মৃতদের আক্রমণ
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ০২:২২ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
ফাইল ছবি
হলিউডের সিনেমায়, উপন্যাস কিংবা ভিডিওগেমে প্রায়শই জম্বির দেখা মেলে। মৃত্যুর পরে জেগে ওঠা মানুষ হলো জম্বি। এরা মানুষখেকো এবং এদের কামড়ে যে কেউ জম্বিতে পরিণত হয়। জম্বিরা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অনেক জনপ্রিয়।
পশ্চিমা ভূত, পেত্নীদের মত এরাও কাল্পনিক। আবার অনেক পশ্চিমাদের মতে জম্বিদের অস্তিত্ব আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটি ঘটনা “দ্য এটাক অফ ডেথ” নামে পরিচিত। ঘটনাটি জম্বিদের অস্তিত্বের সত্যতা প্রমান করে। কিন্তু আসলেই কি জম্বিদের অস্তিত্ব ছিল না-কি এটি একটি নিছক কল্পনা?
যুদ্ধের সময় অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে যা বাস্তবকে হার মানায়। আর তা যদি হয় বিশ্বযুদ্ধ তাহলে তো বলাই বালাই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই মানুষ যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। বিশ্বের মানুষ এর আগে এত মৃত্যু বা মানবসভ্যতার ক্ষতি দেখেনি। কিন্তু ১৯১৫ সালে সোভিয়েত বর্ডারে এমন এক ঘটনা ঘটে যা যে কোনো পরিস্থিতিতে বিশ্বাস করা কষ্টকর। সোভিয়েত সীমান্তে জার্মানরা দুইবার আক্রমণ করে বাজেভাবে পরাজিত হলে তৃতীয় আক্রমনে জার্মানরা এমন কিছু দেখতে পায় যা গল্পে বর্ণিত জম্বিদের মত। কিন্তু কি হয়েছিল ঐ যুদ্ধক্ষেত্রে যা জার্মানদের শুধু ভয়ই দেখায় না বরং পিছু হাটতেও বাধ্য করে?
ঘটনাটি ঘটে বর্তমান পোল্যান্ডের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত “অসউইক দূর্গে”। ধারণা করা হয়, ১৮৮২ থেকে ১৮৯২ সালের মধ্যে তৎকালীন রুশ সম্রাজ্য জার্মান ও অন্যান্য শক্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দূর্গটি নির্মাণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দূর্গ অনেক ভয়াবহতার সাক্ষী। তাছাড়াও এই দূর্গ রুশ সম্রাজ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এটি রুশ সম্রাজ্যের প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপ। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে রুশরা এই দূর্গে সৈন্য, রসদ ও অস্ত্র সমৃদ্ধ করতে শুরু করে। এটি রুশদের জন্য একটি ভাল সিদ্ধান্তই ছিল। কারণ জার্মান সৈন্যরা রাশিয়া আক্রমণের জন্য ১৯১৪ সালে সর্বপ্রথম এই দূর্গেই আঘাত হানে। কিন্তু ১৯১৪ সালে এই দূর্গের প্রতিরক্ষার কাছে জার্মান সৈন্যদের হার মানতে হয়।
জার্মানরা ১৯১৫ সালের বসন্তে আবার অসউইক দূর্গে আক্রমণ চালায় এবং এবারও ব্যর্থ হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনেক যুদ্ধক্ষেত্রের মত এটিও নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করার একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এমনি এক অস্ত্র ছিল বিসাক্ত গ্যাস। ১৯১৫ সালের ৬ আগস্ট জার্মানরা সোভিয়েত প্রতিপক্ষের উপর একটি নতুন গ্যাস এর পরীক্ষা চালায়। গ্যাসটি ছিল ক্লোরিন ও ব্রোমিনের মিশ্রন। আসউইক দূর্গ ১৫ মিটারের বিষাক্ত গ্যাসের মেঘে ঢেকে যায়। রুশরা এই আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না। এমনকি রাশিয়ান সৈন্যদের কাছে গ্যাস মাস্কও ছিল না। জার্মানরা ভেবেছিল যুদ্ধ সমাপ্ত এবং তারা দূর্গ জয় করে নিয়েছে। কিন্তু যা ঘটেছিল তা জার্মানদের কল্পনার বাইরে।
তখনো শতাধিক রুশ সৈন্য বেঁচে গিয়ে এবং দূর্গ প্রতিরক্ষা করছিল। কিন্তু জার্মান সৈন্যরা বেঁচে যাওয়া রুশদের অবস্থা দেখে রীতিমত থমকে যায়। জার্মানরা দেখতে পায় ক্যামিকেলে পুড়ে যাওয়া রুশ সৈন্যদের মুক। যারা তাদের দিকে আগাচ্ছে। একটু কাছে আসলে জার্মানরা দেখে রুশ সৈন্যদের শরীর থেকে মাংস খুলে পড়ছে, রক্ত বয়ে যাচ্ছে এমনকি কিছু কিছু সৈন্যের হৃদপিন্ড এবং অন্যান্য শারীরিক অঙ্গ দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় রুশ সৈন্যরা তাদের দিকে ধেঁয়ে আসছে। এই বীভৎস দৃশ্য দেখে জার্মান সৈন্যরা টিকে থাকতে পারেনি। সংখ্যায় বেশি হলেও তারা পালাতে বাধ্য হয়। এভাবেই একটি বিশাক্ত গ্যাস সৈন্যদের কল্পিত জম্বিদের মত পরিণত করে এবং জার্মানদের পরাজয়ও ডেকে আনে।
এই মৃত সেনাদের যুদ্ধের কথা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে রুশরা দূর্গ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এভাবেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে ‘দ্য এটাক অফ ডেথ’ স্থান করে নেয়। পরবর্তী সময়ে পোলিশ সৈন্যরা এই দূর্গে অবস্থান করে এবং দূর্গটি আবার পরিত্যাগ করা হয়। বর্তমানে আসউইক দূর্গ ভ্রমনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস