‘ভুয়া র্যাব’ ছিনতাই-ডাকাতি!
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ০২:২৯ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
ফাইল ছবি
তাদের টার্গেট বিভিন্ন ব্যাংকের বড় বড় গ্রাহক। টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে তারা পথরোধ করতো। পরনে থাকতো র্যাবের জ্যাকেট, হাতে ওয়্যারলেস সেট, ওয়াকিটকি ও কোমরে পিস্তল। নিজেদের র্যাবের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতো। টার্গেট করা ব্যক্তিকে কৌশলে গাড়িতে তুলে গামছা দিয়ে চোখ-মুখ বাঁধা হতো।
তারপর সুবিধাজনক নির্জন স্থানে নিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হতো ভুক্তভোগীর কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন। সবকিছু নেয়ার পর ভুক্তভোগীকে সেখানে রেখেই তারা পালিয়ে যেত। রাজধানী ও তার আশেপাশের এলাকায় র্যাব পরিচয়ে বেশ কিছুদিন ধরে এভাবেই ছিনতাই করে আসছিল কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সম্প্রতি এমন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন, কাসেম ওরফে জীবন (৫৮), ইব্রাহিম খলিল (৪০), জাকির হোসেন সুমন (২৭), বিল্লাল হোসেন ওরফে আসলাম (৩২), আবদুল মান্নান (৫০), সোহাগ (২৭) ও আরিফ (২৮)।
রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানিয়ে সংস্থাটির মিডিয়া শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি, দুটি হ্যান্ডকাফ, একটা ওয়াকিটকি সেট, দুটি র্যাবের জ্যাকেট, একটি র্যাব বোর্ড, দুটি সিগন্যাল লাইট, ছয়টি বড় লাঠি, দড়ি, চারটি চোখ বাঁধার কালো কাপড়, ২৮ হাজার টাকা ও একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
মুফতি বলেন, এই চক্রের মূলহোতা কাশেম ওরফে জীবন। দলের স্থায়ী সদস্য ১০-১১ জন। চক্রটি বিভিন্ন হাইওয়েতে ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে। এই চক্রটি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহককে টার্গেট করে অপহরণ করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইয়ের সময় তারা নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে। প্রথমে তারা ১-২ জন গ্রাহক সেজে ব্যাংকে প্রবেশ করে। অপর একটি দল তাদের তথ্যানুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করে।
যেকোনো একজন গ্রাহককে টার্গেট করে তারা, যিনি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলন করেছেন। তিনি যখন টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হন, তখন ব্যাংকের ভেতরে থাকা গ্রুপটি বাইরে থাকা গ্রুপটিকে তাকে দেখিয়ে দেয়। এভাবেই তারা একের পর এক ছিনতাই করতো। তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে দুটি ও অক্টোবরে ১১টি অপহরণ করেছে এই চক্রটি। এরা হবিগঞ্জ, সীতাকুণ্ড, আশুলিয়া, চান্দিনা, কেরানীগঞ্জ, নরসিংদী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, সিরাজগঞ্জ, টঙ্গী, চৌদ্দগ্রামসহ বিভিন্ন হাইওয়ে এলাকায় অপহরণ করে।
এক ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, কেরানীগঞ্জের দেলোয়ার হোসেনের একটি গরুর খামার আছে। এজন্য প্রতি বছর তিনি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলেন। এবারো তিনি ওই পরিমাণ টাকা তোলেন। টাকা উত্তোলন করে সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার সময় র্যাব পরিচয়ে গত সপ্তাহে তাকে অপহরণ করে। এ সময় তার কাছে থাকা ৭ লাখ টাকা নিয়ে যায় চক্রটি। এরকম আরো অনেক ভুক্তভোগী র্যাবের কাছে অভিযোগ করেছেন।
অপহরণের শিকার সার্জেন্ট (অব.) রফিক বলেন, কুমিল্লার চান্দিনা থেকে গাড়িতে তুলেই তার চোখ বেঁধে ফেলে চক্রটি। একটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে তিনি ফিরছিলেন। গাড়িতে তুলে তাকে মারধর করা হয়। তাদের সবার গায়ে র্যাবের জ্যাকেট ছিল। প্রাণভয়ে তিনি তার কাছে থাকা সবকিছু তাদেরকে দিয়ে দেন। তারা টাকা নিয়ে গাড়ি থেকে তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস