সুন্নতে খতনা বা মুসলমানির উপকারিতা
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ১০:৩০ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি
আমাদের মুসলিম সমাজে খতনা শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এটি একটি মহান সুন্নত। যুগে যুগে বড় বড় নবী-রাসূলও এ সুন্নত পালন করেছেন।
সর্বপ্রথম এ সুন্নত পালন করেছেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত সাইদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত ইব্রাহিম (আ.) হলেন খতনার সুন্নত পালনকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৬৪৬৭)
পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي قَالَ لاَ يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
‘স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম (আ.)-কে তার রব কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করেন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাব। সে বলল, আমার বংশধরদের থেকেও? তিনি বলেন, জালিমরা আমার ওয়াদাপ্রাপ্ত হয় না। ’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ইমাম আবদুর রাজ্জাক (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পরীক্ষাগুলোর মধ্য থেকে একটি শারীরিক পরীক্ষা হলো খতনা করা। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৪০৬)
খতনা নবীদের সুন্নত:
হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পর সব নবী-রাসূল খতনা করিয়েছিলেন।
অনেক হাদিস শরিফে এ সুন্নত পালনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতরাত, অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব পাঁচটি—খতনা করা, নাভির নিম্নদেশে ক্ষুর ব্যবহার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৯)
খতনার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:
খতনার দ্বারা শরীর অধিক পাকপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে। খতনা করালে শিশুদের মূত্রপথের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়। এর ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, জ্বর, খাবারে অনীহা এবং স্বাস্থ্য ভালো না হওয়া ইত্যাদি রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে খতনা করালে লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে। পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। লিঙ্গের মাথায় প্রদাহ, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া করলেও খতনা করালে তা সেরে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষের খতনা এইচআইভি বা এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে, এটি আংশিক সুরক্ষা দেয়। আফ্রিকার যেসব দেশে খতনার হার বেশি, সেসব দেশে এইডসের হার তুলনামূলক কম।
খতনার বৈজ্ঞানিক সুফল:
পুরুষের খতনাকে আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন। খতনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজাতীয় (ব্যাকটেরিয়া) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খতনার প্রধান সুবিধা হলো, এর ফলে লিঙ্গের অগ্র ত্বকে যে তরল জমে নোংরা অবস্থার সৃষ্টি করে, তা থেকে রেহাই পেতে পারে। দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (সা.) খতনার কথা বলেছেন, ব্যাপক গবেষণা শেষে আজকের আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করেছে, খতনার ব্যাপক উপকারিতা আছে।
খতনার সুফল নিয়ে অস্ট্রেলীয় মেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিস চমৎকার গবেষণা করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের সারকামসিশন (খতনা) করা হয়নি, তাদের অপেক্ষাকৃত কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন চার থেকে ১০ গুণ বেশি হয়। তিনি মনে করেন, সারকামসিশনের (খতনা) মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালির ইনফেকশন হ্রাস করা যায়।
ওয়াশিংটনের সৈনিক মেডিক্যাল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. বিজবেল বলেন, ‘আমি প্রথমে খতনার বিরোধী ছিলাম, পরে দীর্ঘ গবেষণার ফলে প্রমাণিত হলো যে মূত্রথলি ও মূত্রনালিবিষয়ক অনেক জটিল রোগের সমাধান হলো খতনা। ’
ডা. রুবসন তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, ১৯৩০ থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষ আমেরিকায় মূত্রনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে কেবল ১০ জন খতনাকৃত রয়েছে, বাকি সব খতনাবিহীন ব্যক্তি।
এ ব্যাপারে ইউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূত্রনালির প্রদাহ শিশুদের বেশি হয় এবং এতে কিডনির সমস্যা, জ্বর ও রক্তের ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি খতনা মরণব্যাধি এইডস ও যৌনরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। সাধারণ অর্থে লিঙ্গের ক্যান্সার হলো অপরিচ্ছন্নতার ব্যাধি। পুরুষাঙ্গের শীর্ষে ঘা হয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে একসময় ক্যান্সারে রূপ নেয়, এমন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, খতনা করানো পুরুষের চেয়ে খতনা না করানো পুরুষ এ ধরনের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
যৌনবিজ্ঞানীরা বহুকাল আগে থেকেই বলে আসছেন যে পুরুষের খতনা করালে স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। এতে যৌন মিলনে অধিক আনন্দ উপভোগ করে নারী-পুরুষ উভয়ই। বর্তমানে ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ ইউরোপেও প্রচুর পরিমাণে খতনা করানো হয়। সেখানে গুরুত্বের সঙ্গে এটা দেখা হয়।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বিশ্ববাসীকে সুন্নতে খতনার মতোন এমন মহৎ একটি সুন্নতকে পালন করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
নিউজওয়ান২৪/আারএডব্লিউ