`ত্রিসূর্যা গ্রহ`: যেখানে ঘটে পরপর তিন সূর্যের উদয়-অস্ত
বিজ্ঞান ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:২১ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৬ শনিবার | আপডেট: ১২:১৪ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৬ রোববার
শিল্পীর দৃষ্টিতে প্লানেট এইচডি১৩১৩৯৯এবি
এমন দৃশ্যপট কি কল্পনা করা যায় যে দিনে তিনটি সূর্যের উদয় এবং অস্ত দেখা যাবে একই গ্রহ থেকে! অনেক সময় আমাদের কল্পনায় আসে না- এমন বাস্তবতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ঠিক তাই হয়েছে। জ্যোতির্বিদরা এমনই এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন যার সূর্য তিনটি।
তবে একই গ্রহের একাধিক সূর্য থাকার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই অবাস্তব মনে হলেও অসম্ভব না। এমন বিষয়ের সন্ধান আগেও মিলেছে। তো সম্প্রতি আবিস্কৃত প্ল্যানেট এইচডি১৩১৩৯৯এবি নামের `ত্রিসূর্যা গ্রহটি`র কক্ষপথ হচ্ছে বেশ বড়। এখন পর্যন্ত জানা তথ্য মতে একাধিক সূর্যের কোনো গ্রহের ক্ষেত্রে এর কক্ষপথটি হচ্ছে সবচেয়ে দীর্ঘ।
সাইন্স সাময়িকীতে বৃহস্পতিবার এই অদ্ভূত গ্রহটির আবিষ্কারের খবর দিয়েছেন লেখক কেভিন ওয়াগনার। গ্রহটি আবিষ্কারের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আগে কেউ দেখেনি- প্রকৃতির এমন এক অভাবিত সৌন্দর্য অবলোকন করতে পেরে আমি পুলকিত।
এইচডি১৩১৩৯৯এবি নামের `ত্রিসূর্যা গ্রহটি`র এক বছর হচ্ছে পৃথিবীর হিসেবে অর্ধসহস্র বছরেরও বেশি। এর অবস্থান আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ের দক্ষিণাংশের সেন্টাওরাস নক্ষত্রপুঞ্জে যেখানে রয়েছে আলফা সেন্টরি এবং প্রক্সিমা সেন্টরির মতো পরিচিত নক্ষত্র। বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে গ্রহটিতে একের পর এক তিনটি সূর্যের উদয় হয়।এছাড়া বাদবাকী সময়ে পাওয়া যায় বিরামহীন সূর্যালোক।
নিজের আবিষ্কার নিয়ে উচ্ছ্বসিত ইউভার্সিটি অব অ্যারিজোনার পিএইচডি গবেষক ওয়াগনার বলেন, আমরা যদি আবিস্কারের এমন ধারাবাহিকতা বজায় রাখি তবে আশা করা যায়, প্রকৃতি তার ঝুলিতে রাখা এমন আরও কিছু চমক নিয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
একটি নয়, দুটি নয়, তিন তিনটি সূর্যের অধীন এমন গ্রহ আবিষ্কারের ঘটনা খুব দুর্লভ হলেও ওয়াগনারের আবিষ্কৃত গ্রহটি জানামতে এ ধরনের পঞ্চম গ্রহ। তিন সূর্য কেন্দ্রিক সৌরজগতের ওই গ্যাসীয় গ্রহটির কক্ষপথ প্লুটোর কক্ষপথের দ্বিগুণ। অপেক্ষাকৃত বড় সূর্যটিকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর হিসেবে ওই গ্রহটির লাগে ৫৫০ বছর প্রায়।
সৌরজগতটির অপেক্ষাকৃত ছোট অপর দুই সূর্য যমজের মতো পরস্পরকে প্রদক্ষিণ করতে করতে তার নাক্ষত্রিক বড়ভাইয়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজ নিজ অক্ষে আবর্তন করে।
গ্রহটির বছরের এক চতুর্থাংশ সময় জুড়ে (পৃথিবীর হিসেবে ১০০ থেকে ১৪০ বছর) সেখানে একটানা সূর্যালোক (বা সূর্যসমূহের আলোক) থাকে। বড় একটা সময় জুড়ে একসঙ্গে তিনটি সূর্যকে আকাশে দেখা যায় এবং দেখা যায় তাদের ধারাবাহিক উদয় এবং অস্ত যাওয়া।
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ও গ্রহটির সহআবিষ্কর্তা ড্যানিয়েল অ্যাপাই কৌতুকছলে বলেন, এটা এমন একটি সৌর ব্যবস্থা যাকে ভিত্তি করে কেউ কোনো পঞ্জিকা বানাতে চাইবে না।
দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতে স্থাপিত ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির অতি বৃহৎ ও শক্তিশালী এক টেলিস্কোপের চোখে আবিষ্কৃত হয়েছে প্লানেট এইচডি১৩১৩৯৯এবি। তবে আবিস্কর্তারা চাইছেন এর একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখতে।
নয়া জ্যোতিষ্ক আবিষ্কারের পর এদের নাম রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নানান নিয়ম-নীতির গিঁট রয়েছে। অনেকেই এসব মহাজাগতিক আবিষ্কারের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রচলিত `বর্ণমালা আর সংখ্যার জগাখিচুরি` টাইপের নামের পরিবর্তে মানুষের বা অন্য কোনো বস্তর নামানুসরণের পক্ষে সোচ্চার হচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নও বিষয়টি নিয়ে ভাবিত বলে জানা গেছে।
তবে গ্রহটির বৈশিষ্ট্য আর নামকরণ নিয়ে ভাবনা-চিন্তার আড়ালে আরও একটি তথ্য জেনে রাখা ভাল- এ ধরনের একাধিক নক্ষত্রক্রেন্দ্রিক গ্রহের পরিণতি অনেক ক্ষেত্রেই নেতিবাচকও হতে পারে। তিন নক্ষত্রের মহাকর্ষীয় ভর-বলের লড়াইয়ে এ ধরনের গ্রহ ধ্বংস বা কক্ষচ্যুত হয়ে অজানার পথে হারিয়ে যাওয়াটা বিচিত্র না।
নিউজওয়ান২৪.কম/একে