NewsOne24

পর্দার অপরাধ, বাস্তবের অপরাধী

নিউজ ডেস্ক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ০৯:৪৯ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

রুপালি পর্দার ভায়োলেন্স মানেই মনে এক উত্তেজনা কাজ করে। আর এর ফলে অনেকেই প্রভাবিত হয় এবং পর্দার চরিত্রের সঙ্গে নিজেক বদলে ফেলার চেষ্টা করে। খেয়ালের বশে নায়ক হতে সারা জীবনের জন্য খলনায়কে পরিণত হয়। এমনই কিছু অপরাধের কথা আজ নিউজওয়ান২৪ এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে যা রুপালি পর্দায় দেখে বাস্তবে নিজের জীবনে প্রয়োগ করেছিলেন তারা। 

নব্বইয়ের দশকে দারুণ জনপ্রিয় একটি হরর ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘স্ক্রিম’। ২০০১ সালের নভেম্বরে ট্রাক ড্রাইভার থিয়েরি জারাডিন, ১৫ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্রীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এলিসন নামের সে ছাত্রীকে বাসায় ডেকে যৌন মিলনের প্রস্তাব দেয় থিয়েরি। এলিসন মানা করে দেয়। পাশের ঘরে গিয়ে ‘স্ক্রিম’ সিনেমার অনুকরণে সে মুখোশ পরে। ফিল্মের শুরুতে যেভাবে দেখানো হয়েছে তেমনিভাবে বড় দু’টি ছুরির সাহায্যে মেয়েটিকে ৩০ বারেরও অধিক আঘাত করে। খুনের পর নিজেই পুলিশ ডেকে আত্মসমর্পণ করে। তার নামে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড কিংবা তার মানসিক অস্থিতিরও কোনোরূপ মেডিক্যাল রেকর্ড ছিল না।

নিউইয়র্কে ২০০৯ সালের ‘মেমোরিয়াল ডে’তে হাতে বানানো বোম বিস্ফোরিত হয়। জানেন অপরাধী কে ছিলেন? মাত্র ১৭ বছরের এক তরুণ, কাইলিশ। কোনো অপরাধ চক্রের সঙ্গে তার কোননো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। অন্যান্যদের মতই জীবনযাপনে অভ্যস্ত, মাঝে মাঝে স্থানীয় বক্সিং ক্লাবে যাওয়াটা শখ। ১৯৯৯ সালের ‘ফাইট ক্লাব’ সিনেমাটি দেখে কর্পোরেট মার্কিনীদের ওপর এমন একটি আক্রমণের প্রভাব দেখার ইচ্ছে জাগে তার!

‘টোয়াইলাইট’ দেখে ভ্যাম্পায়ার নিয়ে নতুন করে ভাবেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। ১৩ থেকে ১৪ বছরের এক ছেলে এক মাসের মধ্যে তার স্কুলের ১০ জনকে কামড়ে দেয়। বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে ছেলেটির বাবা জানায়, ছেলে টোয়াইলাইট সিনেমার ভক্ত এবং হয়তো সে কারণেই সহপাঠীর ঘাড়ে দাঁত বসাতে সে দ্বিতীয়বার ভাবেনি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পরে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

২০০৪ সালে ১৪ বছরের মাইকেল হার্নান্দেজ এক সহপাঠীকে স্কুলের বাথরুমে ডেকে নিয়ে ৪০ বারেরও অধিক ছুরিকাঘাত করে। ওইটুকু একটা ছেলের ভেতর কেমন হিংস্রতা কাজ করলে সে এমন পাশবিক আচরণ করতে পারে! এই নৃশংসতার জন্য তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ফ্লোরিডার এই বালক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায় ‘আমেরিকান সাইকো’ এবং ‘দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস’ সিনেমা দুটো দেখেই সে প্রভাবিত হয়েছিলো।

এবারের গল্পটা জোড়া খুনিদের নিয়ে। ‘ন্যাচারাল বর্ন কিলারস’ (১৯৯৪) সিনেমা দেখে শুধু যে তারা একইরকম খুন (কপিক্যাট মার্ডার) করতে উৎসাহিত হয় তাই না সে কাহিনী নিজেরাই আবার গর্ব করে অন্যদের কাছে বলতেও যায়। উজ্জ্বল একাডেমিক রেকর্ডের অষ্টাদশী একটা মেয়ে সারাহ এডমন্ডসন যখন মাদকাসক্ত বেন ডারাসের (১৭) সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে তখন কে ভেবেছিল তদের মানসিক বিকৃতি ঐ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে! সিনেমার মত করেই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তারা পরিকল্পনামাফিক এগোতে থাকে।

১৯৯৫ সালে প্রথম পালা আসে বেনের। ১৭ বছরের বেন প্রথমে ডাকাতি এবং পরে গুলি করে হত্যা করে এক পানীয় দোকানের কর্মীকে। এরপরই আসে সারাহর পালা। লুইজিয়ানার এক ক্যাশিয়ারকে সে একই পদ্ধতিতে গুলি করে। প্রাণে বেঁচে গেলেও আজীবনের জন্য পঙ্গু হয় সে। বাড়ি ফিরে এই জুটি বন্ধুদের কাছে চড়া গলায় নিজেদের ‘বীরত্ব’ জাহির করতে থাকে। পাগলে প্রলাপ শুনে তক্ষুণি তাদের গ্রেফতার করা হয়। বেন এখনো যাবজ্জীবনের সাজা ভোগ করছে আর সারা ২০১০ সালে প্যারোলে মুক্তি লাভ করেছে।

শো-টাইম টেলিভিশন নেটওয়ার্কে প্রচারিত মার্কিন ক্রাইম ড্রামা সিরিজ ‘ডেক্সটার’ থেকেও সিরিয়াল কিলিং এর ধারণা এক তরুণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে এন্ড্রু কনলি (১৭), তার ছোট ভাই কনারকে (১০) শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং লাশ একটি পার্কে ফেলে দেয়। হত্যার কয়েক সপ্তাহ পরে কনলি তার গার্লফ্রেন্ডকে জানায়, সে শুধু টেলিভিশনে দেখা খুনীটার মত হতে চেয়েছিল। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদেও একই কথা বলেছে সে।

২০১২ সালের ২০ জুলাই কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের অরোরা শহরের এক সিনেমা হলে জেমস হোমস নামক এক তরুণ নির্বিচারে গুলি চালান। ১২ জন সেখানেই মারা যান আহত হন আরো ৭০ জন। তখন পর্দায় প্রদর্শিত হচ্ছিল ‘ডার্ক নাইট রাইজেস’। স্ক্রিনিং শুরুর ২০ মিনিট পর তিনি বেড়িয়ে যান এবং সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র জোকারের কস্টিউমে নিজেকে সাজিয়ে ফিরে অস্ত্রশস্ত্রসহ ফিরে আসেন। হলে তখন আরো অনেকেই জোকারের কস্টিউমে সেজেছিল। ফলে উপস্থিত দর্শকেরা বুঝতেও পারেন নি কী হতে চলেছে তাদের সঙ্গে। মানসিক স্থিতিহীন এই খুনীকে প্রথমে মৃত্যদণ্ড এবং পরে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

নিউজওয়ান২৪/এএস