বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে ইসিকে নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ০২:০৪ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার
ফাইল ছবি
বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি আশফাকুল কামাল ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
গঠনতন্ত্রের সপ্তম ধারা বিলুপ্ত করায় রাজধানীর কাফরুলের বিএনপিকর্মী মোজাম্মেল হোসেন সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটের পক্ষে আদালতে আইনজীবী ছিলেন মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। তিনি জানান, এই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে একমাসের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে দল ভাঙার আশঙ্কায় গঠনতন্ত্রের একটি ধারা বাদ দিয়ে সংশোধিত গঠনতন্ত্র ২৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় দলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এম নুরুল হুদার (সিইসি) কাছে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেন।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারার ‘ঘ’তে বলা ছিল, ‘সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি’ বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে ভাঙতে সরকারের একটি মহল থেকে চেষ্টা-তৎপরতা চালানো হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর এই তৎপরতা গতি পেতে পারে। এই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ ব্যক্তি দলের সদস্যপদের অযোগ্য হবেন বলে যে কথাটি গঠনতন্ত্রে আছে, তা সামনে এনে ওই মহল বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য দলের একটা অংশকে ব্যবহার করতে পারে। এই আশঙ্কার কারণে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারাটি তুলে দেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব পাস হয়। আগের গঠনতন্ত্রের ৭ (ঘ) ধারাটি ছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু এত দিন দলটি নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র জমা দেয়নি। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে চিঠিও দেয়। ১ বছর ১০ মাস পর ওই ধারা বাদ দিয়ে ২৮ জানুয়ারি গঠনতন্ত্র জমা দিল দলটি।
বিএনপির গঠনতন্ত্রে ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ তারা হলেন: (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।
অবশ্য গঠনতন্ত্রের ৩-এ ‘সদস্য পদ লাভের যোগ্যতা’ ও ‘সদস্য পদ লাভের অযোগ্যতা’ ধারাটি বলবৎ আছে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনানুগ নাগরিক নন, এমন কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতায়, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার বিরোধী, গোপন সশস্ত্র রাজনীতিতে বিশ্বাসী, সক্রিয়ভাবে-সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা সমাজবিরোধী ও গণবিরোধী কোনো ব্যক্তিকে সদস্যপদ দেয়া হবে না।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, ৩ নম্বর ধারার নির্দেশনাই দলের যেকোনো কমিটির সদস্য ও সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্যতা হিসেবে ধরে নেয়া হবে।
নিউজওয়ান২৪/এমএস