মাদক-সম্রাটকে অফিসে ডেকে হত্যার হুমকি দিলেন প্রেসিডেন্ট!
বটতলা ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০৬:১৪ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৬ শনিবার | আপডেট: ০৮:৩৩ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৬ শনিবার
প্রেসিডেন্ট রডরিগোর (বামে) সামনে জবুথবু ব্যবসায়ী কাম মাদক-সম্রাট পিটার
আমি তোমাকে হত্যা করবো! কুখ্যাত মাদক সম্রাটকে অফিসে ডেকে সরাসরি মুখের ওপর এভাবে বলে দিলেন ফিলিপিনি প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। গতকাল (শুক্রবার) ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপের দাবাও শহরে এক সাক্ষাতে মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা দেশটির প্রেসিডেন্ট এই হুমকি দেন।
ওই সাক্ষাতে প্রেসিডেন্ট রডরিগো মাদক সম্রাট পিটারকে যেভাবে ধমকালেন তা যেন কোনো হলিউডি গ্যাংস্টার কেন্দ্রিক সিনেমার চিত্রনাট্য। বিষয়টি ফিলিপাইনসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
অভূতপূর্ব ওই মিটিংয়ে প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো একপর্যায়ে ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, “আমি তোমাকে হত্যা করবো… আমি তোমাকে বিনাশ করে ছাড়বো!”
পিটারের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের আলোচিত ওই বৈঠকের একটি ভিডিও ছাড়া হয়েছে সরকারি একটি ইউটিউব চ্যানেলে। শনিবার আপলোড করা ওই ভিডিওর ক্যাপশনে পিটারকে দেশের অন্যতম শীর্ষ ড্রাগলর্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চাইনিজ বংশোদ্ভূত পিটার লিম ফিলিপাইনে অতি পরিচিত এক নাম। গত সাত জুলাই প্রেসিডেন্ট এক টিভি ভাষনে `মাদক সম্রাট` হিসেবে তার নাম উল্লেখ করেন।
শুক্রবার মিন্দানাওয়ের যেই দাবাও শহরের মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিসে পিটারকে ডেকে ধমকালেন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো- লম্বা সময় ধরে সেই শহরের মারকুটে মেয়র ছিলেন তিনি। চরম নিষ্ঠুর-নির্মম আর কঠোর হস্তে দমন করেছেন অপরাধ। ওই সময়টায় এমন ঘটনা অহরহ ঘটতো যে আগের দিন স্থানীয় রেডিওতে মেয়র অভিযুক্ত অপরাধীদের নাম উল্লেখ করেছেন আর পরদিন তাদের লাশ পাওয়া যেত শহরের রাস্তায়।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্তের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয় মেয়র রদ্রিগো গত মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয়ের মাধ্যমে দেশের প্রেসিডেন্ট হন। ক্ষমতায় বসে এ যাবত প্রায় ৪০০ মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছেন। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন।
তিনি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে দেশের নামী-দামি রাজনীতিক ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন মাদক ব্যবসায়ে সংশ্লিষ্টতার।
বিজয়ী হলে মাদক ব্যবসায়ী আর অন্যান্য অপরাধীদের হাজারে হাজারে হত্যা করা হবে- অনেকটা এমন প্রতিশ্রুতিই তিনি দিয়েছিলেন মাদক আর নানাবিদ অপরাধে হালে নাভিস্বাস ওঠা ফিলিপিনোদের।
এরপর রদ্রিগো ক্ষমতায় আসার পর দেশজুড়ে গণহারে মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যায় অভিযান শুরু হলে মানবাধিকার সংগঠনসহ বিরোধী রাজনীতিকরা সমালোচনামুখর হয়ে ওঠে। তবে তিনি সেসবে পাত্তা দেননি। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন- তাদের সবাই পুলিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল এবং প্রত্যেকটি ঘটনারই প্রত্যক্ষ তদন্ত হয়েছে।
ঠেলার নাম বাবাজি!
এদিকে, পিটার লিম নামে দেশের আলোচিত ওই ব্যবসায়ীই যে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীও- তা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ফিলিপিনোদের কাছে। পিটার অবশ্য প্রেসিডেন্টের কাছে দাবি করেছেন, তিনি আসলে সেই পিটার নন যাকে তিনি অভিযুক্ত করছেন। তবে তিনি এটা স্বীকার করেন যে, মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৯৯৭ সালে তাকে তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছিল।
মোট কথা পিটার মারাত্মক ভীত হয়ে পড়েছেন প্রেসিডেন্টের হুমকি খেয়ে। এ অবস্থায় তিনি প্রেসিডেন্টকে প্রতিশ্রুতি দেন তার অপরাধ বিরোধী অভিযানে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবেন।
শুধু তাই নয়, ‘রগচটা’ প্রেসিডেন্ট রদ্রিগোকে পিটার বলেন, “আপনার মতো মানুষকে পেয়ে আমাদের জাতি ভাগ্যবান। আপনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে পারেন। আপনি সত্যিকারের কাজের লোক।”
পিটারকে হুমকিতে প্রেসিডেন্ট নাকি আরও বলেন, তার কথা না শুনলে পিটার সেখান থেকে গিয়ে প্লেন থেকে বাইরে পা রাখা মাত্রই তাকে হত্যা করা হবে।
পিটার ওই কথায় কতোটা `সোজা আলিফ` হয়ে গেছেন তার প্রমাণ ওপরের বক্তব্যেই আছে। একেই বোধহয় গ্রামীণ ভাষায় বলে ‘ঠেলার নাম বাবাজি!”
নিউজওয়ান২৪.কম/একে