NewsOne24

রিভিউ খারিজ: ফাঁসিতে ঝুলতে হবে ‘জামায়াতের টাকার সিন্দুককেও’

স্টাফ রিপোর্টার

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ১১:১৩ এএম, ৩০ আগস্ট ২০১৬ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩৮ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০১৬ মঙ্গলবার

প্রিজন ভ্যান থেকে মীর কাসেমের দুইহাতে দেখানো ‘ভি চিহ্ন’ শেষতক ‘অর্থহীন’ বলেই প্রমাণিত হলো

প্রিজন ভ্যান থেকে মীর কাসেমের দুইহাতে দেখানো ‘ভি চিহ্ন’ শেষতক ‘অর্থহীন’ বলেই প্রমাণিত হলো

একাত্তরের নৃশংস ঘাতক আল বদর বাহিনীর অন্যতম নেতা যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা নেই এখন সামনে। বর্তমানে তেষট্টি বছর বয়সী এই যুদ্ধাপরাধীর এখনকার অবস্থান গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার সকালে এই রায় ঘোষণা করেন।

সকাল ৯টায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এজলাসে আসেন। এরপর তিনি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য করা মীর কাসেমের আবেদন খারিজের কথা জানিয়ে বলেন, “ডিসমিসড”। আপিল বেঞ্চের বাকি চার সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

আর কোনো আইনি বাধা নেই

এর ফলে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যাের অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর ‘অর্থভাণ্ডার’ বা ‘টাকার সিন্দুক’ হিসেবে খ্যাত আল বদর কমান্ডার কাসেমের ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা থাকল না।

তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি যারা সব আইনি আনুষ্ঠানিকতা শেষে দণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকেন- প্রচলিত প্রথানুযায়ী তারা কেবল নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন। একাত্তরের কুখ্যাত আল বদর নেতা ‘বাঙালি খান’ হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম এখন যদি এখন প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন- সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাতে সাড়া দিলে ভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেই আবেদন ফিরিয়ে দিলে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হবে দ্রুতই।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করে অপরাপর শীর্ষ  নেতাদের শাস্তি কার্যকর শুরুর আগে জামায়াতে মীর কাসেমের দলীয় অবস্থান ছিল পঞ্চম শীর্ষ নেতা হিসেবে। যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগে তার অগ্রজ চার শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধ মামলায় চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকা ষষ্ঠ ব্যক্তি হতে যাচ্ছেন কাশেম। জামায়াতের বাইরে এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। রায় কার্যকর হওয় অপর চার যুদ্ধাপরাধী হলো মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি শিগগিরই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

রক্ত হিম করা আতংকের নাম ছিল আল বদর কমান্ডার মীর কাসেম

মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রক্ত হিম করা এক আতংকের নাম ছিল আল বদর কমান্ডার মীর কাসেম। একাত্তরের সেই ত্রাস কাসেম পরবর্তীতে স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় আর রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে অত্যঅন্ত দ্রুততায় নিজের ও দলের উন্নতি ঘটিয়ে জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা বা ‘টাকার সিন্দুক’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।

মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরে ১৯৮৫ সাল থেকে মূল দল জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত হয় সে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার পাকি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আল বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান- তা উঠে এসেছে ট্রাইব্যুঠনাল ও আপিল বিভাগের রায়ে।

গ্রেফতার ও বিচার

মীর কাসেমের পত্রিকা হিসেবে পরিচিত নয়া দিগন্তের মতিঝিলের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০১২ সালের ১৭ জুন যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়ায় শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রসিকিউশন আনা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে দশটিতে দোষী সাব্যস্ত কাসেম। বাকি অভিযোগুলোতে খালাস দেওয়া হয় তাকে। ১১ ও ১২ নম্বর অপরাধের ঘটনায় কাসেমকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মোট ৭২ বছরের কারাদণ্ডও হয় তার। চূড়ান্ত রায়ে ১১ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় বহাল থাকে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডও বহাল থাকে।

নিউজওয়ান২৪.কম/বিটি

‘জামায়াতের অর্থভাণ্ডার’ মীর কাসেম সময় পেলেন আরও একমাস