পাঁচ পদের চা
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ০২:২১ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার
ফাইল ছবি
চা বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় পানীয়। চা একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস। এ উদ্ভিদের গাছের পাতা বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তৈরি করা হয় চা। বিশ্বজুড়ে হরেক রকমের চা রয়েছে এবং এগুলো স্বাদেও ভিন্ন। জেনে নিন বিশ্বের কিছু জনপ্রিয় চা সম্পর্কে-
১. পু'রেহ্ টি:
চীনের একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী পানীয়র নাম হল পু'রেহ্ টি। চীনে এটি এখনো হাজার বছর পুরানো প্রথাগত পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। এ চায়ের পাতাগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে চায়ের উপযোগী করা হয়। পাতাগুলো প্রথমে শুকানো হয় যাতে রোলিং করা যায়। এরপর রোলটিকে ফার্মানন্টেশন এবং অক্সিডেশন করা হয়, এর ফলে পাতাগুলো ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত করা থেকে শুরু করে চা পাতার উপযোগী করা পর্যন্ত প্রায় পনের বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই ভিন্টেজ চা একটি পিষ্টক দ্বারা সংকুচিত হয় যাকে শূ'পু বলে। এরপর ঐতিহ্যবাহী বাঁশের পাতাসহ প্যাক করা হয় যেটি টং নামে পরিচিত। ১৯৫০ এর দশকে হংকং এ হঠাৎ করে পু'রেহ্ চায়ের চাহিদা বেড়ে যায়। এটি খেতে মিষ্টি, সামন্য টক গন্ধ যুক্ত। এ চা প্রস্তুত করার জন্য গরম পানিতে পাতাগুলো ধুঁয়ে নিয়ে আবার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুঁয়ে নেয়া হয়। এরপর বান্ডেল থেকে ৮ থেকে ১০ গ্রাম পাতা নিয়ে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে বা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পানিতে গরম করতে হবে। ৫ থেকে ৭ মিনিট নাড়াচাড়া করে নামিয়ে পরিবেশন করলেই হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়, পু'রেহ্ চা খাওয়ার কারণে রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা কমে যায়।
২. ভেষজ চা:
ভেষজ চা মূলত মশলা, ফল, ভেষজ গাছের কান্ড দিয়ে তৈরি একটি পানীয়। এ ধরনের চা মাঝে মাঝে ফলের বীজ বা ফুল দিয়েও তৈরি করা হয়। মানুষ এ ধরনের চা প্রাচীনকাল থেকেই তৈরি করে আসছে। যেমন- আদা চা, মাথা ব্যাথাসহ শারীরিক দূর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। আদা চা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ব্যাপকভাবে সাহায্য করে আদা চা। ড্যান্ডেলিয়্যান টি- এটি বিশেষভাবে গাছের মূলক দিয়ে তৈরি এক প্রকার চা যা অগ্ন্যাশয়, লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যদি কারো স্থুলতা সমস্যা থাকে তবে এ ড্যান্ডেলিয়্যান চা তার জন্য বেশ উপকারি। যষ্টিমধুর চা মানব দেহের এইচডিএল এর পরিমান বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারি। এছাড়াও হার্টের সমস্যা, ওজন কমানোসহ নানা উপকার করে থাকে যষ্টিমধুর চা।
৩. ম্যেট টি:
দক্ষিণ আমেরিকার একটি ঐতিহ্যবাহী পানীয় ম্যেট টি। এটি ইয়েরবা ম্যেট নামেও পরিচিত। একে পর্তুগীজ ভাষায় চিমাররাও বলা হয়। গত শতকে এটি যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, পর্তুগালসহ আশেপাশের অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ম্যেট চায়ের পাতাগুলো বাজারজাত উপযোগী করতে প্রথমে পাতাগুলো গাছ থেকে তুলে শুকানো হয়, পরবর্তীতে পিষে সব শেষে গুঁড়ো করা হয়। এ গুঁড়োকেই ইয়েরবা বলা হয়। বাজারে চিনা মাটির পাত্রে এ চা পাওয়া যায়, সেখান থেকে খুব সামান্য পরিমানে পাতা নিয়ে ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গরম করলেই তৈরি হয়ে যায় ম্যেট টি। এটি এতই জনপ্রিয় যে কিছু কোম্পানি তাদের কেটলিগুলো বিশেষ ভাবে তৈরি করে শুধুমাত্র ম্যেট টিয়ের জন্য। ম্যেট চায়ে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি এবং সেই সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
৪. হোয়াইট টি:
হোয়াইট টি তৈরি হয় মূলত অপূর্ণাঙ্গ বা অল্পবয়সী পাতা এবং কুঁড়ি থেকে। গ্রীন টি বা ব্ল্যাক টি যেভাবে গুঁড়ো করে অথবা অক্সিডাইসাইড করতে হয় এই চায়ে সেরকম কিছুই করতে হয় না। গাঁজন বা অন্যান্য প্রক্রিয়া ছাড়াই শুধু শুকানোর মাধ্যমে উৎপন্ন করা হয় এ চা। এর নাম হোয়াইট টি হলেও এটি দেখতে কিন্তু একেবারে সাদা নয়।এ চা চীনে প্রাথমিকভাবে চাষ করা হয়েছিল, বিশেষ করে ফুজিয়ান প্রদেশে।কিন্তু বর্তমানে এটি নেপাল,থাইল্যান্ড, তাইওয়ান সহ আরো কিছু দেশ এ পাওয়া যায়।এটি ভালোই ব্যয়বহুল পানীয়, স্থান বেদে এর নাম ২০-৬০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।এ চায়ে ক্যাফিন এর পরিমান অন্যান্ন চায়ের থেকে কম।
৫. গ্রিন টি:
প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে সর্বপ্রথম চীনে মাথা ব্যথার ওষুধ হিসেবে গ্রিন টির ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে এ চায়ের চাহিদা সব থেকে বেশী। বিভিন্ন ধরণের গ্রিন টি রয়েছে যেগুলো উৎপাদন, বর্ধিত অবস্থা এবং ফসলের সময় ব্যবহৃত উপজাতিগুলোর উপর নির্ভর করে। গ্রিন টি প্রস্তুত প্রণালী খুবই সহজ ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩ মিনিট ধরে উত্তপ্ত করে ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যায় গ্রিন টি। স্থুলতা দূর করতে গ্রিন টি খুবই উপকারি। এছাড়া এটি রক্তে ক্লোস্টরেল কমায়, গ্রিন টিকে বলা হয় মেডিসিন্যাল ড্রিং। বলা হয়ে থাকে গ্রিন টি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। ধারনা করা হয় এটি স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, চর্ম ক্যান্সার এবং মুখের ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের উপকার করে থাকে।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস