রিফিউজিদের অপমান করলেন প্রিয়াঙ্কা!
শোবিজ ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৬ সোমবার | আপডেট: ০৯:০৪ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৬ সোমবার
তিনি অভিবাসী নন, রিফিউজি (শরণার্থী) নন, বহিরাগত বা বিদেশিও নন- তিনি স্রেফ একজন ভ্রমণকারী (ট্রাভেলার)। অন্তত সিএনটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের জন্য দেয়া হালের ফটোশুটে প্রিয়াঙ্কার চোপরা ওরফে পিসির পরনের স্যান্ডো গেঞ্জি এমন দাবিই করছে।
এতে পরিষ্কার লেখা রয়েছে- রিফিউজি, ইমিগ্রান্ট, আউটসাইডার, ট্রাভেলার। পরপর চার লাইনে লেখা এই চার শব্দের প্রথম তিনটিই লালকালির টানে কেটে দেওয়া। তার মানে রইলো শুধু শেষেরটা- ট্রাভেলার মানে পর্যটক বা ভ্রমণকারী।
ভ্রমণ বিষয়ক অভিজাত ম্যাগাজিন কন্ডে নাস্ট ট্রাভেলার (সিএনটি)-এর ভারতীয় সংস্করণের অক্টোবর-নভেম্বর সংখ্যার কভারে আঁটসাট স্যান্ডো গেঞ্জিতে ভেজা চুলের মোহনীয় আবেশে এ যাবতকালের অন্যতম আকর্ষক ভঙ্গিতে নিজেকে তুলে ধরেছেন বলিউডের জংলি-বিল্লি খ্যাত প্রিয়াঙ্কা। আলোচিত শব্দগুচ্ছ লেখা রয়েছে ওই সাদা গেঞ্জিটিতে।
কেউ কেউ এর সমালোচনাও করছেন। ওইরকম পোশাক আর আবেদনময় ভঙ্গি নয়- সমালোচনা হচ্ছে পিসির গেঞ্জিতে লেখা কথাগুলো নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন প্রিয়াঙ্কার মতো সংগ্রামী অভিনয় শিল্পী সিরিয়াস বিষয়গুলোকে এভাবে হাল্কাভাবে প্রকাশ না কলেও পারতেন। হালে অভিবাসী আর রিফিউজি ইস্যু নিয়ে দুনিয়া তোলপাড় অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। এর মাঝে রয়েছে ইতালি উপকূলে ডুবে অভিবাসী শিশু আয়মান কুর্দির মারা যাওয়ার ঘটনাও। অপরদিকে, একজন দক্ষিণ এশীয় বাদামি চামড়ার নারী হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ চলচ্চিত্র কারখানা হলিউডে জায়গা করে নিতে প্রিয়াঙ্কাকে লড়তে হয়েছে অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। বর্ণবাদী, যৌন শোষণবাদী হিসেবে হলিউডের বদনাম কিন্তু দুনিয়াজোড়া। এ ধরনের বিষয়সহ অন্যান্য অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে তিনি এখন হলিউডে শক্ত মাটি পেয়েছেন।
হিট টিভি সিরিজ কোয়ান্টিকোতে কাজের সূত্রে বিশ্বের সবচেয়ে দামি টিভি তারকাদের একজন প্রিয়াঙ্কা এখন বছরের একটা উল্লেখযোগ্য সময় কাটাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথমদিকে তাকে বর্ণবাদী অনেক খোঁটা শুনতে হয়েছে। সেসব কারণেই সম্ভবত ম্যাগাজিন কভারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তিনি এবার একটা মোক্ষম জবাব দিতে চেয়েছেন আমেরিকানদের যে আমি আসলে তোমাদের এখানে অভিবাসী হয়ে আসিনি, এসেছি পর্যটক হিসেবে।
এখানটাতেই আরেক ধরনের সূক্ষ্ম বর্ণবাদী ইস্যুর গন্ধ পেয়েছেন অনেকে। তারা বলছেন, ‘অভিবাসী’, ‘বহিরাগত’ আর ‘শরণার্থী’ শব্দ তিনটির সঙ্গে ‘পর্যটক’ শব্দের অর্থগত পার্থক্য আকাশ-পাতাল। পর্যটকদের অনেকেই ব্যাংকে জমানো বিত্তের চর্বির জোরে বিশ্বজুরে আমোদ-স্ফূর্তির মোহে ঘুরে বেড়ান, কেউ করেন নির্দোষ অবসর বিনোদন- কিন্তু একজন শরণার্থীর জীবন থাকে হাতের মুঠোয়, সহায়-সম্পত্তি ফেলে পরিবার পরিজন নিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ছুটে পালাতে হয় আশ্রয়ের খোঁজে অন্য দেশে, যেখানে কেউ নেই দুহাত বাড়িয়ে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য। উল্টো সইতে হয় হাজারো গঞ্জনা, অপমান।
অভিবাসীদের বিষয়টিও অনেকটা তাই। আর যাদের বহিরাগত-বিদেশি বলা হয় তাদেরও নিকট অতীত থাকে এমনি অপ্রীতিকর ইতিহাস নির্ভর। তাই প্রিয়াঙ্কা, নিজের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের সুচতুর প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রকারান্তরে অপমান করেছেন রিফিউজিদের-অভিবাসীদের। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি তাদের চেয়ে উন্নত।
আসলে রূপ-যৌবন-মেধা-বুদ্ধিমত্তা এবংবিধ নানা পরীক্ষায় ইতোমধ্যে অনেকবার উতরেছেন সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা। তবে সবকিছুর পরেও সূক্ষ্ম রুচি আর বিবেচনাবোধের যে বিষয়গুলো অনেক বোদ্ধা আশা করেন এ ধরনের সেলিব্রেটিদের কাছে, তা হয়তো এখনো পরিপক্ক হয়ে উঠেনি ওয়াইল্ড-ক্যাট মানে জংলি-বিড়ালনি প্রিয়াঙ্কা চোপরার।
তবে এটা ঠিক, তার কাজে তিনি সফল হয়েছেন, উদ্দেশ্য ছিল আলোচনায় আসা, আলোড়ন তোলা- তা কিন্তু হয়ে গেছে।
নিউজওয়ান২৪.কম/এসএল