কেউ ডুবে না যে সাগরে!
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ০১:০৮ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর একমাত্র জলরাশি যেখানে আপনি চাইলেও ডুবতে পারবেন না, আর তাইতো সেই হ্রদে সাঁতারেরও প্রয়োজন নেই!
জলে ভেসেই আপনি কোনো খবরের কাগজ পড়তে পারবেন এমনকি মোবাইলও ব্যবহার করতে পারবেন। হ্যাঁ, বলছি মৃত সাগর নিয়ে।
মৃত সাগরে কেউ ডুবে না কেন?
জর্ডান ও ইসরায়েলের সীমান্তে অবস্থিত মৃত সাগর প্রকৃতপক্ষে একটি হ্রদ। এর দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৬১ কিলোমিটার, প্রস্থ সর্বোচ্চ ১৮ কিলোমিটার ও গভীরতা প্রায় ১ হাজার ২৪০ ফুট। প্রাচীন রোমানরা এই হ্রদটির নাম রাখে ডেড সী বা মৃত সাগর। এই হ্রদের পানি সমুদ্রের পানির চেয়েও ৮গুণ বেশি লবণাক্ত।এতো বেশি লবণাক্ততার জন্যই এই জলে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণী বাঁচতে পারে না। এজন্যই এর নাম মৃত সাগর।
অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণেই সেখানে পানির প্লবতা বেশি।প্লবতা হচ্ছে, পানির দ্বারা কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত উর্ধমুখী চাপ। যখন কোনো বস্তু পানিতে পড়ে তখন বস্তু নিচের দিকে বল প্রয়োগ করলে পানি উপরের দিকে বল প্রয়োগ করে। পানির প্লবতা বস্তুর প্রযুক্ত বলের চেয়ে বেশি হলে বস্তুটি ভাসে। এই মৃত সাগরেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে আসছে। এখানে পানির প্লবতা এতোই বেশি যে আপনি চাইলেও ডুবতে পারবেন না।
মৃত সাগর পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জায়গা। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চৌদ্দশ ফুট নিচে অবস্থান করছে। পূর্বে বর্তমান জর্ডান নদী ও মৃত সাগর ভূমধ্যসাগরের পানি দ্বারা প্লাবিত হতো। সেসময়ে প্রায় ৩৭ লাখ বছর পূর্বে জেজরিল উপত্যকার মধ্য দিয়ে ভূ-মধ্যসাগরের পানি মৃত সাগরে আসতো। সেসময় মৃত সাগরের পানির লবণাক্ততা স্বাভাবিক ছিলো। তারপরে প্রায় বিশ লাখ বছর পূর্বে জেজরিল উপত্যকা ও ভূ-মধ্যসাগরের মাঝের অংশ উঁচু হতে থাকে।
তখন মৃত সাগর বড় একটি হ্রদ্রে পরিণত হয়। ভূ-মধ্যসাগরে পানি দ্বারা আর প্লাবিত না হওয়ায় ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয়ে মৃত সাগরের পানি কমতে থাকে। কিন্তু পানি বাষ্পীভূত হলেও সেখানকার লবণ থেকেই যায়৷ তাই ধীরে ধীরে এই হ্রদের লবণাক্ততাও বাড়তে থাকে। আর এই লবণের খনিজ উপাদানও অন্যান্য সাগরের পানির খনিজ উপাদান থেকে ভিন্ন। মৃত সাগরের পানিতে ৫০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড ৩০ শতাংশ, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ১৪ শতাংশ এবং পটাশিয়াম ক্লোরাইড ৪ শতাংশ আছে।
মৃতসাগর অঞ্চলটি খুবই আরামদায়ক অঞ্চল।এই অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু স্থান হওয়ায় এখানে সূর্যের অতি বেগুণী রশ্মি তেমন পৌঁছাতে পারে না। তাছাড়াও নিচু জায়গা হওয়ায় এখানে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বেশি। এসব কারণে এই জায়গাটির পরিবেশ আরামদায়ক। তাছাড়াও অত্যাধিক খনিজ লবণের উপস্থিতি এই জায়গাটিকে গবেষণার জন্যও আদর্শ করেছে। খনিজ লবণে সমৃদ্ধ এই মৃত সাগরের কাদা অনেক প্রসাধনীগুণের অধিকারী। এখানে ঘুরতে আসা মানুষজন প্রাকৃতিক প্রসাধনী হিসেবে এই কাদা গায়ে মেখে সানবাথ করেন। অতি বেগুণী রশ্মির স্বল্পতার জন্য এই স্থান সানবাথের জন্য অনেক উপযোগী।
দিন দিন মৃত সাগরের গভীরতা কমে যাচ্ছে। মৃত সাগরে কোনো বড় জলরাশির প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই। '৬০ এর দশকে ইসরাইল তাদের জর্ডান নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দিলে এক প্রান্ত থেকে প্রায় পানি শূন্য হয়ে পরে মৃত সাগর। পরবর্তীতে জর্ডানও তাদের ইয়ারমুখ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। ফলে বাইরে থেকে কোনো পানির উৎস না থাকায় মৃত সাগর আবদ্ধ হয়ে পরে।
এমতবস্থায় মৃত সাগরের পানি আর বাড়ার কোনো উপায় নেই বরং দিন দিন এই মৃত সাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে এখানকার পানি কমে যাচ্ছে। মাত্র পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে মৃত সাগরের পানি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চারশ মিটারেরও নিচে নেমে গেছে। এখানে যারা ঘুরতে আসেন তারা এই অঞ্চলের শুষ্ক স্থানেও পানির স্তরের দাগ দেখতে পান। প্রতিবছর প্রায় ৫ মিটার করে মৃত সাগরের পানি নিচে নেমে যাচ্ছে। এনন হতে থাকলে হয়তো একদিন একদমই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মৃত সাগর।
নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ