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:২২ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০১৬ বুধবার

প্রতীকি ছবি
শাহাদাতের বাড়ির পাশে একটি শত বছর পুরোনো আমগাছের মগডালে থাকতো এক দুষ্টু ভূত। একদিন দুপুর বেলায়, পুরো এলাকা সুনসান, শাহাদাত প্র্যাক্টিসে, শাহাদাতের স্ত্রীও শপিংয়ে। শপিংয়ে যাওয়ার সময় শাহাদাতের স্ত্রী কাজের মেয়েটিকে ইলিশ মাছ ধুয়ে রাখতে বলে যায়। এসে রান্না করবেন।
নির্দেশনা মতো মেয়েটি ইলিশ মাছ ধুচ্ছিলো, পদ্মার খাঁটি ইলিশ হওয়ায় সেই ইলিশের গন্ধে ম ম করে পুরো এলাকা। গন্ধে ঘুম ভেঙে যায় দুষ্টু ভূতটিরও। গন্ধ অনুসরণ করতে করতে শাহাদাতের বাসার রান্নাঘরের জানালার পাশে চলে আসে সে। এসে দেখতে পায় ছোট্ট মেয়েটি একা ও তার হাতে সুস্বাদু পদ্মার ইলিশ!
ভূত মেয়েটিকে ভয় দেখিয়ে ইলিশ মাছ খেতে চায়, ভীতু কাজের মেয়ে প্রথমে দিয়ে দিতে চায়। তবে তার মায়ের চেয়েও বেশি `কেয়ারিং` ম্যাডামের প্রিয় ইলিশ মাছটি সে এভাবে দিয়ে দেবে? উপায় না পেয়ে সে ভূতকে ইলিশ মাছ দিতে অস্কীকৃতি জানায়। ভূতটি ভয়ঙ্কর রেগে যায়। সে জোর করে ইলিশ মাছ ছিনিয়ে নিতে চায়।
কিন্তু মেয়েটি কোনোভাবেই দেবে না। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভূত মেয়েটির দিকে থালা বাসন ছুঁড়তে থাকে। মেয়েটিও ভূতকে গরম লোহার খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতে যায়। গ্যাসের চুলায় অনকেক্ষণ ধরে পোড়ানো টকটকে লাল লোহার খুন্তি দেখে ভূত মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেই ধাক্কায় পড়ে গিয়ে মেয়েটির নিজের গায়েই ওই ভয়াবহ গরম খুন্তির ছ্যাঁকা লাগে। ভূতের ছোড়া প্লেটের ধাক্কায় সে শরীরের বিভিন্ন যায়গায় ব্যাথাও পায়।
এদিকে শপিংয়ে গিয়ে শিশুকালের মেলায় হারিয়ে যাওয়া জমজ বোনের সঙ্গে দেখা হয় শাহাদাতের বেগম সাহেবার। আবেগঘন ওই মুহূর্তে শাহাদাতের স্ত্রী ও বোন তাদের ছেলেবেলার খেলার মাঠ দেখতে গ্রামে চলে যায়।
শাহাদাতেরও সেদিনই জরুরি ডাক পড়ে পাপুয়া নিউ গিনিতে `কিংস অব পাপুয়া` দলের হয়ে রেফারিং করার। খেলেছেন অনেক, তবে রেফারি হননি- তাও আবার পাকিস্তানি আলিম দার আর ইংল্যান্ডের ইয়ান গৌল্ডের মতো কোনো দলের পক্ষে খেলার সুযোগ তো সবাই পায় না। তাই রেফারি পদে খেলার অফারটি লোভনীয় হওয়ায় শাহাদাত প্র্যাক্টিস থেকেই সেদিন ট্রেনে করে চলে যায় সোজা পাপুয়া নিউ গিনিতে।
ঘটনার মারপ্যাঁচে তাদের দু`জনের একজনও কিছুই জানতে পারলো না পেছনে ফেলে আসা ঘটনার খবর। তারা জানলো না তাদের প্রিয় কাজের মেয়েটির এই অবস্থা! শিশুটি এ ঘটনায় তাদের ওপর রাগ করে চলে যায় বাসা থেকে- তাও তাদের না বলে। এতে কেউ কেউ শাহাদতদের দোষ দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল- তবে মিথ্যা তো আর সত্যের সামনে শেষ টিকতে পারে না। শেষমেষ তাই হয়েছে।
এখানে আরেকটি প্যাঁচানো ঘটনা ঘটে গেছে- যা বাংলাদেশেই সম্ভব, ইংল্যান্ড-আমেরিকায় হলে ঘটতো না। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঘটে এই তাজ্জব ঘটনাটি। কোথাকার কে যেন এক শাহাদাত এক সংবাদ সম্মেলন করে বসে (খেয়ে বসে কাজ না পাওয়া অলস বাঙালির কাজ আর কী)। সেখানে সে বলে- শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় তার স্ত্রী ও সে লজ্জিত। এজন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চায় ওই উজবুকটা। এটাও সেই তাদের কাজ যারা শাহাদতের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিল।
সব তো এখন ফকফকা পরিষ্কার হয়েই গেল। তারা নির্দোষ, তাদের কোনো কসুর নেই।
আর ভূতের কারণে শিশুটির ওভাবে আহত হওয়ার খবর তারা জানতে পারলে মেয়েটিকে স্কয়ারে চিকিৎসা করাতেন। তারা অনেক মহৎ। এটাও প্রমাণিত।
[লেখক: সংবাদকর্মী। এখানে বর্ণিত ঘটনার সবটাই লেখকের কপোলকল্পিত এবং অবাস্তব]
নিউজওয়ান২৪.কম/একে